E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

বিশ্ববিদ্যালয়ের নোংরা শিক্ষক রাজনীতির শিকার আমি : সামিয়া

২০২১ মার্চ ০১ ১৭:০৭:১৭
বিশ্ববিদ্যালয়ের নোংরা শিক্ষক রাজনীতির শিকার আমি : সামিয়া

স্টাফ রিপোর্টার : বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক রাজনীতির চূড়ান্ত ‘নোংরামি’র শিকার হয়েছেন বলে দাবি করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক সামিয়া রহমান। এছাড়া তার বিরুদ্ধে লেখায় চৌর্যবৃত্তির যে অভিযোগ আনা হয়েছে তা পুরোটাই মিথ্যা বলে দাবি করেন তিনি।

সোমবার (১ মার্চ) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ দাবি করেন।

সামিয়া রহমান বলেন, ‘আমি ষড়যন্ত্রের শিকার। যে লেখা আমার না, আমি শুধু আইডিয়া দিয়েছি। আমাকে না জানিয়ে ছাপা হলো। আমি নিজেই তদন্ত কাজ দ্রুত শেষ করার জন্য আবেদন করলাম, সেখানে আমাকে দোষী সাব্যস্ত করা হলো। আমি রাজনীতির শিকার।’

‘এতদিন তদন্ত চলায় আমি চুপ ছিলাম। এখন আমি আদালতে যাবো। আমি নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করতে যা যা করা প্রয়োজন করব।’

পরবর্তী পদক্ষেপের বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এ শিক্ষক আরও বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের চূড়ান্ত অভিভাবক চ্যান্সেলর ও রাষ্ট্রপতির কাছে আমাদের আবেদন, তিনি যেন প্রকৃত সত্য উদঘাটনে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন। আমার বিশ্বাস তিনি নির্দেশ দিলে সত্য ঘটনা, ষড়যন্ত্র সব প্রকাশিত হবে। একই সঙ্গে আমি একটি আইনি পদক্ষেপের মধ্যেও রয়েছি।’

তদন্ত কমিটি শুরু থেকে প্রতিহিংসাপরায়ণ ছিল উল্লেখ করে সামিয়া রহমান বলেন, ‘দীর্ঘ চার বছর তারা তদন্ত ঝুলিয়ে রেখেছিলেন। প্রতিটি মিটিংয়ের পর যেচে পড়ে তদন্ত কমিটির দু-তিনজন সদস্য সাংবাদিকদের ডেকে আমার বিরুদ্ধে বিষাদগার করেছেন তদন্ত শেষ হওয়ার আগেই। তদন্ত শেষ হওয়ার আগেই আমার বিরুদ্ধে রায় তারা তৈরি করে রাখেন।’

তিনি বলেন, ‘ঘটনাটি প্রথম জানতে পারি ২০১৭ সালের ২ ফেব্রুয়ারি। সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন ড. ফরিদউদ্দীনের ফোনের মাধ্যমে। এই বিতর্কিত নিবন্ধটি আমার লেখা নয়। নিবন্ধটি প্রকাশনার জন্য আমি জমা দেইনি। রিভিউয়ারের রিপোর্টে সম্পাদনা পরিষদ থেকে আমার কাছে কখনই পাঠানো হয়নি, এবং কোনো অ্যাকসেপ্টেন্স লেটারও আমার বরাবর প্রেরণ করা হয়নি।’

‘বিতর্কিত নিবন্ধটি যেহেতু আমি জমা দেইনি, সেহেতু জমা দেয়া থেকে ছাপানো পর্যন্ত আমার কোনো দালিলিক সম্পৃক্ততা তদন্ত কমিটি এবং ট্রাইব্যুনালও খুঁজে পায়নি। আমি মারজানকে একটি আইডিয়া পাঠিয়েছিলাম মাত্র।’

সামিয়া রহমান বলেন, ‘আমি জার্নাল থেকে লেখাটি সরিয়ে ফেলার জন্য ডিন অফিসকে লিখিত অনুরোধ করি। তৎকালীন উপাচার্য আরেফিন সিদ্দিক স্যারকে লেখাটি দেখানো হলে তিনি এটা প্লেজারিজম না, সাইটেশন (উদ্ধৃতি হিসেবে ব্যবহার) হয়েছে বলে জানান। এটার দেখার দায়িত্ব রিভিউয়ারের। আমি ডিনকে বিষয়টি সিন্ডিকেটে ওঠানোর জন্য বলি। যখন উপাচার্য পরিবর্তন হলো তখন সেটি নিয়ে নাড়াচাড়া শুরু হলো। আমি বহুবার বলার পরও সেটি সিন্ডিকেটে ওঠেনি। ছয় মাস পর কেন তোলা হলো? শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাটি যাবার কথা নয়, ঈর্ষান্বিত হয়ে বা প্রতিহিংসাবশত কেউ সেটি পাঠিয়েছে।’

ঘটনার বিবরণ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘২০১৭ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আমার নামে অভিযোগ আসে যে, ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে সোশ্যাল সাইন্স জার্নালে আমার আর সৈয়দ মাহফুজুল হক মারজানের নামে প্রকাশিত ‘A New Dimension in Colonialism and Pop Culture : A Case Study of the Cultural Imperialism’ প্রবন্ধটি শিকাগো জার্নালে প্রকাশিত মিশেল ফুকোর ‘The Subject and Power’ রচিত কিছু অংশ প্লেজারিজম (চৌর্যবৃত্তি) করা। সেই জার্নালের অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ অ্যাসিস্ট্যান্ট অ্যালেক্স মার্টিন আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ করার প্রেক্ষিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট ২০১৭ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। শিকাগো জার্নালের যে চিঠির ভিত্তিতে আমার বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটি গঠন করে, দীর্ঘ ৪ বছর ধরে মিডিয়া ট্রায়াল করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আমাকে শাস্তির সুপারিশ করেছে, ডিমোশন দিয়েছে।’

চিঠিটিকে ভুয়া দাবি করে সামিয়া রহমান বলেন, ‘চিঠিটি সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট। শিকাগো জার্নাল থেকে আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ করে এই ধরনের কোনো চিঠি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে আজ পর্যন্ত পাঠানো হয়নি। অ্যালেক্স মার্টিন বলেও শিকাগো জার্নালে কেউ কখনো কাজ করেনি। এমন কি শিকাগো ইউনিভার্সিটি এবং শিকাগো প্রেসেও অ্যালেক্স মার্টিন বলে কেউ নেই। শিকাগো জার্নালের এডিটর ক্রেইগ ওয়াকার নিজে জানিয়েছেন অ্যালেক্স মার্টিন বলে কেউ কখনো শিকাগো জার্নালে ছিল না, কেউ নেই।’

চার বছর ধরে তার নিশ্চুপ থাকার কারণ ব্যাখ্যা করে বলেন, ‘গত চার বছর ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের চাপে ও তদন্তাধীন বিষয় বলে মুখ বন্ধ রাখতে বাধ্য হয়েছিলাম। তার সুযোগে ষড়যন্ত্রকারীরা দিনের পর দিন প্রোপাগান্ডা চালিয়েছে আমার বিরুদ্ধে। অবশ্যই বাংলাদেশের আদালতের উপর সম্পূর্ণ আস্থা রেখে আদালতেই যাচ্ছি। যে লেখাটি আমি লিখিনি, জমা দেইনি, (আইডিয়া দেয়া আর গবেষণা এক বিষয় নয়) ডিন অফিসে আমার কাছ থেকে লেখার কোনো হার্ড বা সফট কপি জমা দেয়ার প্রমাণ তদন্ত কমিটি, ট্রাইব্যুনাল পর্যন্ত পায়নি, রিভিউয়ারের কপিও আমার কাছে আসেনি।’

সংবাদ সম্মেলনে সামিয়া রহমানের সঙ্গে আরও উপস্থিতি ছিলেন- বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর (ভিসি) অধ্যাপক ড. নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ, ব্যারিস্টার ড. তুরিন আফরোজসহ তার পরিবারের সদস্যরা।

(ওএস/এসপি/মার্চ ০১, ২০২১)

পাঠকের মতামত:

১৬ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test