E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

ম্যালিগন্যান্ট ম্যালেরিয়াও এবার রুখে দেয়ার আশা

২০১৮ ডিসেম্বর ২০ ১৭:১৯:১৯
ম্যালিগন্যান্ট ম্যালেরিয়াও এবার রুখে দেয়ার আশা

স্বাস্থ্য ডেস্ক : ম্যালিগন্যান্ট ম্যালেরিয়ায় মৃত্যুর ভয়কে দূরে ঠেলে দেয়ার আশা দেখাচ্ছে নতুন একটি গবেষণা। এ গবেষণায় দেখানো হয়েছে, মশা কামড়ালে তার লালার সঙ্গে ঠিক কোন পথে শরীরে ঢোকে ম্যালেরিয়ার বাহক এককোষী জীব বা প্রোটোজোয়া প্লাসমোডিয়াম ফ্যালসিপেরাম। সেই এককোষী জীব কিভাবে দেহে ছড়িয়ে পড়ে কাঁপুনি দিয়ে প্রবল জ্বর ডেকে আনে তাও দেখানো হয়েছে এই গবেষণায়।

এর ফলে, ম্যালেরিয়া প্রতিরোধে অদূর ভবিষ্যতে অত্যন্ত সফল টিকা বাজারে আসতে পারে বলে আশা দেখছেন বিশেষজ্ঞরা। গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হয়েছে আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান-জার্নাল ‘নেচার’-এর গত ১২ ডিসেম্বর সংখ্যায়।

মেলবোর্নের ওয়াল্টার অ্যান্ড এলিজা হল ইনস্টিটিউটের দুই অধ্যাপক অ্যালান কাওম্যান ও উইলসন ওং-এর নেতৃত্বে এই গবেষণা চালানো হয়েছে। এ রোগের পুরোপুরি সফল টিকা বা ওষুধ এখনও আবিষ্কৃত হয়নি বলেই গোটা বিশ্বের ম্যালেরিয়া পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগজনক রিপোর্ট দিতে হয় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে (হু)।

গবেষণা প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে, গত বছর বিশ্বে ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন ২১ কোটি ৯০ লাখ মানুষ। মৃতের সংখ্যা ৪ লাখ ৩৫ হাজার। ভারত ও আফ্রিকার দেশগুলোর অবস্থা রীতিমতো ভয়াবহ। গত বছর ভারতে ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন ৮ লাখ ৪৪ হাজার ৫৫৮ জন মানুষ। মৃতের সংখ্যা ১৯৪।

ওই গবেষক দলে থাকা দুই ভারতীয় বিজ্ঞানী অনন্ত শ্রীবাস্তব ও অনিন্দিতা ঘোষ সেন ‘আনন্দবাজার ডিজিটাল’কে জানিয়েছেন, ওই চাবিটা রয়েছে এককোষী জীব প্লাসমোডিয়াম ফ্যালসিপেরামের দেহের বাইরের দেওয়ালে থাকা তিনটি প্রোটিনের হাতে। সেই প্রোটিনগুলো হলো ‘আরএইচ-৫’, ‘সিওয়াই-আরপিএ’ এবং ‘আরআইপিআর’।

এরাই মানুষের রক্তের লোহিত কণিকার (আরবিসি) কোষের বাইরের দেওয়ালে থাকা ‘তালা’টা খুলে ফেলে। সেই তালাটাও একটি প্রোটিন। তার নাম- ‘বাসিজিন’। প্রথমে লোহিত কণিকার বাইরের দেওয়ালে গিয়ে লেগে থাকে (অ্যাটাচমেন্ট) ওই এককোষী জীব। হাতে চাবি নিয়ে তালাটা খুঁজতে থাকে।

এত দিন জানা ছিল, এককোষী জীবের বাইরের দেওয়ালে থাকা তিনটি প্রোটিনই এক সঙ্গে তালাটা খুলে ফেলে। কিন্তু ক্রায়ো-ইলেকট্রন মাইক্রোস্কোপে এই প্রথম দেখা গেল, মূলত একটি প্রোটিনের হাতেই থাকে সেই চাবি। তার নাম- ‘আরএইচ-৫’। তালাটা খুলতে সুবিধা হবে বলে সে সঙ্গে নেয় আরও একটি প্রোটিনকে। তার নাম- ‘সিওয়াই-আরপিএ’। আর তালা খোলার কাজটা যাতে আরও তাড়াতাড়ি হয়, তার জন্য ‘তেল’ জোগায় অন্য প্রোটিনটি। যার নাম- ‘আরআইপিআর’। আসলে তালা খোলার ক্ষেত্রে অনেকটা অণুঘটকের মতো কাজ করে প্রোটিন ‘আরআইপিআর’।

এও দেখা গেছে, আমাদের লোহিত রক্ত কণিকার বাইরের দেওয়ালের যেকোনো জায়গায় গেলেই ঢুকতে পারে না ম্যালেরিয়ার জন্য দায়ী ওই এককোষী জীব। ‘তালা’টা থাকে লোহিত কণিকার বাইরের দেওয়ালের ‘জেকে-ওয়ান পয়েন্ট’-এ। সেখানেই থাকে বাসিজিন প্রোটিন। ম্যালেরিয়ার জন্য দায়ী এককোষী জীবকে ঢুকে পড়ার জন্য ওই বাসিজিন প্রোটিনই দরজাটা খুলে দেয়।

এ বিষয়ে জানাশোনা রয়েছে এমন একজন বলছেন, জন্মের পর এককোষী জীবগুলো তাদের জীবন চক্রের একটা দশায় পৌঁছয়। যার নাম- ‘স্পোরোজয়েট’। মশার মাধ্যমে যখন মানুষের শরীরে ঢোকে ওই প্রোটোজোয়ারা, তখন তারা থাকে ‘স্পোরোজয়েট’ দশাতেই। মানুষকে সংক্রমিত করার সময়েও প্রোটোজোয়ারা থাকে একই দশায়। তারপর সেই স্পোরোজয়েট রক্তস্রোতে ভেসে সোজা চলে যায় মানুষের লিভারে। তখনও ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয় না মানুষ। লিভারে গিয়ে তারা তাদের দৈহিক, চারিত্রিক বৈশিষ্টগুলো দ্রুত বদলে ফেলে। তখন তারা থাকে প্রোফোজয়েট দশায়। পরে পৌঁছায় তাদের জীবন চক্রের আরও একটি দশায়। তার নাম- ‘মেরোজয়েট’ দশা। ওই সময় তাদের বংশবৃদ্ধির ফলে, অত্যন্ত চাপে লিভারের কোষ ফেটে যায়। তখন এককোষী জীবগুলো ফের ঢুকে পড়ে রক্তস্রোতে। লিভার থেকে বেরিয়ে ফের রক্তস্রোতে ঢুকে পড়া পর্যন্ত এককোষী জীবগুলোর দশাকে বলা হয়, ট্রোপোজয়েট। সেখানে গিয়ে তারা লোহিত রক্ত কণিকায় ঢুকে পড়ে। তারপর শুরু করে খুব দ্রুত বংশবৃদ্ধি। তার ফলে, চাপ পড়ে লোহিত রক্ত কণিকার দেওয়ালে। তখন তা ফেটে যায়। লোহিত রক্ত কণিকার মধ্য ঢুকে এককোষী জীবগুলো দ্রুত বংশবৃদ্ধি শুরু করলেই মানুষের কাঁপুনি দিয়ে জ্বর আসতে শুরু করে। ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয় মানুষ।

তিনি আরও জানিয়েছেন, সাতের দশক থেকেই বাজারে এসেছে ম্যালেরিয়ার বিভিন্ন টিকা এবং ওষুধ। প্রথমে সেই টিকা বানানো হয়েছিল এমনভাবে যাতে ওই এককোষী জীবের স্পোরোজয়েট দশা থেকেই তাদের জব্দ করা যায়। কিন্তু সেই সব টিকার সাফল্যের হার বেশ ভালো হলেও তার উপাদান জোগাড় করাটা খুবই কষ্টসাধ্য। তাই তা ব্যয়সাপেক্ষও। ফলে, সাফল্যের হার বেশি হলেও ম্যালেরিয়া নির্মূল করতে তা তেমন গ্রহণযোগ্য হয়ে উঠতে পারেনি।

তারপর টিকা বানানো হয় যাতে মেরোজয়েট, ট্রোপোজয়েট দশাতেও ম্যালেরিয়ার জন্য দায়ী এককোষী জীবগুলোকে অকেজো করে দেওয়া যায়। তবে তার সাফল্যের হার কম ছিল। তাই গত শতাব্দীর শেষ দিক থেকেই চালু হয় ‘ককটেল টিকা’। তার সাফল্যের হার প্রায় ৩০/৩৫ শতাংশ।

(ওএস/এসপি/ডিসেম্বর ২০, ২০১৮)

পাঠকের মতামত:

২৬ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test