E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

বগুড়া যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে ভাগ্য বদল করেছে অর্ধলাখ যুবক

২০১৫ মে ১৬ ১৪:৪৪:৩৩
বগুড়া যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে ভাগ্য বদল করেছে অর্ধলাখ যুবক

আব্দুস সালাম বাবু, বগুড়া: কৃষি কাজ করে তার দিন চলতো কোনমতে। কাজ থাকলে তার ভাত জুটতো। কাজ না থাকলে অন্য কোনস্থানে তাকে মজুর দিতে হতো। ২০০৪ সালে বগুড়া যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর থেকে ইলেকট্রিক্যাল এন্ড হাউজওয়্যারিং এর প্রশিক্ষণ গ্রহণ করার পর তার দিন পাল্টে গেছে।

অর্থনৈতিক গতি বৃদ্ধি পেয়েছে তার সংসারে। বগুড়া শহরের নাটাইপাড়া এলাকার মোঃ শাহীন এর মতো কয়েক হাজার বেকার যুবকও প্রশিক্ষণ শেষে আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টি করে এখন আলোকিত পথের সন্ধান পেয়েছে। জানা যায়, বেকার যুবকদের জন্য আশার আলো হয়ে দেখা দিয়েছে বগুড়া যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর। যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর থেকে বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষন নিয়ে বেকারত্ব ঘুচিয়ে ভাগ্য বদল করেছে অর্ধলাখ যুবক। নিজেদের যেমন ভাগ্যবদল করেছে ঠিক তেমনি দেশের অর্থনীতিকে এগিয়ে নিতে কাজ করে যাচ্ছে আলোর সন্ধান পাওয়া জেলার যুবকেরা। বগুড়া যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর জেলা শহরের তিনমাথায় প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৯০ সালে। প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে ৭টি বিষয়ে নিয়মিত প্রশিক্ষণ দিয়ে আসছে। কম্পিউটার, মর্ডাণ অফিস ম্যানেজমেন্ট এন্ড কম্পিউটার এ্যাপ্লিকেশন, পোষাক তৈরী, মৎস্য চাষ, ইলেকট্রিক্যাল এন্ড হাউজওয়্যারিং, ইলেকট্রনিক্স, রেফ্রিজারেশন এবং এয়ারকন্ডিশনিং, বিউটিশিয়ান, ক্যাটারিং কোর্স। এছাড়া উপজেলা পর্যায়ে আছে পোল্ট্রি, কৃষি, ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প, গবাদি পশু পালন প্রশিক্ষন। প্রতি বছর জেলা ও উপজেলা থেকে ৬ হাজার বেকার যুবককে প্রশিক্ষিত করে তোলা হচ্ছে। বগুড়া জেলায় এ পর্যন্ত প্রায় ৮৫ হাজার বেকার যুবককে প্রশিক্ষিত করা হয়েছে। প্রশিক্ষিত যুবকদের মাঝে প্রায় ৫০ হাজার যুবক তাদের আত্মকর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করেছে। নিজেদের কর্মসংস্থান থেকে সংসার চালিয়ে আলোকিত দিনের খোঁজ পেয়েছে। ২০১৩-১৪ অর্থ বছরে জেলা থেকে ক্যাটারিং কোর্স শেষ করা মাত্রই দেশে চাকুরী পেয়েছেন ৪৫ জন এবং বিদেশে পেয়েছেন ১৫ জন। বগুড়া অঞ্চলের বেকার যুবকদের আত্মকর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করে দিতে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর থেকে নেয়া হয়েছে বিভিন্ন উদ্যোগ। এরমধ্যে রয়েছে যুগোপযোগি ফ্যাশান ডিজাইন, বাসের সুপারভাইজার, বিউটিফিকেশন, এন্টারপ্রিয়নারশীপ, স্টার হোটেলে কাজের প্রশিক্ষণ, ক্ষুদ্র কুটির শিল্পে পল্লী অঞ্চলের যুবকদের ভ্রাম্যমান প্রশিক্ষনও প্রদান করছে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর। বগুড়া যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর থেকে প্রশিক্ষণ পাওয়া বগুড়া সদর উপজেলার নাটাইপাড়া এলাকার মোঃ শাহীন জানান, ইলেকট্রিক্যাল এন্ড হাউজওয়্যারিং, এর প্রশিক্ষণ গ্রহণ করার আগে ক্ষেত খামারে কাজ করতো। প্রশিক্ষণ শেষে টুকটাক কাজ করছেন। সে কাজ দিয়ে তার সংসারে খরচ চলছে। বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলার চোপিনগরের মজনু মিয়া জানান, তিনি বাবা-মা’র ৩ সন্তানের মধ্যে বড়। অভাব অনটনের কারণে ১০ম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়ার পর সংসারের হাল ধরতে হয় তাকে। বাবা আব্দুল মজিদ একজন গ্রাম্য সার্ভেয়ার। মা মোর্শেদা বেগম গৃহিনী। অভাবের সংসারে বাবাকে সহযোগিতা করতে ২০০৭ সালে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর বগুড়ার আঞ্চলিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র থেকে মাছ চাষের উপর ১ মাস মেয়াদী প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। প্রশিক্ষণ শেষে ১ বিঘা আয়তনের নিজের একটি পুকুরে মাছ চাষ করেন। সেখান থেকে আসা লাভের টাকা দিয়ে পত্তন নেন ছোট বড় আরও ৭টি পুকুর। প্রশিক্ষণের শিক্ষা কাজে লাগিয়ে বাড়তে থাকে মাছ চাষের অভিজ্ঞতা ও দক্ষতা। ২০১০ সালে বগুড়া মৎস্য অধিদপ্তরের অধীনে মাছের প্রজনন ও রেণু পোনা উৎপাদন বিষয়ে প্রশিক্ষণ নিয়ে নিজেই রেণুপোনা উৎপাদন শুরু করেছেন। বগুড়া যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের উপ পরিচালক বিরাজ চন্দ্র সরকার জানান, প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের অধীনে এ পর্যন্ত প্রায় ৮৫ হাজার যুবককে বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষন প্রদান করা হয়েছে। তাদের মধ্যে এ পর্যন্ত প্রায় ৪৯ হাজার তাদের কর্মসংস্থান খুঁজে পেয়েছে। বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষণ শেষে আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য প্রেরনা যোগাতে এক লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ প্রদান করা হয়। আমাদের চেষ্টা চলছে বেকার যুবকদের কর্মসংস্থানের মধ্যে দিয়ে অর্থনৈতিক গতি বৃদ্ধি করা


(এএসবি/এসসি/মে১৬,২০১৫)

পাঠকের মতামত:

১৯ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test