E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

নওগাঁয় আড়াইশ’ বছর আগে নির্মিত শিব-কালি মন্দির দুটি ধ্বংসের মুখে

২০১৪ জুন ০৮ ১৬:৪৬:১৪
নওগাঁয় আড়াইশ’ বছর আগে নির্মিত শিব-কালি মন্দির দুটি ধ্বংসের মুখে

নওগাঁ প্রতিনিধি :  নওগাঁর রাণীনগর উপজেলার কালীগ্রাম পরগণার কসবা মৌজায় বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর পরিবারের প্রায় আড়াইশ’ বছর আগে নির্মিত দু’ট মন্দির আজ ধ্বংসের মুখে। প্রায় ২০ বছর আগে সরকার একবার রক্ষণাবেক্ষণের উদ্যোগ নিলেও পরবর্তীতে তা কর্যকর করা হয়নি।

ফলে ঠাকুর পরিবারের ১৮ বিঘার একটি পুকুরসহ ৩৬ বিঘা জমি বিভিন্ন ভাবে দখলে নিয়েছে স্থানীয়রা। দেশ স্বাধীন হওয়ার পরও শিব ও কালি মন্দির দুটিতে পুজো-অর্চনা করা হতো। মন্দির এলাকায় দখলদারদের সংখ্যা দিন দিন বেড়ে যাওয়ায় পার্শ্ববর্তী কালীগ্রাম গ্রামের হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন সেখানে পুজো-অর্চনা বন্ধ করে দেয়। এদিকে স্থানীয় কতিপয় সুবিধাবাদী লোকজন সরকারি কতিপয় কর্মকর্তার যোগসাজশে পুকুরসহ সম্পত্তিগুলো দখল করে নিয়েছে। দ্রুত সম্পত্তিগুলো উদ্ধার ও মন্দির দুটি সংস্কারের দাবি জানিয়েছেন এলাকার সংখ্যালঘূ হিন্দুরা।
জানা গেছে, ঠাকুর পরিবার আত্রাই উপজেলার পতিসরে জমিদারি পরিচালনার সময় কালীগ্রাম পরগণার কসবা মৌজায় প্রায় আড়াইশ’ বছর আগে কাচারি বাড়ি স্থাপন করা হয়। এ কাচারি বাড়ি থেকে কালীগ্রাম পরগণার কসবা, ভান্ডাগ্রাম ও রাতোয়াল গ্রামে জামদারি পরিচালনা করা হতো। সে সময় এলাকায় কৃষকদের সেচ কাজের সুবিধার্থে ৩৬ বিঘা জমির ওপর একটি ১৮ বিঘার পুকুর ও দুটি মন্দির নির্মাণ করা হয়।
রবীন্দ্র গবেষক, কবি ও সাবেক সহকারী অধ্যাপক আতাউল হক সিদ্দিকী জানান, মন্দির দুটি নির্মাণের পর জামিদারের কোষাগার থেকে পূজার জন্য অর্থ ব্যয় করা হতো। দেশ স্বাধীন হওয়ার পরও ১৯৮৪-৮৫ সাল পর্যন্ত মন্দির দুটিতে পূজা-অর্চনা করা হয়। কিন্তু মন্দির এলাকায় দখলদারদের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় পার্শ্ববর্তী কালীগ্রাম গ্রামের হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন-সেখানে পূজা বন্ধ করে দেয়।
কসবা গ্রামবাসি এমদাদুল হক, হালিমা বেওয়া ও রহমান সরদার জানান, প্রায় ২০ বছর আগে সরকার একবার এই মন্দির রক্ষণাবেক্ষণ ও সংস্কারের সিদ্ধান্ত নেয়ার পরও কার্যক্রম শুরু না করায় ইতোমধ্যে কাচারি বাড়ি ভেঙ্গে বসতবাড়ি গড়ে তোলা হয়েছে। কালি মন্দিরটির উত্তর দিকে প্রায় ধ্বংস হয়ে গেছে। তবে শিব মন্দিরটি এখনো দাঁড়িয়ে থাকলেও ইতোমধ্যে দখলদাররা শিব মন্দিরের উঠানে ইটের ঘর নির্মাণ করেছে। সরকারি কতিপয় কর্মকর্তার যোগসাজশে পুকুরসহ সম্পত্তিগুলো বিভিন্ন ভাবে বেদখল হয়ে যাচ্ছে।
দখলদাররা জানান, তাদের থাকার জায়গা নাই। তাই তারা এখানে বাড়ি-ঘর নির্মাণ করে আছেন। বিভিন্ন সময় প্রশাসনের কর্মকর্তা ও সাবেক সংসদ সদস্য এসে পরিদর্শন করেন। পরিদর্শন কালে প্রশাসনিক কর্মকর্তারা তাদের বলেন “যখন সরকার এগুলো সংস্কারের উদ্যোগ নেবে, তখন তাদের ছেড়ে দিতে হবে”।
কালীগ্রাম ইউপি চেয়ারম্যান গোলাম মোস্তাফিজুর রহমান রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পুকুরসহ ৩৬ বিঘা সম্পত্তিগুলো বেদখল হয়ে গেলেও তা উদ্ধার করাসহ সংস্কারের দাবি জানান। কিন্তু প্রশাসনের সঠিক নজরদারি না থাকা ও কতিপয় কর্মকর্তার অসাধু উপায় অবলম্বন করায় তারা দখলের এ সুযোগ পেয়েছেন। রাণীনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মনিরুল ইসলাম পাটওয়ারি জানান, ইতোপূর্বে সরকারের সংস্কারের যে উদ্দোগ নেয়া হয় তা পর্যাপ্ত ছিল না। তবে বেদখল পুকুরসহ সম্পত্তিগুলো উদ্ধার করে সংস্কারের সকল তথ্য উধ্বর্তন কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে কবিগুরুর স্মৃতিকে সমোজ্জীবিত রাখার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। সরকার ও সংশ্লিষ্ট বিভাগ সম্পত্তিগুলো দ্রুত উদ্ধার ও মন্দির দুটি সংস্করের উদ্যোগ গ্রহণ করে কবিগুরুর স্মৃতিকে ধরে রাখার দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসি ও রবীন্দ্র ভক্তরা।
(বিএম/এএস/জুন ০৮, ২০১৪)

পাঠকের মতামত:

২০ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test