E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

শিরোনাম:

বিষখালী-পায়রা-বলেশ্বর ইলিশ শুন্য

বরগুনায় জেলে পরিবারে চলছে নিরন্নের কাল

২০১৪ জুন ২৫ ১৪:০৩:৫৩
বরগুনায় জেলে পরিবারে চলছে নিরন্নের কাল

বরগুনা প্রতিনিধি : হঠাৎ করে বিষখালী নদীতে মাছের আকাল দেখা দিয়েছে। সারাদিন জেলেরা নদীতে জাল ফেলে ইলিশ না পেয়ে শূণ্য হাতে ফিরছে। এতে পরিবারের ভরণ পোষণের ব্যয়ভার নিতে অনেক জেলেকেই হিমসিম খেতে হচ্ছে।

চল্লিশোর্ধ জেলে মিন্টু দাসের ১০ সদস্যের পরিবার। থাকেন বিষখালী নদী তীরবর্তী বেরিবাঁধের পাড়ে। এ পরিবারটির জীবন চলে বিষখালী নদীতে মাছ ধরে। আর এ মাছ ধরার কাজে জেলে মিন্টু দাস মহাজন,ব্যাংক আর বিভিন্ন এনজিও ঋণের জালে আটকা। তবু ইলিশ মাছ ধরে কোনমতে চলছিল এ পরিবারটির ভরণ পোষণ। শুধু জেলে মিন্টু দাস নয় বরগুনার পায়রা-বিষখালী ও বলেশ্বর নদী তীরবর্তী জেলে পল্লীর কয়েক লাখ জেলে পরিবারে এমন মাছের আকালে চলছে নিরন্নের কাল।

বিষখালী নদী তীরের কলাগাছিয়া জেলে পল্লীর জেলে মিন্টু দাস আক্ষেপ করে বলেন, ত্রিশ বছর বিষখালী গাঙ্গে মাছ ধইরা খাই, এবার গাঙ্গে আকাল পড়ছে। হারাদিন(সারাদিন)জাল পাইত্যা কোন ইলিশ পাইতেছিনা। আমাগো ক্যামনে দিন চলবে আল্লায় জানে। সংসারে দশটা মানের খাওন জোগাইতে মুহে রক্ত উঠ্যা যায়। যেদিন মাছ পাই হেদিন দুইডা জোডে আর যে দিন পাইনা হে দিন পোলা মাইয়া লইয়া অর্ধাহারে অনাহারে থাহি”। বিষখালী মোগো বাঁচায় আবার বিষখালী মোগোই মারে।

জেলে মিন্টু দাশ(৪০)জানান, এবার মাছের মৌসুমকে সামনে রেখে মাহাজনদের কাছ থেকে তিনি ত্রিশ হাজার টাকা দাদন নিয়েছেন। ব্যাংক দুটি এনজিও থেকে মোট ষাট হাজার টাকার ঋণ নেওয়া আছে তাঁর। এবার ইলিশ মৌসুমে সমুদয় দেনা কাটিয়ে উঠতে পারবেন। কিন্তু দুর্ভাগ্য তাঁর ইলিশ মৌসুমের দেড় মাস পার হয়ে গেলেও বিষখালী নদীতে কোন ইলিশের দেখা মিলছেনা। তাই জেলেদের ঘরে ঘরে এখন অভাব আর অভাব। অনেকে ঋণের চাপে গা ঢাকা দিয়ে বেড়াচ্ছেন।

সরেজমিনে জানাগেছে, বরগুনার বিভিন্ন নদীতে জেলেদের জালে আর আগের মতো ইলিশ মিলছেনা। ফলে শূণ্য হাতে প্রতিদিনই অনেক জেলে ডাঙ্গায় ফিরে আসছেন। ভরা বর্ষা মৌসুমেও জেলেদের জালে ইলিশ ধরা না পড়ায় দেনার দায়ে চরম দিশেহারা তারা। অনাহারে, অর্ধাহারে মানবেতর জীবন কাটাতে হচ্ছে তাদের। কষ্টে জীবন চলছে জেলার জেলে ও মাছ ব্যবসার সাথে জড়িত পরিবার গুলো। মহাজনের দায়-দেনা সত্ত্বেও সংসার চালাতে ফের একাধিক এনজিও থেকে লোন নিয়ে কিস্তি শোধ করতে পারছেনা তারা। ফলে দেনার দায়ে অনেক জেলে এখন এলাকা ছাড়া। ঘাটে শতশত নৌকা ও ট্রলার বাঁধা। নদীতে মাছ না থাকায় জেলারা এখন বেকার হয়ে পড়ে বাড়িতে অলস সময় কাটাচ্ছে।

পাথরঘাটার আরৎ মালিক মো. মকবুল জানান, আড়তে ইলিশ না আসলে কতদিন এ পেশা ধরে রাখতে পারবো জানিনা। পরিবার পরিজনের মুখে দুমুঠো অন্ন জোগাতে এখন বাধ্য হয়ে নতুন পেশা খুজছি।

বরগুনা জেলার বিভিন্ন হাট-বাজার ঘুরে দেখো যায়, বাজারে দুএকটা ইলিশ উঠলেও তার দাম সাধারণ ক্রেতাদের ক্রয় ক্ষমতার অনেক বাহিরে। এখানে প্রতি কেজি ইলিশ বিক্রী হচ্ছে ১২ শত থেকে ১৫শত টাকায়।

বরগুনার পদ্মা গ্রামের জেলে পল্লীর জেলে বরুণ দাশ জানান, বর্তমান বর্ষা মৌসুমে ইলিশের ভরা মৌসুম থাকলেও নদীতে রাত দিন জাল পেতে খালি হাতে তাদের ফিরতে হচ্ছে। মাঝে মধ্যে দু একটি মাছ ধরা দিলেও নৌকার খরচ মিটিয়ে অবশিষ্ট আর কিছুই থাকেনা।

বর্তমানে নদ নদীতে শুধু ইলিশই নয় অন্য কোন মাছও মিলছেনা জেলেদের জালে, ফলে তাদের মধ্যে দেখাদিয়েছে হতাশা। ইলিশের আড়তগুলোতে বর্তমানে মাছের তীব্র সংকট থাকার কারণে মাছ আহরণ ও বাজারজাতকরণ কাজে নিয়োজিত বামনা সদর ও আমুয়া বন্দরের অনেক জেলে ও ব্যবসায়িরা চরম হতাশা এবং অনিশ্চয়তার মধ্যে জীবন যাপন করছে।

খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, বাজারে স্বল্প পরিমাণ ইলিশ উঠলেও জেলে, আড়তদার ও শ্রমিক সহ অনেকেই বসে বসে পুঁজির টাকা খরচ করছেন। অপরদিকে ইলিশ নির্ভর উপকূলীয় এলাকার মানুষের চোখে মুখে এখন অভাবের ছাপ স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। ফলে অনেক জেলে এলাকা ছেড়ে শহরমুখী হতে শুরু করেছে।

এছাড়া ইলিশ না ধরা পড়ায় জেলার বরফ কলগুলো বর্তমানে বন্ধ হবার উপক্রম হয়েছে। তবে রমজান মাসে মাছ পেতে পারে এই আশায় জেলে পল্লীর অনেক জেলে নতুন নতুন জাল বাঁধা সহ এখন থেকেই পুরানো জাল সেলাই করার কাজে ব্যস্ত হয়ে উঠেছেন।

বরগুনার পাথরঘাটার মৎস্য ব্যবসায়ি মো.আ. কুদ্দুস মিয়া বলেন, বিষখালী নদীতে এরকম ইলিশের আকাল এর আগে আর দেখিনি। নদীতে মাছ না থাকায় জেলেদের মাছ ব্যবসার সাথে জড়িত পরিবার গুলো চরম কষ্টে আছে।

এব্যাপারে বরগুনা জেলা কর্মকর্তা বঙ্কিম চন্দ্র বলেন, জাটকা নিধন, জলবায়ু পরিবর্তন এবং অনাবৃষ্টির কারণে নদীতে মাছের আকাল দেখা দিয়েছে। ফলে জেলেদের জীবন ও জীবিকায় দুর্দিন নেমে এসেছে। আষাঢ়ের ঘনবৃষ্টি শুরু হলে উপকুলীয় নদ নদীতে ইলিশের আনাগোনা বৃদ্ধি পেতে পারে।

(এমএইচ/জেএ/জুন ২৫, ২০১৪)

পাঠকের মতামত:

২৪ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test