E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

শিরোনাম:

বরিশালের প্রয়াত সাংসদ হিরণের ছেলে গোল্ডেন জিপিএ-৫ পেয়েছে

২০১৪ আগস্ট ১৪ ১৭:৫৭:৫৭
বরিশালের প্রয়াত সাংসদ হিরণের ছেলে গোল্ডেন জিপিএ-৫ পেয়েছে

আঞ্চলিক প্রতিনিধি, বরিশাল : আবারো কাঁদলেন বরিশাল-৫ সদর আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য জেবুন্নেছা আফরোজ। তার একমাত্র পুত্র রাফসান সাজিদ হোসেনকে জড়িয়ে ধরে তিনি কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। একই সাথে হু-হু করে কান্নার ঢেউয়ের মাত্রা বাড়িয়ে দিলেন মেয়ে তৃণা হক রোশনী।

বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র প্রয়াত শওকত হোসেন হিরন-এমপি’র একমাত্র পুত্র সাজিদের এইচএসসি’র রেজাল্ট আসে বুধবার দুপুর দেড়টার দিকে। গোল্ডেন জিপিএ-৫ পাওয়ার খবর আসার মুহুর্তেই ঢাকার গুলশান-১ নাম্বারের বাসায় হাহাকার শুরু হয়। শোক যন্ত্রণার দুয়ারে আবারো হানা দেয় একরাশ চাঁপা কষ্ট। পরিবারের সব সদস্য আবারো কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। হিরণের অনুপস্থিতিতে দুই সন্তানকে বুকে আগলে রেখে নিজের কষ্ট ভুলে থাকা জেবুন্নেছা আফরোজ নিজেই স্মৃতির অতল গহবরে হারিয়ে যান। এবারের এইচ.এস.সি পরীক্ষায় ঢাকার অন্যতম শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বিএনএফ শাহিন কলেজ থেকে বিজ্ঞান বিভাগে রাফসান সাজিদ হোসেন গোল্ডেন জিপিএ-৫ পেয়েছে।
কান্নাজড়িত কন্ঠে জেবুন্নেছা আফরোজ-এমপি বুধবার রাতে সাংবাদিকদের কাছে বলেন, শওকত হোসেন হিরণকে জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে রেখে সাজিদ পরীক্ষা দিতে গিয়েছিলো। সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালের আইসিইউতে অচেতন অবস্থায় সাজিদ তার পিতার (হিরণের) পা ছুঁয়ে সালাম করে দোয়া চেয়েছিলো। জেবুন্নেছা আফরোজ আরো বলেন, কলমের কালি কতটুকু থাকবে পরীক্ষার খাতায়? হয়তো চোখের জল তার থেকে বেশি জায়গা করে নিয়েছে সাজিদের পরীক্ষার খাতায়। চারটি পরীক্ষা শেষে গণিত পরীক্ষার ঠিক আগেরদিন (৯ এপ্রিল) সকালে হিরণ ঢাকার এ্যাপোলো হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন। তখন পরীক্ষায় অংশগ্রহণ অনিশ্চিত হয়ে পরে সাজিদের। কিন্তু স্বজনদের অনুরোধে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে সাজিদ। যেকারনে মৃত্যুর একদিন পর (১০ এপ্রিল) হিরণের লাশ আনা হয় তার প্রিয় বরিশাল নগরীতে। বাবার কফিনের পাশে বসে হেলিকপ্টারে ঢাকা থেকে বরিশাল এসেছিলো সাজিদ। আবার তার (হিরণের) দাফনের পর ঢাকায় গিয়ে সাজিদ পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে। তিনি আরো বলেন, আজ আবারো মনে হলো আমার দুই সন্তানের পিতা নেই। আবারো শওকত হোসেন হিরণের অনুপস্থিতি অনুভব করলাম। আজ সে (হিরণ) বেঁচে থাকলে ছেলের আনন্দের দিনে সবাইকে মিষ্টি মুখ করাতেন। আজ আনন্দের দিনেও কাউকে মিষ্টিমুখ করানো হলোনা। তাই আনন্দের দিনটিও পরিবারের সবাই চোখের জলে কাটিয়েছি। আবারো অনুভব করেছি শত সহস্র হিরণ ভক্ত থাকলেও স্বয়ং শওকত হোসেন হিরণই কেবল বেঁচে নেই। সাজিদ বড় হয়ে একজন আইনবিদ হওয়ার স্বপ্ন দেখছে। হয়তো তার এ আশাও পূর্ণ হবে কিন্তু পিতা শওকত হোসেন হিরণের গলা জড়িয়ে ধরে সাজিদ কোনদিন বলতে পারবে না, বাবা আমি আইনবিদ হয়েছি। কারণ গত ৯ এপ্রিল হিরণ পাড়ি জমিয়েছে না ফেরার দেশে।
হিরনের ঘনিষ্ঠজন অগ্রণী ব্যাংকের পরিচালক এ্যাডভোকেট বলরাম পোদ্দার বলেন, গত ২২ মার্চ রাতে মস্তিস্কে রক্তক্ষরণ হওয়ার পর থেকে হিরণ ভাই আমৃত্যু ছিলেন অচেতন। ফলে মৃত্যুর পূর্বে ভাবী জেবুন্নেছা আফরোজ কিংবা তার একমাত্র পুত্র রাফসান সাজিদ হোসেন ও একমাত্র কন্যা তৃণা হক রোশনীর কাছে শেষবারের মতো কিছুই বলে যেতে পারেননি। তাই তাদের কষ্টেরও শেষ নেই। তাদের এ কষ্ট কোনদিনই শেষ হবার নয়। তাই তাদের কান্নাও কোনদিন থামার নয়। গত ২২ মার্চ রাতে মস্তিস্কে রক্তক্ষরণ জনিত কারনে টানা ১৯দিন মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ে (লাইফ সার্পোটে থেকে) অবশেষে গত ৯ এপ্রিল মৃত্যুবরন করেন বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র, মহানগর আ’লীগের সভাপতি আলহাজ্ব শওকত হোসেন হিরণ-এমপি।
(টিবি/এএস/আগস্ট ১৪, ২০১৪)

পাঠকের মতামত:

১৮ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test