E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

সিংড়ায় নিষিদ্ধ গাইড বইয়ের রমরমা বাণিজ্য, প্রশাসন নিবর

২০১৫ ফেব্রুয়ারি ১২ ১৯:০১:৪৮
সিংড়ায় নিষিদ্ধ গাইড বইয়ের রমরমা বাণিজ্য, প্রশাসন নিবর

নাটোর প্রতিনিধি : সরকার সব ধরণের সহায়ক গাইড বই কেনা-বেচা ও মজুত নিষিদ্ধ করা সত্ত্বেও চলনবিল অধ্যুষিত নাটোরের সিংড়া উপজেলায় ৬ষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের এসব নিষিদ্ধ গাইড বই কিনতে বাধ্য করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। সিংড়া উপজেলা শিক্ষক সমিতি মোটা অংকের কমিশন বাণিজ্যে পুথিনিলয় ও শিশু সংসদ-ঢাকা নামের প্রকাশনীর নিম্নমানের এইসব নিষিদ্ধ গাইড বই এবং বাংলা ও ইংরেজী ব্যাকারণ কিছু শিক্ষকের যোগসাজশে শিক্ষার্থীদের কিনতে বাধ্য করা হচ্ছে। এসব বইয়ের দাম নেওয়া হচ্ছে বেশী। ফলে এই অঞ্চলের নিম্ন আয়ের কৃষক শ্রেণীর অভিভাবকরা নিঃস্ব হচ্ছে। বিষয়টি ওপেন সিক্রেট হলেও প্রশাসনের নজর নেই।

অভিযোগে জানা যায়, উপজেলা শিক্ষক সমিতি ও কয়েকটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান পুথিনিলয় ও শিশু সংসদ প্রকাশনীর নিম্নমানের কমদামি ওইসব গাইড-ব্যাকরণ মোটা অংকের কমিশন নিয়ে শিক্ষার্থীদের কিনতে বাধ্য করছেন। অনুমোদনবিহীন ভুলে ভরা ওইসব গাইড পড়ে শিক্ষার্থীরা হচ্ছে প্রতারিত। তাদের জীবন অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দিয়ে অসাধু শিক্ষকরা হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা। প্রকাশ্যে চলছে নিষিদ্ধ বইয়ের রমরমা ব্যবসা। গাইড বই কিনতে আসা কয়েকজন শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের সাথে আলাপ করে জানা যায় স্কুল থেকে শিক্ষার্থীদের এসব বিশেষ বিশেষ প্রকাশনীর নিষিদ্ধ গাইড কিনতে চাপ দেয়া হচ্ছে।

সরোজমিনে উপজেলার বিভিন্ন লাইব্রেরী ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ঘুরে জানা গেছে, উপজেলা শিক্ষক সমিতি মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে কথিত সবুজ সাথী লাইব্রেরীর নামে এজেন্ট দেখিয়ে পুথিনিলয় ও শিশু সংসদ প্রকাশনীর নিষিদ্ধ গাইড বই ও ব্যাকরণ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও লাইব্রেরীতে সরবরাহ করছে। আর শিক্ষার্থীদের ওই প্রকাশনীর গাইড, ব্যাকরণ কিনতে বাধ্য করা হচ্ছে। দীর্ঘ দিন ধরে স্থানীয় বাজারে প্রকাশ্যে এসব নিষিদ্ধ গাইড বই বিক্রি হচ্ছে।

স্থানীয় কয়েকজন পুস্তক বিক্রেতা (লইব্রেরী মালিক) জানান, চলতি বছর ওই প্রকাশনীর সাথে শিক্ষক সমিতির নেতাদের প্রায় ২০ লাখ টাকা লেনদেন হয়েছে বলে তারা শুনেছেন। সমিতির বিতরণকৃত বুকলিষ্ট অনুযায়ী পুথিনিলয় প্রকাশনীর গাইড-বই শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দিচ্ছেন।

এ অবৈধ গাইড বই বাজারজাতের মাধ্যমে বাণিজ্যিক ফায়দা হাসিল করছে স্থানীয় শিক্ষক সমিতির নেতারা ও কিছু অসাধু শিক্ষক। নিষিদ্ধ গাইড বই বাজারজাত বন্ধে কোন প্রশাসনিক পদক্ষেপ না থাকায় নির্বিঘেœ সিংড়া দমদমা পাইলট স্কুল এন্ড কলেজ, বাদোপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়, ডাঙ্গাপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়, নলবাতা উচ্চ বিদ্যালয়, পাকুরিয়া, লালোর, সাতপুকুরিয়া, স্থাপনদীঘি, ডাহিয়া, বিয়াশ,কালিগঞ্জ, জোড় মল্লিকা নিংগইন উচ্চ বিদ্যালয়সহ উপজেলার প্রায় ২০টির অধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের শিক্ষক সমিতির নির্ধারিত পুথিনিলয় প্রকাশনীর নিম্নমানের গাইড বই কিনতে নির্দেশ দিয়েছেন বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা।

উপজেলা শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আইয়ুব আলী জানান, তিনি অবসর গ্রহণ করেছেন। বই-গাইডের সহ সকল বিষয়ে সমিতির সহকারী সম্পাদক আফসার আলী সাহেব দেখা শোনা করেন।

উপজেলা শিক্ষক সমিতির সহকারী সম্পাদক ও সবুজ সাথী লাইব্রেরীর মালিক আফসার আলী জানান, শিক্ষার্থীদের সহায়ক পাঠ্য পুস্তক হিসেবে বাংলা ব্যাকারন ও ইংরেজী গ্রামার বই কেনার পরামর্শ দেওয়া হয়। তবে কোন প্রকাশনীর তা উলে¬খ করা হয়না। কোন কোন শিক্ষার্থী ভাল ফলাফলের জন্য একাধিক প্রকাশনীর গাইড বই কিনে থাকে। কাউকে বাধ্য করা এবং আর্থিক সুবিধা নেওয়ার অভিযোগ সঠিক নয়।

উপজেলা শিক্ষক সমিতির সভাপতি আনোয়ার হোসেন এধরনের অভিযোগকে ভিত্তিহীন দাবী করে জানান,গোটা জেলায় সহায়ক পাঠ্য পুস্তক হিসেবে শিক্ষার্থীরা গাইড বই কিনে থাকে।

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মুসহাক আলী জানান, নিষিদ্ধ গাইড বই কিনতে বাধ্য করা একটা অনৈতিক কাজ। বিষয়টি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার সালমা খাতুন জানান, বিষয়টি সম্পর্কে তাদের জানা নেই। তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দেন তিনি।

(এমআর/এএস/ফেব্রুয়ারি ১২, ২০১৫)

পাঠকের মতামত:

০৯ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test