E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

তালপাতায় বর্ণ পরিচয়

২০১৫ মে ২৬ ১৭:৩৫:৫৯
তালপাতায় বর্ণ পরিচয়

মোজাম্মেল মুন্না, গোপালগঞ্জ থেকে : গোপালগঞ্জের গ্রামে এখনো রয়েছে তাল পাতার পাঠশালা। হাতে-মুখে কালি মেখে ছোট-ছোট  শিশুদের তাল পাতার উপর প্রথম বর্ণমালা শেখা। পুরানো আমলের সেই পাঠশালার কথা মনে করিয়ে দেয়। এখানো  টুঙ্গিপাড়া ও কোটালীপাড়ার বিভিন্ন গ্রামে চালু রয়েছে এমন পাঠশালা। আধুনিক শিক্ষা ব্যবস্থার পাশাপাশি পাঠশালা ব্যবস্থা চালু রয়েছে এখানে।

টুঙ্গিপাড়ার প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চল ডুমুরিয়া। এখানকার একটি দূর্গা মন্দিরেই পাটি বা মাদুর বিছিয়ে চলছে পাঠদান। সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় থাকলেও গ্রামাঞ্চলের মানুষ এখনো তাদের সন্তানদেরকে প্রথমে পাঠশালায় পাঠান। সেখান থেকে বর্ণমালার হাতে খড়ি হয়। একটা পর্যায়ে গেলে তাদেরকে পাঠানো হয় পার্শ্ববর্তী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তির উপযুক্ত করে তৈরি করা হয় এসব পাঠশালা থেকে। সরকারি কোন সাহায্য-সহযোগিতা ছাড়াই সম্পূর্ণ স্থানীয় সাহায্য-সহযোগিতায় চলে এসব পাঠশালা। ধান কাটা মৌসুমে শিক্ষককে গ্রাম থেকে ধান তুলে বেতন হিসাবে দেয়া হয়। সারা বছরে প্রতি শিক্ষার্থীর জন্য শিক্ষককে দেয়া হয় এক মন করে ধান।

তাল পাতায় শিক্ষকের এঁকে দেয়া বর্ণমালার উপর দিয়ে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে বর্ণমালা লেখা শেখায় হাতের লেখা ভালো হয়। এমনটি অভিমত অভিভাবক ডুমুরিয়া গ্রামের রাই কিশোরী মন্ডল, সম্রাট মন্ডল, অর্চনা বিশ্বাসদের। তারা জানালেন, এসব পাঠশালায় বাল্যশিক্ষা ও শেখানো হয়। যা শিশুদের বেড়ে উঠতে এবং চরিত্র গঠনে প্রাথমিক ধাপ হিসাবে কাজ করে।


ডুমুরিয়া গ্রামের বাসিন্দা প্রদীপ গাইন, উজ্জল মন্ডল এ পাঠশালা থেকে হাতে খড়ি নিয়ে এখন গোপালগঞ্জ বঙ্গবন্ধু বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে অনার্স পড়ছেন। তারা জানালেন, পাঠশালার শিক্ষা তাদের অনেক কাজে লেগেছে। বিশেষ করে তাদের হাতের লেখা অনেক সুন্দর হয়েছে।

টুঙ্গিপাড়া উপজেলার ডুমুরিয়া ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য কালিপদ কির্তনীয়া জানান, নিন্মাঞ্চলের এ গ্রামের সাধারন মানুষের শিক্ষার উন্নয়নের জন্য দেশ স্বাধীনের পর এলাকার শিক্ষানুরাগী রথীন্দ্র নাথ মালো এ পাঠশালাটি গড়ে তোলেন। এলাকার বিভিন্ন গাছতলা, কারো বাড়ির আঙ্গিনা ঘুরে ঘুরে এখন পাঠশালাটির স্থান হয়েছে দূর্গা মন্দিরে। এখানে কাঠি গ্রাম, কানাই নগর, ভৈরব নগর, ছোট ডুমুরিয়া ও বড় ডুমুরিয়া প্রভৃতি গ্রামের শিক্ষার্থীরা শিক্ষা নিতে আসেন।

এই পাঠশালার একমাত্র শিক্ষক মীরা কীর্তনিয়া জানালেন, তার পাঠশালায় এখন শতাধিক শিক্ষার্থী রয়েছে। তিনি তাল পাতায় প্রথমে বর্ণমালা খোদাই করে দেন শিক্ষার্থীদেরকে। তারা সেই খোদাই করা পাতার উপর নিজেদের বানানো কালি দিয়ে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে বর্ণমালা শিখে যায়। এ জন্য তাদের হাতের লেখাও ভালো হয় বলে জানালেন তিনি। তিনি বললেন, যারা শিক্ষার প্রথম দিকে কাগজ আর শিষ কলম দিয়ে লেখা শেখে তাদের হাতের লেখা সুন্দর হয় না।

পাঠশালাটি যাতে তার নিজস্ব একটা ঠিকানা পায়, সরকারি সহযোগিতা পায়-তার দাবি জানিয়েছেন এলাকার শিক্ষানুরাগীরা।

(এমএইচএম/এএস/মে ২৬, ২০১৫)

পাঠকের মতামত:

২০ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test