E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

ভরা মৌসুমে উপকূলে দেখা মিলছে না ইলিশের

২০১৪ জুন ১৭ ১৪:৪৩:১৩
ভরা মৌসুমে উপকূলে দেখা মিলছে না ইলিশের

বাগেরহাট প্রতিনিধি : বঙ্গোপসাগর উপকুলীয় জেলা বাগেরহাটের প্রধান মৎস্য কেবি বাজারে ইলিশ পল্লীতে জেলেদের মুখে হাসি নেই। ভরা মৌসুমেও দেখা মিলছে না রুপালি ইলিশের। তাই এবার তাদের ঘরে ঘরে নেই ইলিশ খিঁচুড়ি খাওয়ার ধুম। অথচ ইলিশের এই ভরা মৌসুমে এসব জেলের প্রধান খাদ্যই ছিল ইলিশ খিঁচুড়ি।

ইলিশের এই ভরা মৌসুমেও দিনরাত জাল ফেলেও জেলেদের জালে ধরা পড়ছে না ইলিশ। যাও ধরা পড়ছে তা খাওয়া থাক দূরের কথা বিক্রি করে তাদের সংসার চালানোই এখন দায়। আবার জেলেরা মাছ ধরে এখানকার মাছের আড়তে নিয়ে আসার পর তা প্রতিবেশী দেশ ভারতে রফতানি করা হত। অল্প কিছু মাছ ধরা পড়লেও তা গোপনে ভারত পাচার হয়ে যাচ্ছে। ফলে বাজারে কিছু মাছ পাওয়া গেলেও তার দাম সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে। তার ওপর জেলেরা দাবি করেছে এখানকার নদীগুলোয় আগের মতো মাছ নেই।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ইলিশের এই ভরা মৌসুমেও বাগেরহাটের ইলিশের প্রধান মোকাম শহররক্ষা বাঁধ রোডে অবস্থিত কেবি মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে মাছ নেই। অথচ গত বছরও আষাড় থেকে আশ্বিন মাসে ইলিশের পাহাড় জমেছে এখানে। এ মোকামের বাইরেও ফেরি করে বিক্রি হয়েছে বিশালাকার সব ইলিশ। কোনো কোনো মাছ বিক্রেতা বাড়ি বাড়ি গিয়েও ফেরি করেছে সেসব মাছ। রফতানির জন্য মোকামের সামনে সাড়িবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে থাকতো বড় বড় ট্রাক। ট্রাক বোঝাই সেসব ইলিশ রফতানি হতো ভারতসহ বিভিন্ন স্থানে। জেলেরাও মাছ বিক্রি করে বেশ অর্থ উপার্জন করে ভালোই ছিল। কিন্তু এবার আর সে অবস্থা নেই। বাগেরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ব্যবসায়ী লুলু মোল্লা জানান, এ ভরা মৌসুমে মাছ আসছে চাহিদার তুলনায় অনেক কম। এ বছর প্রতিদিন এ মোকামে মাছ আসছে সর্বোচ্চ ১/২ মণ। মাছের সাইজও তেমন ভালো নয়। অথচ গত বছরো এখানে এ মৌসুমে প্রতিদিন ২০০/৩০০ মণ ইলিশ এসেছে।
তিনি জানান, প্রতিদিন এ মোকামে ৫’শ মণের মতো মাছের চাহিদা থাকলেও তা আমরা পাচ্ছি না। অন্য ব্যবসায়ী অরূপ কুমার জানান, এবারে বাজারে মাছের দাম গত বছরের তুলনায় তিনগুণে বেশি। বর্তমানে এখানে সবচেয়ে বড় সাইজের (কেজির ওপর) ইলিশ প্রতি মণ ৪৫ হাজার থেকে ৫০ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। যা গত বছর ছিল ৩৫-৪০ হাজার টাকা। এক কেজির নিচে ৭শ গ্রাম ওজনের ইলিশ মাছ প্রতি মণ বিক্রি হচ্ছে ৩৫ হাজার টাকা দরে। যা গত বছর ছিল ১৫-২০ হাজার টাকা।
সূত্র জানায়, বাগেরহাটের মোকাম থেকে খুলনা, যশোর, মাগুরা, ফরিদপুর, রাজশাহী, কালীগঞ্জ, ঝিনাইদাহ্, ভেড়ামাড়া, পানশা, ভাঙ্গাসহ বিভিন্ন স্থানে পাঠানো হতো। চলতি বছর জেলেদের জালে মাছ ধরা না পড়ায় এবং ওইসব মোকাম থেকে মাছ না আসায় এ মাছ শূন্যতা দেখা দেয়। গত বছরও এ মোকাম থেকে ভারতে পর্যাপ্ত ইলিশ রফতানি করা হয়েছে। এ বছর মাছের পরিমাণ কম তাই রফতানির পরিমাণও কমে গেছে।
এ ব্যাপারে উপকুলীয় মৎস্যজীবী সমিতির সভাপতি শেখ ইদ্রিস আলী, এ মৌসুমে প্রতিদিন গড়ে চারটি থেকে পাঁচটি ট্রাক বাগেরহাট থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে মাছ বোঝাই করে যেতো। কিন্তু এখন আর তা হচ্ছে না। বাগেরহাটে যারা নিয়মিত মাছ এনে বিক্রি করতো তারা এখন অনেকই আর এখানে আসেন না। জেলেরা অর্থ সংকটে পড়ছে। এখানে যেসব শ্রমিক কাজ করে তাদের জীবিকা নির্বাহ করতো, মাছ না থাকায় তারা আজ অসহায় হয়ে পড়েছে। যে পরিমাণ মাছ আসছে সে তুলনায় শ্রমিকের সংখ্যা অনেক বেশি। তাই সারাদিন কাজ না করেও বসে থাকতে হয়। বর্তমান বাজারে একদিনে যে টাকা আয় হয় তা দিয়ে পরিবার পরিজন নিয়ে বেঁচে থাকা যায় না। ইলিশের এই ভরা মৌসুমেও এখন অনেকের ঘরের চুলো জ্বলছে না।

(একে/এএস/জুন ১৭, ২০১৪)

পাঠকের মতামত:

০২ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test