E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

কথা বলে ভাতশালিক

২০১৫ জুন ২৯ ১৪:২৭:৩১
কথা বলে ভাতশালিক

নড়াইল প্রতিনিধি : বাড়ির ছোট শিশুদের ও খুব কাছের বন্ধু। সকলে আদর করে ওর নাম দিয়েছে ‘মিঠু’। জাতে শালিক হলেও ছোট মানুষের মত ‘মিঠু' মিষ্টি করে কথা বলতে পারে। নানা স্বরভঙ্গীতে প্রতিনিয়ত শিশুদের আকৃষ্ট করতে পারে। বলতে পারে অনেক কিছু, আমার নাম মিঠু/ আম্মু.... ভাত দাও/ গোসল করবো/আরো কত কি।

গত ৭ মাস আগে বাঁশবনের ভিতর পড়ে থাকতে দেখে মিঠুকে পাড়ার দুরন্ত ছেলে রাফসান বাড়িতে নিয়ে আসে। সদ্য ডিম থেকে ফুটে বের হয়ে আসা মিঠু উড়তে পারেনা। কেবল বড় বড় হা করে চি..চি শব্দ করতে পারে। ওর মা ওকে হারিয়ে ফেলেছে। তখন থেকেই ওর লালন-পালনের দায়িত্ব নেয় রাফসান। ও ক্লাস ফোরে পড়ে। বয়স ৯ বছর। রাফসানের বাড়ি নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার চরঘোনাপাড়া গ্রামে।

মিঠুকে দেখতে এখন অনেক সুন্দর। একা একা খেতে পারে, গোসল করতে পারে কখনও আবার মনের খেয়ালে শিস দেয়। নিজের ইচ্ছে মত উড়ে উড়ে গাছে -গাছে , পাড়ায় পাড়ায় ঘুরে ফিরে আবার বাড়ি ফিরে আসে। সে বাড়ির একজন ক্ষুদে সদস্য।

আমাদের অতি চেনা-জানা উপকারী প্রধান কয়েকটি পাখির মধ্যে অন্যতম প্রধান হলো শালিক। ছোট আকৃতির ধূসর রঙের এই পাখিগুলো অত্যন্ত নিরীহ ও শান্ত স্বভাবের। ক্ষেতের ক্ষতিকারক পোকা-মাকড় খেয়ে আমাদের কৃষিপণ্য উৎপাদনে সহায়তা করে বলে আমরা এদের উপকারী পাখি বলি। এদের ইংরেজি নামCommon Myna আর বৈজ্ঞানিক নাম Acridotheres Tristis. আগে ক্ষেত-খামারে অসংখ্য শালিক পাখি দেখা যেতো। সকাল-সন্ধ্যায় কিচির-মিচির শব্দে মুখরিত করে তুলতো সেকালের পল্লীগাঁয়ের বাঁশবাগান। মনে হতো এ যেন শালিক পাখির হাট। শালিক পাখির কিচির-মিচির শব্দেই সকলের ঘম ভাংত। কিন্তু বড়োই আফসোসের বিষয়! যত্রতত্র ফসলি জমিতে কীটনাশকের ব্যবহার আর অবাধে পাখি নিধনের ফলে অতি চেনা এই পাখি আজ হারিয়ে যাচ্ছে।

মূলত শালিক পাখি আমাদের কোনো ক্ষতি করে না। বরং এরা কৃষিজমির ক্ষতিকর পোকা-মাকড় খেয়ে আমাদের ক্ষেতের ফসল রক্ষা করে। অথচ পরোপকারী এই পাখিগুলোই অবাধে নিধন করা হচ্ছে। পাখি শিকারীর দল বিষটোপ, এয়ারগানসহ বিভিন্ন ফাঁদ পেতে শালিক নিধন করেছেন। দেশে পাখি নিধন আইন আছে কিন্তু নেই শুধু এই আইনের যথাযথ প্রয়োগ। বলা চলে আইনের এই দুর্বলতার কারণেই এক শ্রেণীর মানুষ পাখি শিকারকে এখন মূল পেশা হিসেবে গ্রহণ করেছেন। এরা শালিকসহ দেশি-বিদেশি সব পাখিই নিধন করছে এবং প্রকাশ্যে তা বাজারে বিক্রি করছে।

মূলত পাখি যে শুধু পরিবেশের ভারসাম্যই রক্ষা করে তা নয়, প্রকৃতির সৌন্দর্যও বাড়ায়। তাই শালিকসহ সব শ্রেণীর পাখি নিধন বন্ধের পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট এলাকাসমূহে পাখির অভয়াশ্রম গড়ে তোলা এখন সময়ের দাবি। এ বিষয়ে সরকারি-বেসরকারি পরিবেশবান্ধব সংগঠনসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে এগিয়ে আসার আহ্বান পাখি প্রেমিদের।

(টিএআর/এসসি/জুন১৮,২০১৫)

পাঠকের মতামত:

২০ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test