E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

নিজের তৈরি মেশিনে শান দিয়ে চলে সোবাহানের জীবন

২০১৪ জুন ১৬ ১৬:২৬:১৬
নিজের তৈরি মেশিনে শান দিয়ে চলে সোবাহানের জীবন

বরগুনা প্রতিনিধি : ধার বিহীন পুরানো কাঁচি, চাকু কিংবা দাও ধারালো করে ব্যবহার উপযোগী করাই তাঁর কাজ। স্থানীয় ভাষায় এই ধার দেওয়ার নাম শান দেওয়া। নিজের তৈরি মেশিনে উপকুলীয় হাট বাজারে গিয়ে এই শান দেওয়ার কাজ করে গত গত চল্লিশ বছর ধরে জীকা চালিয়ে আসছেন একজন ষাটোর্ধ বয়সী সোবহান প্যাদা। একাজের আয় দিয়েই তিন সদস্যের পরিবারের ভরণ পোষন চলে।

সোবহান প্যাদার বাড়ি বরগুনা জেলার বেতাগী উপজেলার কাউনিয়া গ্রামে। তবে তিনি বরগুনার উপকুলীয় অঞ্চলের হাটবাজারে শান দেওয়ার মেশিন দিয়ে ধারহীন চাকু.কাঁচি ও দাও মেশিনের চাকায় ঘষে ধারালো করে তা ঝকঝকে করে ব্যবহার উপযোগী করে আসছেন।
বরগুনার বামনা উপজেলা সদরের সাপ্তাহিক হাটের দিন কথা হয় তাঁর সাথে। এসময় তিনি জানান,দরিদ্র পরিবারের সন্তান হিসেবে স্কুলে যাওয়া সম্ভব হয়নি তাঁর। বাড়িতে বসেই তাকে কেবল অক্ষর জ্ঞান নিতে হয়। বাল্যকাল হতেই জীবিকার তাগিদে পরের ক্ষেতে কামলা খেটে সংসারে আয় উপার্জণ করতে হয়েছে। সোবহান প্যাদার বয়স যখন ২৫বছর তখন থেকেই একটি শান দেওয়া মেশিন তৈরী করে শুরু করেন হাট বাজারে গিয়ে মরচে ধরা পুরানো কাচি,দাও ও চাকুতে ধার ওঠানোর কাজ। চল্লিশ বছর ধরে এক মেশিনেই চলছে তাঁর এ কাজ। একাজে প্রতিদিন তাঁর গড়ে ১৫০/২০০ টাকা আয় হয়। এ আয় দিয়েই চলছে পরিবারের ভরন পোষণ। সোবাহানের তিন ছেলে দুই মেয়ে। তিনছেলে বিয়ে করে আলাদা সংসার পেতেছেন। দুই মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন। এখন তাকে এই বয়সে জীবিকার তাগিদে শান দেওয়ার কাজ করতে হচ্ছে।
শান দেওয়া মেশিনটির চাকার প্যাডেল পা দিয়ে সজোরে ঘোরাতে হয়। এতে মেশিনের ওপরে একটি পাথরের প্লেট সজোরে ঘুরতে থাকে। ঘূর্ণায়মান ওই পাথরের প্লেটের কার্ণিশে লোহার চাকু,দাও ও কাচি স্পর্শ করলে ঘর্ষণে ধার উঠে যায়। এসময় ঘর্ষণে আগুনের ফুলকি বের হয়। এ আগুনের ফুলকি ছিটকে আসে যা শরীর ও চোখের জন্য কিছুটা ঝুঁকিপূর্ণ। তাছাড়া দুই পায়ে অনর্গল প্যাডেল ঘোরানোর কাজ খুবই পরিশ্রমের। বার্ধক্যের শরীরে না কুলালেও জীবিকার তাগিদেই তাকে শান দেওয়া মেশিনের প্যাডেল ঘোরাতে হচ্ছে।
সোবাহান প্যাদা বলেন,শরীরে এ কাম (কাজ) কুলায় না। অন্য কোন কাম জানা নাই। মরার আগ পর্যন্ত তাই শান দেওয়ার কাম কইরা বাঁচতে চাই। অন্য কোন ব্যবসায় যাওয়ার মত কোন পূজি আমার নাই। তয় পূজি পাইলে এই কষ্টের কাম করতাম না।
(এমএইচ/এএস/জুন ১৬, ২০১৪)

পাঠকের মতামত:

০২ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test