E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

লীনা তাপসী খানের বিরুদ্ধে চৌর্যবৃত্তির অভিযোগ শিল্পী ইফফাত আরার

২০২১ জুন ১৩ ২২:৩১:৪২
লীনা তাপসী খানের বিরুদ্ধে চৌর্যবৃত্তির অভিযোগ শিল্পী ইফফাত আরার

স্টাফ রিপোর্টার : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগীত বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান ও সহযোগী অধ্যাপক ড. মহসীনা আক্তার খানম ওরফে লীনা তাপসী খানের বিরুদ্ধে পিএইচডি গবেষণা চৌর্যবৃত্তির অভিযোগ এনে শাস্তি দাবি করেছেন নায়েমের সাবেক মহাপরিচালক সংগীতশিল্পী অধ্যাপক ইফফাত আরা নার্গিস।

রোববার (১৩ জুন) দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ দাবি করেন।

চৌর্যবৃত্তির অভিযোগ জানিয়ে লিখিত বক্তব্যে অধ্যাপক ইফফাত আরা নার্গিস বলেন, ‘একজন সংগীতশিল্পী হয়ে সংগীত গবেষণায় চৌর্যবৃত্তি আমাকে খুবই আহত করেছে। সংগীত বিষয়ে একজন শিক্ষকের রীতিমত প্রাতিষ্ঠানিক অপকর্ম বিষয়টি তুলে ধরতে বাধ্য করেছে। আমি ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে তার চৌর্যবৃত্তি নিয়ে অভিযোগ তুলছি। সেই শিক্ষকের নাম মহসিনা আক্তার খানম। যিনি লীনা তাপসী খান ছদ্মনামে সংগীত জগতে পরিচিত। তার মতো একজন পরিচিত শিল্পী ও শিক্ষক যখন এরকম চৌর্যবৃত্তির আশ্রয় নিতে পারেন, তখন আমাদের কষ্ট হয়। অভিযোগটি তদন্তপূর্বক শাস্তি প্রদানের দাবিতে আমার এই বিবেকতাড়িত প্রতিবাদ।’

তিনি আরও বলেন, ‘সঙ্গীতের প্রতি প্রবল আগ্রহের কারণে আমি লীনা তাপসী খানের নজরুলসঙ্গীতে রাগের ব্যবহার নামে একটি বই সংগ্রহ করি। কিন্তু বইটি পাঠ করে আমার এর আগে পাঠ করা ৩-৪টি গ্রন্থের সঙ্গে বেশকিছু অংশের হুবহু মিল খুঁজে পাই, যা পরিষ্কার চৌর্যবৃত্তি। যদি এই চুরির ওপর ভিত্তি করে তার পিএইচডি অভিসন্দর্ভ রচিত হয়, তাহলে তদন্তপূর্বক তার ডিগ্রি বাতিল করা হলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধারে ভূমিকা রাখবে।’

লীনা তাপসী খানের শাস্তি দাবি করে ইফফাত আরা নার্গিস বলেন, ‘যদি তার এই পুস্তক পিএইচডির সঙ্গে সম্পর্কিত না হয়, তবে গবেষক হয়ে অন্যের গ্রন্থ থেকে যথাযথ তথ্য সংকেত উল্লেখ না করে নিজের গ্রন্থে ব্যবহার করে যে চৌর্যবৃত্তির আশ্রয় তিনি নিয়েছেন, তার যথাযোগ্য বিচার হওয়া উচিত বলে আমি দাবি করি। এ অভিসন্দর্ভের কারণে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরি পেয়েছেন, এই গ্রন্থের কারণে তিনি পদোন্নতি নিয়েছেন, এই গ্রন্থের জন্য তিনি নজরুল পদকও লাভ করেছেন। অর্থাৎ এই চৌর্যবৃত্তির মাধ্যমে তিনি আর্থিক সুবিধা, পেশাগত সুবিধা ও সামাজিক মর্যাদা গ্রহণ করেছেন, যা দুর্নীতি হিসেবেও গণ্য।’

তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘২৮০ পৃষ্ঠার গ্রন্থে ৮০ পৃষ্ঠার স্বরলিপি স্ক্যান করে ঢোকানো হয়েছে মূল পাঠ হিসেবে, যা অনৈতিক। এই স্বরলিপির স্থান হতে পারতো গ্রন্থের পরিশিষ্টে। মূল পাঠে এই স্বরলিপি কোনোক্রমেই স্থান পাওয়ার কথা নয়। এটিও একধরনের চৌর্যবৃত্তি। দেখা যাচ্ছে যে ২৭৭ পৃষ্ঠার বইয়ের মধ্যে ৮০ (স্বরলিপি)। ২৬ (শ্যামপ্রসাদ) + ৪৬ (কাকলী) +১৭ (পরিশিষ্ট) = ১৬৯ পৃষ্ঠা লীনা তাপসী খানের রচনা নয়। এগুলো অন্যের গ্রন্থ থেকে হুবহু গৃহীত। বাকি ১০১ পৃষ্ঠা লীনা তাপসীর খানের লেখা বলে দাবি করা হয়েছে। তার মধ্যে ইদরিস আলীর গ্রন্থ থেকেও নেওয়া হয়েছে। যথাযথ অনুসন্ধান হলে প্রমাণিত হতে পারে যে ওইসব পৃষ্ঠায় ব্যবহৃত তথ্যও লেখকের নয়। এমতাবস্থায় তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।’

বিষয়টি তদন্ত না করায় ক্ষোভ জানিয়ে সংগীত শিল্পী অধ্যাপক ইফফাত আরা নার্গিস বলেন, ‘আমার অভিযোগটি দীর্ঘদিন ধরে পড়ে আছে। কেবল উপাচার্য নন, দুজন উপ-উপাচার্য এবং সিন্ডিকেটের সকল সদস্যের কাছে অভিযোগ জানানো হয়েছে। কিন্তু তদন্তের কোনো উদ্যোগ পরিলক্ষিত হচ্ছে না, বরং লীনা একজন জাতীয় অধ্যাপকের দোহাই দিয়ে বলে বেড়াচ্ছেন যে, কেউ তার কিছুই করতে পারবে না। এই সংবাদ যাতে প্রচারিত না হয় সেই ব্যাপারে তিনি তদবির করে বেড়াচ্ছেন। বিশ্ববিদ্যালয় কেন সুনির্দিষ্ট অভিযোগের পরেও তদন্ত করছে না, সেই রহস্য বুঝতে পারছি না।’

লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘এসব বিষয় নিয়ে এর আগে পত্রপত্রিকায় লেখালেখি হওয়ায় তিনি ক্ষুব্ধ হয়ে যারা লিখেছেন বা আলোচনা করেছেন তাদের প্রতি আক্রোশ প্রকাশ করেছেন। এ জন্য জাতীয় অধ্যাপকের প্রশ্রয়ে থাকার কারণে আমিও স্বনামে এই অভিযোগ উত্থাপন করতে সাহস পাইনি। কিন্তু এখন মনে হলো, যদি প্রতিবাদ না করি, তবে একটি বড় অপরাধকে প্রকারান্তরে সমর্থন করার অপরাধে আমিও অপরাধী হয়ে পড়ব। তাই আজ আপনাদের সামনে এসেছি।’

এখানে জাতীয় অধ্যাপক বলতে লীনা তাপসী খানের গবেষণা তত্ত্বাবধায়ক অধ্যাপক মোহাম্মদ রফিকুল ইসলামকে বুঝানো হচ্ছে কি-না সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি ‘হ্যাঁ’ বলেন।

সংবাদ সম্মেলন থেকে পাঁচটি দাবি তুলে ধরেন নায়েমের সাবেক এই পরিচালক। দাবিগুলো হলো- অভিযোগ তদন্ত করে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন মোতাবেক তার পিএইচডি ডিগ্রি বাতিল করা; এই ডিগ্রির জন্য প্রাপ্ত সকল সুবিধা প্রত্যাহার করা; ডিগ্রি প্রদানের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের শনাক্ত করে তাদের বিরুদ্ধে দায়িত্ব অবহেলার অভিযোগে শাস্তি প্রদান করা; এই ডিগ্রির উপর রচিত ‘নজরুল সঙ্গীতে রাগের ব্যবহার’ বইটি বাতিলের জন্য কবি নজরুল ইনস্টিটিউট এবং সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় থেকে ব্যবস্থা নেয়া; এই গ্রন্থের জন্য প্রাপ্ত নজরুল পদক বাতিল করে নজরুল পদককে কলঙ্কমুক্ত করা।

এ বিষয়ে উপাচার্য অধ্যাপক আখতারুজ্জামান বলেন, ‘এ ধরনের একটা কথা সাংবাদিকদের কাছ থেকে শুনছিলাম। কথাগুলো যতটা আন্তরিকভাবে, দায়িত্বশীলভাবে আসার কথা ছিল, সেভাবে আসেনি। সাংবাদিকদের এবং বিভিন্ন জায়গায় অভিযোগের কপি দিয়েছেন, তখন আমি বিষয়টি জানতে পারি। দায়িত্বশীল মহল থেকে যথাযথভাবে উপাচার্যকে দিলে, তখন এটা নেয়া যায়।’

তিনি আরও বলেন, ‘অভিযোগকারী (ইফফাত আরা নার্গিস) দায়িত্বশীল পদে ছিলেন বলেও জানতে পেরেছি। উনি আন্তরিক হলে সহায়তা করলে, নিয়মনীতি অনুসরণ করে অভিযোগ করলে, তখন আমরা দেখতে পারতাম যে বিষয়টা কি। অনেক সময় তো বিভিন্ন ধরনের অভিযোগ আসলেই তো তদন্ত করা যায় না। এখানে মানুষের সম্মান-মর্যাদার বিষয় জড়িত থাকে। আর এসব বিষয়ে আমরা খুব কঠোর। অপরাধী যেই হোক না কেন কাউকে ছাড় দেয়া হবে না।’

(ওএস/এসপি/জুন ১৩, ২০২১)

পাঠকের মতামত:

২০ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test