E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

সুন্দরবনে বাঘ নিধনে মেতে উঠেছে চোরা শিকারী ও বনদস্যুরা

২০১৫ আগস্ট ১০ ২১:০০:১৮
সুন্দরবনে বাঘ নিধনে মেতে উঠেছে চোরা শিকারী ও বনদস্যুরা

আহসানুল করিম, বাগেরহাট থেকে :

সুন্দরবনে বাঘ নিধনে মেতে উঠেছে চোরা শিকারী ও বনদস্যুরা। একের পর এক রয়েল বেঙ্গল টাইগারের চামড়া উদ্ধার সে কথাই বলে দিচ্ছে। মিয়ানমার ও থাইল্যান্ড সীমান্তের আর্ন্তজাতিক বাজার গোল্ডেন ট্রায়াঙ্গেল সুন্দরবনের রয়েল বেঙ্গল টাইগারের চামড়াসহ অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ও বাঘের তেলের চড়া মূল্য থাকায় বাঘ নিধনে নেমেছে সুন্দরবনে চোরা শিকারী ও বনদস্যুরা।

এই বনে গত ১৬ বছরে ৫২ টি বাঘ হত্যার ঘটনা ঘটেছে সরকারী হিসেবে এ কথা বলা হলেও বেসরকারী হিসেবে বাঘ হত্যার সংখ্যা আরও বেশি। সর্বশেষ ১০ মাসে ৯টি বাঘের চামড়া উদ্ধার করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। বন বিভাগসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজরদারীর অভাবই আশংকাজনক হারে সুন্দরবনের বাঘের সংখ্যা হ্রাসের অন্যতম কারণ হিসেবে মনে করছেন সুন্দরবন বিষেজ্ঞরা।

সুন্দরবনের সন্নিহিত গ্রাম খুলনার কয়রার গোলাখালী থেকে রবিবার একসাথে ৩টি বাঘের চামড়া উদ্ধার হবার ঘটনায় সুন্দরবন বিভাগের কর্মকাণ্ড নিয়ে নতুন প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। বনের সম্পদ রক্ষার দায়িত্বে নিয়োজিত ব্যক্তিদের উদাসীনতার সুযোগে চোরা শিকারী ও বনদস্যুরা সুন্দরবনের সম্পদ লুট করতে মেতে উঠেছে। ৩টি বাঘের চামড়া উদ্ধারের ঠিক এক দিন আগে ৮ আগস্ট ৬৯ পিচ বাঘের হাড়সহ কয়রা এলাকার দুই চোরা শিকারী এনায়েত হোসেন (২২) ও বাবু হোসেনকে (১৮) খুলনা শহরের লঞ্চঘাট এলাকা থেকে পুলিশের হাতে আটক হয়।

সর্বশেষ ২০১৫ সালের ২৬ জুলাই ক্যামেরা পদ্ধতীতে বাঘ গনানার জরীপ অনুয়ায়ী জানা যায়, বাংলাদেশের সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা এখন ১০৬টি। অথচ ২০১০ সালেও বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবনে ৪৫০টি বাঘ ছিল। মাত্র ৫ বছরে সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা কমেছে ৩৪৪টি। গত ১১ বছরে বাঘের সংখ্যা কমতে কমতে অর্ধেকে নেমে এসেছে। সুন্দরবন সন্নিহিত জেলা বাগেরহাট, খুলনা ও সাতক্ষীরা জেলার অন্তর্গত সুন্দরবনে বসবাসকারী রয়েল বেঙ্গল টাইগারের সংখ্যা বৃদ্ধি তো হয়নি বরং আশঙ্কাজনক হারে হ্রাস পেয়েছে।

২৬ জুলাই প্রকাশিত ‘বাংলাদেশের সুন্দরবনে বাঘের ঘনত্ব’ শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অবৈধ শিকার, খাবারের অভাব ও প্রাকৃতিক বিভিন্ন দূর্যোগের ফলে সুন্দরবনে বাঘের অস্তিত্ব কমেছে। বনদস্যুসহ চোরা শিকারিদের বাঘ শিকার, সুন্দরবনের ভেতরের নদী দিয়ে নৌযান চলাচল এবং বনের পাশে শিল্প অবকাঠামো নির্মাণ বাঘের অস্তিত্বের জন্য বড় হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।

তাছাড়া আন্তর্জাতিক বাজারে রয়েল বেঙ্গল টাইগারের চামড়ার চড়া মূল্য থাকায় এখন চোরাশিকারীদের টার্গেটে পরিণত হয়েছে সুন্দরবনের বাঘ।

স্থানীয় সূত্র জানায়, সুন্দরবনের চারটি রেঞ্জসংলগ্ন গ্রামগুলোয় একাধিক সংঘবদ্ধ বাঘ শিকারি দল রয়েছে। এদের অবস্থান বরগুনা জেলার পাথরঘাটার চরদুয়ানী, সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের বাগেরহাট জেলার শরণখোলা, রামপাল, মংলা, মোরেলগঞ্জ, পশ্চিম বিভাগের সাতক্ষীরা জেলার আশাশুনি, শ্যামনগর, কালিগঞ্জ, খুলনা জেলার পাইকগাছা, দাকোপ ও কয়রা উপজেলায়। বাঘ শিকারিরা জেলের রুপ ধরে বন বিভাগের অনুমতি নিয়ে বনে যায়। এরপর খাদ্যে বিষ মিশিয়ে, ফাঁদ পেতে, বন্দুক দিয়ে গুলি করে বাঘ হত্যা করে। বাঘ শিকারিরা বাঘ হত্যার পর স্থানীয় পদ্ধতিতে বাঘের চামড়া সংরক্ষণ করে। পরে তা পাচারকারী চক্রের সাহায্যে বিদেশে পাচার করে। স্থানীয়ভাবে একটি চামড়ার জন্য শিকারিরা দুই থেকে আড়াই লাখ টাকা পেলেও বিদেশের চোরা বাজারে একটি চামড়া ১০ লাখ টাকায় বিক্রি হয় বলে জানা গেছে।

শুধুমাত্র সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের তথ্য অনুযায়ী গত ১১ বছরে চোরা শিকারীসহ বিভিন্ন কারণে সুন্দরবনের ১৭টি বাঘ মারা গেছে। পরিবেশবিদদের হিসেব মতে এর সংখ্যা ৩০টি। ২০০১ সাল থেকে ২০১২ সালের ৩০শে জুন পর্যন্ত ৩০ টি বাঘের মৃত্যু হয়েছে যার মধ্যে ১৬টি পূর্ব সুন্দরবনে আর ১৪ টি পশ্চিম বিভাগে মারা য়ায।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সেভ দ্যা সুন্দরবন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ডাঃ শেখ ফরিদুল ইসলাম বলেন, সুন্দরবনের বাঘ রক্ষা করতে হলে বনের সব ধরনের সম্পদ আহরণ বন্ধ করতে হবে। একই সাথে বনদস্যুসহ চোরা শিকারীদের তৎপরতা সার্বক্ষনিক মনিটরিংএর আওতায় আনতে হবে। তবেই বাঘ রক্ষা করা সম্ভব হবে।

এবিষয়ে সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের কর্মকর্তা ( ডিএফও) মো.শাহিদুল ইসলাম জানান, সুন্দরবনের জেলে-বনজীবীদের নৌকায় অত্যাধুনিক প্রযুক্তির ডিভাউস চিপ লাগিয়ে দেয়া হবে। বাগেরহাট ও খুলনায় পূর্ব ও পশ্চিম বিভাগের অফিস থেকে তা সার্বক্ষনিক মনিটরিং করা হবে। এভাবে সুন্দরবনের বাঘ নিধন সম্ভব হবে বলে দাবি করেন এই বন কর্মকর্তা।

(একে/অ/আগস্ট ১০, ২০১৫)

পাঠকের মতামত:

১৬ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test