E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

বাড়ছে শিশুশ্রম, ঝুঁকিতে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম

২০১৫ জুন ১১ ২২:০৭:২১
বাড়ছে শিশুশ্রম, ঝুঁকিতে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম

শোভন সাহা : জীবিকার উদ্দেশ্যে প্রতিনিয়তই ঢাকামুখী হচ্ছে দেশের বিভিন্ন স্থানের কর্মজীবী মানুষ। ধানমন্ডি লেকসহ সমস্ত ঢাকায় প্রতিনিয়ত বাড়ছে শিশুদের ভিক্ষাবৃত্তি। শিশুশ্রম ছাড়াও প্রতিনিয়ত বাড়ছে পথশিশুর সংখ্যা।

ঢাকার ধানমন্ডি লেকসহ বিভিন্ন স্কুল-কলেজের সামনে তাকালেই দেখা যায় বিভিন্ন বয়সী বাদাম বিক্রেতার। জীবনের তাগিদে অর্থ উপার্জনের উদ্দেশ্যে নয়ন, জামিন, শাহিন, খোকনসহ আরো অনেকেই ঢাকা শহরের বিভিন্ন স্থানে বাদাম বিক্রি করে। কিন্তু তাদের এই বয়সে থাকার কথা ছিল স্কুল অথবা কলেজে। ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে আজ তারা বাদাম বিক্রিকে নিজেদের পেশা হিসাবে বেছে নিয়েছে।

নয়নের বয়স মাত্র ১৫। সিলেটে নয়নের আবাসস্থল এবং ৫ ভাই-বোনসহ সংসারে মোট সদস্য সংখ্যা ৭ জন। কিন্তু নয়নের পরিবার তার এবং তার বড় ভাইয়ের আয়ের উপর নির্ভর করে থাকে।

নয়ন বলেন, বাবা গাড়ি চালাতেন। হঠাৎ একটা দুর্ঘটনায় পুরো পরিবার আজ ধ্বংসের মুখে। স্কুলে যখন কেউ পড়তে যায় তখন খুব খারাপ লাগে। তাছাড়া প্রতি মাসে আমার আয় প্রায় ৮০০০-৮৫০০ টাকা।

মোঃ জামিন হোসেন সিরাজগঞ্জ শহর থেকে ২ বেলা ভাত রুটির খোঁজে চলে আসে ঢাকায়। প্রথমে একটি হোটলে কাজ করত, কিন্তু বর্তমানে সে বাদাম বিক্রেতা। মা মারা যাবার পর বাবা দ্বিতীয় বিয়ে করায় বিভিন্ন পারিবারিক সমস্যার কারণে চলে আসে ব্যস্তময় শহর ঢাকায়।

বাদাম বিক্রেতা জামিল জানায়, রায়েরবাজার বস্তিতে একটি মাত্র রুম ৩ জনে ভাড়া করে থাকে। গড়ে প্রতিদিন ২০০- ২৫০ টাকা লাভ হয়। কিন্তু বর্তমান বাজার অবস্থা যা তাতে এই আয়ে জীবিকা নির্বাহ করা সত্যি খুবই কষ্টকর। তাছাড়া অনেক সময় স্থানীয় বা কিছু প্রভাবশালী মহলের লোকেরা বিভিন্নভাবে চাঁদা আদায় করে। আমার আয় যা তা থেকে যদি এভাবে চলে যায় তা হলে তো আমার ঢাকাতে থাকা বড় দায়।

শাহীন হোসেন ভৈরব জেলার প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে কাজের সন্ধানে তার বন্ধুর সাথে ঢাকায় চলে আসে ২০০৯ সালে। তখন তার বয়স ছিল ১১ বছর। সময়ের সাথে সাথে বেড়েছে ব্যবসা, বেড়েছে তার বয়সও, হয়েছে অনেক ধরনের অভিজ্ঞতা। কিন্তু তার লেখাপড়ার ইচ্ছা এখনো আছে।

মধু বাজার বস্তিতে পুরো পরিবারসহ প্রতিনিয়ত জীবন-জীবিকার সাথে যুদ্ধ করছে নূর আলম। এই বয়সে তার থাকার কথা ছিল কলেজে। কিন্তু পারিবারিক আর্থিক অবস্থার কথা বুঝে এই পেশাকে মনের ইচ্ছার বিরুদ্ধে মেনে নিতে হয়। তাছাড়া সকাল খেকে রাত পর্যন্ত বাদাম বিক্রির পরে যে সে লেখাপড়া চালিয়ে নিয়ে যাবে সেটা প্রায় অসম্ভব।

বাংলাদেশের মৌলিক অধিকার ৫টি। এর মধ্যে অন্ন ও শিক্ষা অন্যতম। এই পথশিশু ও কর্মজীবী শিশুদের শিক্ষা ব্যবস্থার সরকারী উদ্দ্যোগের পাশাপাশি দরকার বেসরকারি উদ্দ্যোগ। কিন্তু বর্তমানে ঢাকার বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের মাধ্যমে গঠিত খোলা আকাশের নিচে বসে হাতে কলমে পাঠ দান করার একটি উদ্দ্যোগ হাতে নেয়া হয়েছে সমাজকে পরিবর্তন করার জন্য। তাদের স্লোগান, 'শিক্ষাকে আমরা ছড়িয়ে দেব সমগ্র দেশে।' স্বল্প পরিসরে শুরু হওয়া এই শিক্ষা ব্যবস্থাকে এখন সমাজের বিভিন্ন স্থানের মানুষেরা স্বাগত জানাচ্ছে।

এ বিষয়ে ড. সলিমুল্লাহ খান বলেন, এভাবে তরুণদের এগিয়ে আসা সত্যিই আমাদের সামাজের জন্য একটা ইতিবাচক দিক। শিক্ষার যে আলো আমাদের এই তরুণরা সবার মাঝে ছড়িয়ে দিচ্ছে তা নিঃসন্দেহে একটি মহৎ কাজ আর এই ধারা চলতে থাকলে তা সুফল বয়ে আনবে।

প্রতি বছর ইন্টারন্যাশনাল লেবার অরগাইনেজশন এর মতে বাংলাদেশে শিশু শ্রমের পরিমাণ প্রতিনিয়ত বাড়ছে। প্রতিনিয়ত শিশুরা বা অপ্রাপ্ত বয়স্ক শিশুদের দিয়ে বিভিন্ন ধরনের ঝুঁকির কাজও কারানো হচ্ছে। বিভিন্ন মিল কারখানা, গ্যারেজসহ গার্মেন্টস এ অপ্রাপ্ত বয়স্করা কাজ করছে। তাছাড়া বিভিন্নভাবে শিশু শ্রমিক অত্যাচারিত হচ্ছে।

তাছাড়া শিশুশ্রম একটি দেশের উন্নতির জন্য বিরাট বাধা। শিশুশ্রম আমাদের দেশের অর্থনীতিতে শুধু নয়, এটি এখন আমাদের দেশের সরকারেরও মাথা ব্যাথার অন্যতম কারণ। সমস্ত বিশ্বের সরকারগুলোর শিশুশ্রম বর্জন, দারিদ্র্য দূরীকরণ ও সার্বজনীন প্রাথমিক শিক্ষার ব্যবস্থা আন্তর্জাতিক মানবাধিকারের আইনে আওতাভুক্ত আছে। তারপরও প্রতিনিয়ত আমাদের দেশে বাড়ছে শিশুশ্রম। কিন্তু এই শিশুশ্রম থেকে পরিত্রানের জন্য প্রয়োজন সরকারের সাথে সর্বসাধারণের সহযোগিতার হাত। আমাদের দেশের অর্থনীতিও অনেকাংশে শিশুশ্রমের জন্য দায়ী।

(এসএস/পিএস/জুন ১১, ২০১৫)

পাঠকের মতামত:

২৫ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test