E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

দেশের পৌনে ২ কোটি মানুষ ম্যালেরিয়া ঝুঁকিতে

২০১৯ এপ্রিল ১৮ ১৭:৩৬:৪৮
দেশের পৌনে ২ কোটি মানুষ ম্যালেরিয়া ঝুঁকিতে

স্টাফ রিপোর্টার : দেশের ১৩ জেলায় ম্যালেরিয়ার প্রাদুর্ভাব রয়েছে। এর ৭১টি উপজেলার প্রায় এক কোটি ৮০ লাখ মানুষ ম্যালেরিয়া রোগের ঝুকিতে রয়েছেন। এমনকি দেশের প্রায় ৯১ শতাংশ ম্যালেরিয়া রোগী এই এলাকা থেকেই আক্রান্ত হন।

ঝুঁকিপূর্ণ এসব এলাকাগুলোর মধ্যে আবার রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি এবং বান্দরবান- পার্বত্য তিন জেলায় ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত এবং মৃত্যুর হার সর্বাধিক।

এরপর চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার জেলাতেও যথেষ্ট প্রকোপ রয়েছে। সবশেষে হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার, সিলেট, সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনা, ময়মনসিংহ, শেরপুর ও কুড়িগ্রাম জেলাতে তুলনামূলক কম হলেও ম্যালেরিয়ার প্রকোপ রয়েছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, শুধুমাত্র সচেতনতার মাধ্যমে এ রোগের প্রতিরোধ অনেকাংশে সম্ভব। তাই এ বিষয়ে এসব এলাকাসহ সারাদেশের মানুষকে মশা থেকে সাবধানতামূলক কার্যক্রমের মাধ্যমে ম্যালেরিয়ার প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছেন তারা।

বৃহস্পতিবার (১৮ এপ্রিল) রাজধানীর মহাখলীতে স্বাস্থ্য অধিদফতরের ডা. শহীদ মিলন ভবনে ‘বিশ্ব ম্যালেরিয়া দিবস’ উপলক্ষে আয়োজিত গণমাধ্যমে অবহিতকরণ সভায় এমন তথ্য তুলে ধরা হয়।

২৫ এপ্রিল বিশ্ব ম্যালেরিয়া দিবস সামনে রেখে স্বাস্থ্য অধিদফতর, ব্র্যাক ও অন্যান্য সহযোগী সংস্থা অনুষ্ঠানটির আয়োজন করে। এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য বিষয় থাকছে- ‘আমিই করবো ম্যালেরিয়া নির্মূল’।

প্রতিপাদ্য বিষয়টিকে উল্লেখ করে সভায় বক্তারা বলেন, এই আমিকে, আমরাতে রূপান্তর করে বলতে হবে- আমরাই পারবো ম্যালেরিয়া নির্মূল করতে। এ জন্য আমাদের সবাইকে সচেতন হতে হবে। সবাইকে সচেতন করতে হবে। আমাদের দেশে ম্যালেরিয়ার বিভিন্ন প্রকারভেদের মধ্যে ফ্যালসিপেরাম ম্যালেরিয়ার সংখ্যাই বেশি। ভারত-মিয়ানমারে বেশি ভাইভেক্স ম্যালেরিয়া। তবে দেশে রোহিঙ্গা ক্যাম্প ছাড়াও অন্যান্য জায়গা, বিশেষ করে ভারতের ত্রিপুরা, মিজোরাম ও মেঘালয় এলাকা থেকে এই ভাইভেক্স বা মারাত্মক ম্যালেরিয়া বাংলাদেশে ছড়াচ্ছে। তাই আমরা শিগগির ভারতের সঙ্গে একটি বৈঠকে বসবো, যাতে এই এলাকাগুলোতে ম্যালেরিয়া নির্মূল কার্যক্রম ভালোভাবে গ্রহণ করা হয়। তা না হলে আমাদের লক্ষ্য অনুসারে ২০৩০ সালের মধ্যে দেশ থেকে ম্যালেরিয়া নির্মূল করা সম্ভব হবে না।

দেশের প্রান্তিক অঞ্চলে ম্যালেরিয়ার ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যসেবা দেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক অবকাঠামো নেই উল্লেখ করে বক্তারা বলেন, দেশের পিছিয়ে থাকা জনগোষ্ঠীকে বাদ দিয়ে ম্যালেরিয়া নির্মূল করা সম্ভব নয়। আর নির্মূল করা না গেলে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব নয়। যে এলাকাগুলোতে ম্যালেরিয়ার প্রাদুর্ভাব বেশি, সে এলাকাগুলোতে স্বাস্থ্যসেবা দেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক অবকাঠামো নেই। আবার ১৩টি জেলায় একসঙ্গে ম্যালেরিয়া নির্মূল করা সম্ভব না। পরিকল্পনা মাফিক কাজ করতে হবে। কেননা, এসব এলাকার ভৌগলিক প্রভাব ও ম্যালেরিয়ার প্রাদুর্ভাবের মাত্রা ভিন্ন।

২০৩০ সালের মধ্যে ম্যালেরিয়া নির্মূল করা সম্ভব হবে উল্লেখ করে আরও জানানো হয়, আগে ৬৪টি জেলায় ম্যালেরিয়ার ঝুঁকি ছিল। এখন ৫১টি জেলায় কমে মাত্র ১৩টিতে রয়েছে। আমাদের চলমান কার্যক্রম অনুসারে নির্মূলের ব্যাপারে আমরা যথেষ্ট আশাবাদী। এ পর্যন্ত ম্যালেরিয়া প্রবণ এলাকায় ১০ দশমিক ৬৯ মিলিয়ন দীর্ঘস্থায়ী কীটনাশকযুক্ত মশারি বিতরণ করা হয়েছে। ২০১৮ সালে ১০ হাজার ৫২৩ জন ম্যালেরিয়া রোগী ছিলেন, যেখানে সাতজন মৃত্যুবরণ করেন।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বক্তারা বলেন, ২০১৪ সালে হঠাৎ ম্যালেরিয়ার প্রকোপ বেড়ে যাওয়ার পেছনে ভারী বর্ষণের অভাব দায়ী ছিল। সে বছর বেশি বৃষ্টিপাত হয়, কিন্তু ভারী বর্ষণ হয়নি। তাই মশা বেশি জন্মেছিল। অর্থাৎ এ রোগের ক্ষেত্রে প্রাকৃতিক পরিস্থিতিই বেশি দায়ী থাকে।

অধিদফতরের ম্যালেরিয়া নির্মূল কার্যক্রমের এপিডেমিওলজিস্ট ডা. মশিউর রহমান বিটুর সঞ্চালনায় ও রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক অধ্যাপক ডা. সানিয়া তাহমিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা।

অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- স্বাস্থ্য অধিদফতরের সাবেক মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এমএ ফয়েজ, ব্র্যাকের কমিউনিকেবল ডিজিজ ও ওয়াশ কর্মসূচির পরিচালক ড. আকরামুল ইসলাম, ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশনের (ডব্লিউএইচও) সাবেক কর্মকর্তা ডা. এএম বাঙালী, ডব্লিউএইচও’র রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার মেডিকেল অফিসার ডা. মায়া সেপাল, জাতীয় কনসালট্যান্ট অধ্যাপক বেনজীর আহমেদ, অধিদফতরের জাতীয় ম্যালেরিয়া নির্মূল ও এডিসবাহিত রোগ নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির ডেপুটি প্রোগ্রাম ম্যানেজার ডা. এমএম আক্তারুজ্জামান প্রমুখ।

সভায় জানানো হয়, ২৫ এপ্রিল দেশের প্রতিটি জেলায় এই দিবস পালন করা হবে। এ দিন সারাদেশে বর্ণাঢ্য র‍্যালি, আলোচনা সভা, স্বাস্থ্য ক্যাম্পসহ বিভিন্ন কার্যক্রমের মাধ্যমে সবাইকে সচেতন করা হবে।

(ওএস/এসপি/এপ্রিল ১৮, ২০১৯)

পাঠকের মতামত:

২১ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test