E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

উপজাতিরা তো সাপ খায়, তাহলে কি বাংলাদেশে ছড়াবে করোনাভাইরাস?

২০২০ জানুয়ারি ২৮ ১৫:০৫:৫২
উপজাতিরা তো সাপ খায়, তাহলে কি বাংলাদেশে ছড়াবে করোনাভাইরাস?

স্টাফ রিপোর্টার : চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহরে প্রথম করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। বর্তমানে অস্ট্রেলিয়া, নেপাল, মালয়েশিয়া, ভিয়েতনাম, সিঙ্গাপুর, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, তাইওয়ান, থাইল্যান্ড, ফ্রান্স এবং যুক্তরাষ্ট্রেও লোকজন এই ভাইরাসে আক্রান্ত হচ্ছে। বলা হচ্ছে, সামুদ্রিক মাছের বাজার থেকেই এ রোগ ছড়িয়ে পড়েছে। অর্থাৎ, করোনাভাইরাসের কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে চীনের মানুষের খাদ্যাভাস।

এই খাদ্যাভাসের দিকে লক্ষ্য রেখে কেউ কেউ প্রশ্ন তুলেছেন, বাংলাদেশে বসবাসরত উপজাতিরা যেহেতু সাপ খায়, তাই তাদের করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ার সম্ভাবনা আছে কি না, তা নিয়ে গবেষণা করা দরকার। এমতাবস্থায় বিশেষজ্ঞরা নিজ নিজ জায়গা থেকে সচেতন হতে বলেছেন।

মঙ্গলবার (২৮ জানুয়ারি) বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) ‘ইমার্জেন্সি অব এ নিউ করোনাভাইরাস’ শীর্ষক জরুরি সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে বিএসএমএমইউর বিভিন্ন বিভাগের বিশেষজ্ঞ ও অধ্যাপকরা ভাইরাসটি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন।

সেমিনারে বিএসএমএমইউয়ের বক্ষব্যাধি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. শামীম আহমেদ করোনাভাইরাসের লক্ষণ, উপসর্গ, জটিলতা ও চিকিৎসা নিয়ে কথা বলেন।

ডা. শামীম আহমেদ বলেন, চীনের উহান শহরের সি-ফুড (সামুদ্রিক খাবার) মার্কেট থেকে পশু-পাখি থেকে এই ভাইরাসের উৎপত্তি বলে ধারণা করা হচ্ছে। কারণ যারা এই রোগে প্রথম দিকে আক্রান্ত হন তারা সবাই চাইনিজ নিউইয়ারের প্রস্তুতির জন্য কেনাকাটা করতে ওই সি-ফুড মার্কেটে গিয়েছিলেন। এই ভাইরাসে নিহত প্রথম ব্যক্তি সেই সি-ফুড মার্কেটের একটি দোকানের কর্মচারী ছিলেন।’

তিনি বলেন, ‘কোবরা সাপ নাকি বাদুরের মাধ্যমে ভাইরাসটি ছড়িয়েছে-এ নিয়ে এখনও দুই রকম মত রয়েছে। তবে পশু-পাখি বা স্তন্যপায়ী জন্তু থেকে ছড়িয়েছে-এটা মোটামুটি নিশ্চিত। তবে বর্তমানে মানুষ থেকে মানুষে হাঁচি-কাশি, শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ছে।’

করোনাভাইরাসের লক্ষণ প্রসঙ্গে বিএসএমএমইউয়ের এই চিকিৎসক বলেন, ‘এই ভাইরাসে আক্রান্তদের লক্ষণ হচ্ছে জ্বর, সর্দি, শরীরে দুর্বলতা, ডায়রিয়া। এ ভাইরাসে নিউমোনিয়া হয়ে ফুসফুস অকেজো হয়ে যায়। পরবর্তীতে কিডনি লিভার অকেজো হয়ে যায়। এতে রোগীর মৃত্যুও হতে পারে।’

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর নির্দিষ্ট চিকিৎসা না থাকলেও জ্বরের জন্য প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধ সেবন করা যেতে পারে বলে পরামর্শ দিয়েছেন ডা. শামীম আহমেদ। তিনি বলেন, ‘তবে আক্রান্তদের অবশ্যই আইসোলেটেড (আবদ্ধ ঘরে, আলাদা) থাকতে হবে। পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে। সম্প্রতি চীন থেকে যারা ফিরে এসেছেন তাদের কারও যদি এমন লক্ষণ থাকে, তাহলে তাদের কাছ থেকে অধিক সতর্ক থাকতে হবে।’ এ ভাইরাস প্রতিরোধে তিনি সবসময় হাত ধুয়ে পরিষ্কার রাখা ও নাকে মাস্ক পড়ার পরামর্শ দেন।

সেমিনারে একজন প্রশ্ন করেন, ‘বাংলাদেশে বসবাসরত উপজাতিরা সাপ খায়। তাদের করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা আছে কি না।’ উত্তরে ডা. শামীম আহমেদ বলেন, ‘চীনের গবেষকরা বলছেন, একটি সাপের মাধ্যমে এ ভাইরাস ছড়িয়েছে। আবার অনেকে বলছেন, যে সাপের মাধ্যমে করোনাভাইরাস ছড়িয়েছে, সেই সাপটি ভাইরাসে আক্রান্ত একটি বাদুর খেয়েছিল। তা যা-ই হোক, আমাদের দেশে এসব বিষয়ে সবাইকে সচেতন হতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘করোনাভাইরাস থেকে আরও বিপজ্জনক হচ্ছে নিপা ভাইরাস। এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে অনেকেই মারা যাচ্ছেন। এটি নিয়েও আমাদের সচেতন থাকতে হবে।’

বিএসএমএমইউয়ের রেসপিরেটরি মেডিসিন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. এ কে এম মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘এই রোগের প্রতিরোধ হিসেবে চীন থেকে কেউ এলে তাকে ১৪ দিন আইসোলেটেডে রাখতে হবে। এছাড়া কারও সঙ্গে দেখা হলে হ্যান্ডশেক, জড়াজড়ি, কোলাকুলির বদলে হাই-হ্যালো বলতে হবে। সবসময় হাত ধুতে হবে, এমনকি নাকে হাত দেয়ার সময়ও হাত ধুয়ে নিতে হবে।’

সেমিনারে বিএসএমএমইউয়ের অভ্যন্তরীণ মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. নাজমুল হাসান বলেন, ‘এই ভাইরাস প্রতিরোধে নিয়মিত হাত পরিষ্কার রাখতে হবে। মুখ ঢেকে হাঁচি, কাশি দিতে হবে। দেশের বাইরে থেকে কেউ এলে প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে যাওয়া যাবে না। পোষ্য প্রাণীদের সঙ্গে থাকার ক্ষেত্রেও সাবধান থাকতে হবে।’

বাংলাদেশ এখনও পর্যন্ত করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী পাওয়া যায়নি বলে নিশ্চিত করেন বিএসএমএমইউয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. কনক কান্তি বড়ুয়া। তবে তিনি বলেন, ‘আমরা যেগুলো শুনলাম সেগুলো মেনে চলতে হবে। মনে রাখতে হবে, প্রিভেনশন ইজ বেটার দ্যান কিওর।’

(ওএস/এসপি/জানুয়ারি ২৮, ২০২০)

পাঠকের মতামত:

২৬ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test