E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

লোকবলের অভাবে পশ্চিমাঞ্চল রেলের ৯২ স্টেশন বন্ধ !

২০১৫ জুন ১৫ ১৫:২৩:১১
লোকবলের অভাবে পশ্চিমাঞ্চল রেলের ৯২ স্টেশন বন্ধ !

ঈশ্বরদী (পাবনা) প্রতিনিধি : পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের অত্যাবশ্যকীয় অপারেটিং কর্মচারিসহ বিভিন্ন বিভাগে লোকবলের অভাবে ৯২টি ষ্টেশন বন্ধ হয়ে গেছে ।

আরও ৫৮টি ষ্টেশন বন্ধের অপেক্ষায় রয়েছে বলে পাকশী বিভাগীয় কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে। ঝুঁকির মধ্য দিয়ে চলাচল করছে পাকশী ও লালমনিরহাট বিভাগের যাত্রীবাহী ও মালবাহী ট্রেনগুলো। জানা যায়, পশ্চিমাঞ্চল রেলের মোট ২’শ ৩১ টি স্টেশনের মধ্যে পাকশী বিভাগে ৫৩ টি ও লালমনিরহাট বিভাগে ৩৯ টি সহ ৯২ টি স্টেশন বন্ধ হয়ে গেছে। এতে ট্রেন অপারেটিং-এ নানা সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। জরুরি ভিত্তিতে স্টেশন মাস্টার, পয়েন্টসম্যান ও গেট কিপারসহ বিভিন্ন বিভাগে প্রয়োজনীয় সংখ্যক লোক নিয়োগ অতীব প্রয়োজন। ২০১৫ সালের মধ্যে পাকশী ও লালমনিরহাট বিভাগে নতুন লোক নিয়োগ করতে না পারলে ট্রেন চলাচলে মারাত্বক অচলাবস্থার সৃষ্টি হবে বলে আশংকা করা হচ্ছে। পশ্চিমাঞ্চল রেলের পাকশী বিভাগের একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।
সূত্র জানান, স্টেশন মাস্টার, পয়েন্টসম্যান ও গেট কিপারসহ বিভিন্ন বিভাগের ৪০ হাজার জনবলের ভিত্তিতে পশ্চিমাঞ্চল রেলের অত্যাবশ্যকীয় কর্মচারি নিয়ে অপারেটিং কার্যক্রম চালু করা হয়। কিন্তু সময়ের পরিবর্তনের সাথে সাথে নানামুখী সিন্ধান্তের কারণে এবং কর্মচারিদের অবসর জনিত কারণে ক্রমান্বয়ে জনবল কমতে থাকে। দিন যত অতিক্রম করছে অপারেটিংসহ বিভিন্ন বিভাগে জটিল সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। ফলে কর্তৃপক্ষকে ট্রেন অপারেটিং-এ মারাত্নক বাধার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। শুধু মাত্র অত্যাবশ্যকীয় অপারেটিং কর্মচারির স্বল্পতার কারণে স্টেশন বন্ধসহ ট্রেনের সময়ানুবর্তিতার উপর বিরূপ প্রভাব অব্যাহত রয়েছে। ৯২ টি স্টেশন বন্ধ থাকার ফলে ব্লক সেকশনের দৈর্ঘ্য বৃদ্ধি, অত্যাবশ্যকীয় ব্লক ওয়ার্কিং ব্যবস্থা অকার্যকর, রানিং টাইম বৃদ্ধি এবং সেকশনাল ক্যাপাসিটি কমে যাওযায় সুষ্ঠ ও নিরাপদ ট্রেন পরিচালনার ক্ষেত্রে অন্তরায় ও ঝুকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। মোট ২’শ ৩১ টি স্টেশনের মধ্যে স্টেশন মাস্টার ও পয়েন্টসম্যানের অভাবে সম্পূর্ণ বন্ধ আছে ৫৭টি ষ্টেশন এবং ১২ ঘন্টা বন্ধ আছে ৩৫টি স্টেশন । চলতি বছরই পাকশী ও লালমনিরহাট বিভাগে স্থায়ীভাবে কর্মরত ১৯ জন স্টেশন মাস্টার অবসর গ্রহন করবেন। চুক্তিভিত্তিক কর্মরত ৪৫ জন স্টেশন মাস্টারের মেয়াদ চলতি বছরের মার্চে এবং ২৪ জনের মেয়াদ শেষ হয়েছে। আরও ২৮ জন স্টেশন মাস্টারের মেয়াদ অক্টোবরে মাসে শেষ হবে। ফলে বন্ধ স্টেশনের সংখ্যা আরও বৃদ্ধি পাবে। এতে কমপক্ষে আরও ৫৮টি স্টেশনের অপারেটিং কার্যক্রম বন্ধ হয়ে ট্রেন অপারেশন কার্যক্রম মারাত্নকভাবে বাধাগ্রস্থ হবে।
জানা যায়, অবসরে যাওয়া কর্মচারীদের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেয়ায় রেলের বেতন খাতে বিপুল পরিমাণ টাকা গচ্চা যাচ্ছে। অথচ পরিকল্পনা করে নিয়মিত নতুন কর্মচারী নিয়োগ করলে এই ব্যয়ের পরিমাণ অনেক কম হবে । সূত্র জানান, বয়সের ভারে ন্যুজ অবসরে যাওয়া কর্মচারীদের দিয়ে কোন রকমে জোড়াতালি দিয়ে রেল চলাচল করছে।
পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের পাকশী ও লালমনিরহাট বিভাগে মঞ্জুরীকৃত পয়েন্টসম্যানের সংখ্যা ৬’শ ৯৫ জন। এর মধ্যে কর্মরত আছে ৫’শ ৯ জন। ঘাটতি রয়েছে ১’শ ৬৯ জন। চলতি বছরেই অবসরজনিত কারনে আরও ১৭ জন পয়েন্টসম্যানের অতিরিক্ত ঘাটতি হবে। ফলে স্টেশন বন্ধসহ অত্যাবশ্যকীয় ট্রেনের সান্টিং, ক্রসিং এবং প্রিসিডেন্স কার্যক্রমও সমস্যায় পড়বে ।
পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের পাকশী ও লালমনিরহাট বিভাগে ট্রাফিক লেবেল ক্রসিং গেটের জন্য মঞ্জুরীকৃত গেট কিপারের সংখ্যা ১’শ ৭৩ জন। এর মধ্যে কর্মরত আছে ১৭ জন। ঘাটতি রয়েছে ১’শ ৫৬ জন। এর মধ্যে শুধু পাকশীতেই ঘাটতি রয়েছে ১’শ ৫ জন। সময়ের পরিবর্তন ও দেশের জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে রেলরুটকেও সম্প্রসারণ করা হয়েছে। ফলে ট্রাফিক লেবেল ক্রসিং গেটের সংখ্যাও বৃদ্ধি পেয়েছে। একই সাথে লেবেল ক্রসিং গেটের সড়কে যান চলাচলও বৃদ্ধি পেয়েছে। কিন্তু গেট কিপারের সংখ্যা বৃদ্ধি পায়নি। ফলে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহন করা সম্ভব না হওযায় দুর্ঘটনার আশংকা প্রতিদিনই বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ কারণে জরুরি ও জনগুরুত্বপূর্ন ট্র্র্রেন পরিচালনায় নিরপত্তা বিঘ্নিত হচ্ছে। এছাড়া অত্যাবশ্যকীয় কর্মচারিদের সিক ও ছুটির স্থলে রিলিফ দেওয়া সম্ভব না হওযায় স্টেশনের কাজ এক শিফট করে বন্ধ রাখতে হচ্ছে।
পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের অপারেটিং বিভাগে ৪০ হাজার জনবলের ভিত্তিতে সদর দপ্তর, পাকশী ও লালমনিরহাট বিভাগের ২য়, ৩য় ও ৪র্থ শ্রেনীর বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে মঞ্জুরিকৃত পদের স্থলে নানা কারনে অসংখ্য শুন্য পদের সৃষ্টি হয়েছে। এএও/অপারেটিং, সিটিএনএল, এসএস, ডিটিএনএল, এসএম গ্রেড-১, জিটিআই/টি, গার্ডগ্রেড-১/এ, প্রধান সহকারি, এসএমগ্রেড-২, টিএনএল, গার্ড গ্রেড-১/বি, এসএম গ্রেড-৩, উচ্চমান সহকারি, গার্ড গ্রেড-২, এসএম গ্রেড-৪ ও টিএনসি গ্রেড-১সহ মোট ৪৫টি পদে পশ্চিমাঞ্চল রেলের পাকশী বিভাগে ৫’শ ৫৮ টি ও লালমনিরহাট বিভাগে ৩’শ ১৭ টি পদ সহ মোট ৮’শ ৮৪টি পদ শুন্য রয়েছে।
এই অবস্থায় পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের অপারেটিং বিভাগের ধ্বস ও স্থবিরতা পরিহারের জন্য এবং ট্রেনের সময়ানুবর্তিতা, নিরাপদ ও নিবিঘ্নিভাবে ট্রেন চলাচল সচল রাখার স্বার্থে সকল প্রকার শুন্য পদে জরুরি ভিত্তিতে লোক নিয়োগ করা প্রয়োজন।
(এসকে/পিবি/জুন ১৫,২০১৫)

পাঠকের মতামত:

১৯ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test