E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

মেহেরপুরে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে বালু উত্তোলন : ভূমি ধসের আশঙ্কা

২০১৪ এপ্রিল ০৯ ১৩:৫৩:৫৩
মেহেরপুরে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে বালু উত্তোলন : ভূমি ধসের আশঙ্কা

মেহেরপুর প্রতিনিধি : মেহেরপুরে এক শ্রেণীর ভৌগলিকজ্ঞানশূন্য মানুষ ড্রেজার মেশিন দিয়ে সমতল মাটির নিচ থেকে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে বালু উত্তোলন করে মাটির নিচে শূণ্যতা তৈরি করছে। জেলায় অন্তত ২৫টি স্থানে সমতল ভূমির নিচ থেকে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। ফলে ওইসব স্থানে যেকোন সময় ধস নেমে আশপাশের চাষাবাদের জমি অনাবাদি হয়ে যেতে পারে। গতমাসে উপজেলা প্রশাসন অভিযান চালিয়ে একজনের ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করে।

সরেজমিনে দেখা যায়, কাথুলী থেকে গাংনী সড়কে ৫টি স্থানে, সদর উপজেলার মেহেরপুর গাংনী সড়কে পুলিশ লাইনের উত্তর অংশে পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের পেছনে ও গাড়াডোবে প্রধান সড়কের পাশে সমতল ভূমির নিচ থেকে বালি উত্তোলন করা হচ্ছে। যে কোন সময় ধস নেমে সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যেতে পারে বলে পরিবেশবিদগণ মনে করেন।
বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে, সমতল ভূমির নিচ থেকে বালু তুলে পাহাড় সমান করে রাখা হয়েছে। পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের পেছনে জেলা শহরের ফৌজদারি পাড়ার কাবাতুল্লাহ হকের ছেলে ইলিয়াস হোসেন ও কাশেম আলী নামে দুই ভাই বালু তুলে পাহাড় করে রেখেছেন। প্রতিদিন এখান থেকে গড়ে ২৫ হাজার ঘনফুট বালু বিক্রি হচ্ছে। সেখানে কর্মরত শ্রমিক বাবর আলী জানান, বর্তমানে তাদের কাছে ৫ লাখ ঘনফুট বালু সংরক্ষিত আছে। বালু উত্তোলনকারী কাশেম আলী জানান, তিনি তাদের নিজের জমি পুকুর কেটে ওই পুকুরে ডেজার মেশিন বসিয়ে মাটির তল থেকে বালু তুলছেন এটা দোষের নয়। তিনি তার নিজের জমি থেকেই বালু তুলছেন। কাবাতুল্লার ওই জমির পাশের জমির মালিক আবদুর রহিম জানান, এভাবে বালু তোলার কারণে তার জমি এখন সহজেই শুকিয়ে যায়। বর্তমানে আগের চেয়ে অতিরিক্ত সেচ দিয়ে চাষাবাদ করতে হচ্ছে।
সদর উপজেলার টেংগার মাঠে জাহাঙ্গীর হোসেন ও গোপালপুরে কাশেম আলী মাষ্টার তাদের সমতল ভূমিতে পুকুর কেটে ওই পুকুরে মেশিন লাগিয়ে মাটির তলদেশ থেকে বালু তুলছেন। কাথুলী হয়ে গাংনী সড়কেও বিভিন্নজন মাটির তলদেশ থেকে বালু তুলছেন। জেলা প্রশাসনের পক্ষে কোন পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে না।
জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগের বিভাগীয় নির্বাহী প্রকৌশলী আবদুল ওয়াদুদ জানান, সমতল ভূমি থেকে বালু সংগ্রহ করলে সেখানে ভূমিধস হতে পারে। ফলে আশপাশের জমি আনাবাদি হয়ে পড়বে।
মেহেরপুর জেলা গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আহসান উল্লাহ জানান, মেহেরপুর অঞ্চলে ১০ ফুট নিচেই বালুর স্তর। ভুগর্ভ থেকে বালুর সাথে পানি উঠার কারণে তলদেশে যেমন ভ্যাকুয়াম তৈরি হচ্ছে পাশাপাশি বালুর সাথে পানি উঠে সেখানে পানির স্তর নিচে নেমে যাচ্ছে। এই কারণে খরা মৌসুমে মারাত্মকভাবে পানি সংকট দেখা দেবে। এছাড়া ভমিধসে প্রাণহানীও ঘটতে পারে।
গাংনী উপজেলা নির্বাহী অফিসার আাবদুস সালাম জানান, বিভিনন্থানে বালু তোলার অভিযোগ তিনি পেয়েছেন। বালু মহল ও মাটি রক্ষা আইন ২০০৯/১৫ ধারায় অভিযান চালিয়েছেন গত ১৯ জানুয়ারি। কাজিপুরে মাথাভাঙ্গা নদী থেকে বালু তোলার অপরাধে স্বপন হোসেন নামের একজনের ৫০ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করেছেন। তবে নির্বাচনসহ বিভিন্ন কাজের ব্যস্ততার কারণে আর অভিযান চালানো হয়নি।
মেহেরপুর জেলা প্রশাসনের নেজারত ডেপুটি কালেক্টর (এনডিসি) আমিনুল ইসলাম জানান, যদিও ব্যক্তিগত জমির তলদেশ থেকে কেউ বালি উত্তোলন করলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার বিধান নাই। তবে পাশের জমির ক্ষতি হবার আভিযোগ আসলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড চুয়াডাঙ্গা‘র উপ সহকারি প্রকৌশলী রোকন উজ জামান জানান, ব্যক্তিগত জমি থেকে নিজের চাহিদার জন্য বালু সংগ্রহ করা যেতে পারে। তবে ব্যাপকহারে বালু উত্তোলন করে ভূগর্ভস্থ্যে যে শূণ্যতা দেখা দেবে তাতে বড় ধরনের ভূমিধসের আশংকা থেকেই যায়। তবে বিষয়টি দেখভালের দায় দায়িত্ব জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের।
মেহেরপুর সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার নাজনিন সুলতানা বলেন, ব্যক্তিগত জমি থেকে কেউ মাটির তলদেশ থেকে বালি উত্তোলন করলে প্রচলিত আইনে আমাদের কিছু করার নাই।
(টিএ/এএস/এপ্রিল ০৯, ২০১৪)


পাঠকের মতামত:

২০ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test