E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

আক্কেল দাঁতের ব্যথা ও প্রতিকার

২০২১ ডিসেম্বর ১৪ ১১:৪৯:৪৬
আক্কেল দাঁতের ব্যথা ও প্রতিকার

ডা. পূজা সাহা



আক্কেল দাঁত ওঠার অভিজ্ঞতা একটা বয়সের পর কম বেশি সবারই হয়। প্রচণ্ড ব্যথা সহ্য করতে হয় এই সময়টাতে। সেই ব্যথা থাকে কয়েকদিন পর্যন্ত! অনেকে এই ব্যাথা সহ্য করতে না পেরে ব্যাথানাশক ওষুধ সেবন করে।

আক্কেল দাঁত কী?
মানুষের মুখগহ্বরের ওপরের ও নিচের চোয়ালের সবচেয়ে পেছনে বা শেষে উভয় দিকে একটি করে মোট চারটি দাঁত ওঠে আর এই দাঁতগুলোকে আক্কেল বা উইজডম টিথ বলে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ১৭ থেকে ২১ বছর বয়সের মধ্যে এই দাঁত উঠে থাকে।

আক্কেল দাঁত ওঠার সময় ব্যথা হয় কেন?
যখন আক্কেল দাঁত ওঠে তখন প্রচণ্ড ব্যথা হয়। ব্যথায় মুখের ভেতরসহ গালও ফুলে যায়। অন্য দাঁত উঠার সময় এত ব্যাথা হয় না। কারণ দুধের দাঁত পড়ার সঙ্গে সঙ্গে নিচ থেকে আরেকটি দাঁত আসতে থাকে। ফলে ওইটির একটি জায়গা থাকে। তবে আক্কেল দাঁতগুলো ১৭ বছরের পরে ওঠে। তখন আমাদের মাড়ির টিস্যু একটু পুরু ও শক্ত হয়ে যায়। দাঁতটি আসতে হলে তো মাড়িকে একটু চিরে উঠতে হবে। ফলে ওঠার সময় চাপ হয় এবং মাড়িকে একটু কেটে কেটে সে বের হয়। সে জন্য এই ব্যথা থাকে।

আক্কেল দাঁত কখনো আংশিকভাবে, কখনো আঁকাবাঁকা হয়ে ওঠে, কখনো উঠতেই পারে না; মাড়ির নিচে লুকিয়ে থাকে। ফলে আক্কেল দাঁতের মাড়ির টিস্যুর নিচে খাবার জমে ব্যাকটেরিয়া প্রবেশের কারণে মাড়িতে ইনফেকশন হতে পারে। চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় একে পেরিকরোনাইটিস বলে। এই ইনফেকশনের ফলে তীব্র ব্যথা হয়, মাড়ি ও গাল ফুলে যায়। মুখ হাঁ করতে অসুবিধা হয়। মুখে দুর্গন্ধ হয় এবং কারো কারো জ্বরও হতে পারে।

ব্যথা কমানোর ঘরোয়া উপায় :
হালকা গরম পানিতে এক চিমটি লবণ দিয়ে কুলকুচি করুন। দাঁত ব্যথা কমাতে লবণ পানি দিয়ে কুলি করা উপকারী।

ক্লোভ অয়েল দাঁতের ব্যথা উপশম করে। এটি ব্যাকটেরিয়ার সঙ্গে লড়াই করতে সহায়তা করে এবং সংক্রমণের ঝুঁকি দূর করে। ব্যথা উপশম করতে লবঙ্গ তেল বা ছয়টি লবঙ্গের কুঁড়ি পানি ফোটান এবং মাড়িতে ম্যাসাজ করুন। এতে ব্যাথা কিছুক্ষনের জন্যে কমে থাকবে।

একসময় দাঁতের কোনো সমস্যা হলেই মানুষ ফেলে দিত। তবে এখন আমরা দন্ত চিকিৎসকরা দাঁত না ফেলে উপযুক্ত চিকিৎসা করে রক্ষা করার ব্যাপারে মানুষকে আগ্রহী করে থাকি। তবে আক্কেল দাঁতের বেলায় কোনো সমস্যা হলে আমরা ফেলে দিতে বলি -এর কারণ হলো আমাদের প্রধান যে খাবারের দাঁত, যাকে চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় মোলার টিথ বলি, আক্কেল দাঁত সেই মোলার তিনটি দাঁতের মধ্যে একটি। তবে এগুলো আসলে আমাদের খাবার চিবানোর কাজে লাগছে না। সামনের যে মোলার টিথগুলো আছে, সেগুলোই আমাদের খাওয়ার কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে।

এই দাঁত মাঝেমধ্যে যেহেতু সমস্যা তৈরি করে এবং রোগী ও আমাদের জন্য উপকারী কিছু নয় এ জন্যই আমরা বলি এটি ফেলে দেওয়ার জন্য। অনেক ভেতরে হওয়ায় এর রুট ক্যানেল চিকিৎসাও জটিল। তবে দাঁতটা আমরা রক্ষা করতে চাই না, তা নয়। অনেক সময় রোগীর যদি মুখের আকৃতি ভালো থাকে, রক্ষণাবেক্ষণ পদ্ধতিতে রেখে দেওয়ার চেষ্টা করি। অনেক রোগী আছে, বলে আমি ফেলব না, তখন রুট ক্যানেল বা আরো অনেক পদ্ধতি আছে—সেগুলো দিয়ে রেখে দেওয়ার চেষ্টা করি। তবে মূলত যেহেতু এটা আমাদের খাওয়ার কাজে কোনো সাহায্য করছে না, তাই একে ফেলে দিতে বলি।

আক্কেল দাঁতে বারবার ব্যথা হচ্ছে, কমে যাচ্ছে—এতে অনেকেই একে এড়িয়ে যান। ভাবেন, এটি কোনো বিষয় নয়। তবে দাঁতটি যেহেতু একটি হাড়ের মধ্যে রয়েছে, সেই সংক্রমণ বাড়তে বাড়তে হাড়টি ক্ষয় হয়ে গলার দিকে ছড়িয়ে পড়তে পারে। এটি অনেক সময় কেবল ওই জায়গা নয়, সামনে-পেছনে এমনভাবে হয়ে আসে, যাকে আমরা জীবনঝুঁকির কারণ হিসেবে বলি। এ ধরনের রোগী এতটাই অস্থিতিশীল হয় যে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তাকে সার্জারি করাতে হয়। তখন তার জীবন বাঁচানো একটু ঝুঁকির হয়ে যায়। তাই অবহেলা না করে সময় থাকতে এ ধরনের সমস্যা হলে রোগীকে প্রথমে ম্যাক্সিলোফেসিয়াল সার্জনদের কাছে যেতে হবে।

লেখক : ডেন্টাল সার্জন, সিকদার ডেন্টাল কেয়ার, ঢাকা।

পাঠকের মতামত:

০৬ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test