E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

শিশুর দাঁতের যত্ন

২০২১ ডিসেম্বর ২৫ ১৬:১৬:০৩
শিশুর দাঁতের যত্ন

ডা. পূজা সাহা


প্রায়ই বাচ্চাদের অভিভাবকরা আমাকে জিজ্ঞাসা করেন কিভাবে বাচ্চাদের দাঁতের যত্ন নিতে হয়। অনেকসময় দেখা যায় বাচ্চারা দাঁতের ব্যাথায় কিছু খেতে পারছে না তখন তাদের অভিভাবকরা আমাদের শরণাপন্ন হয়! একটু সচেতন হলেই এই ব্যাথাটা বাচ্চাদের সহ্য করতে হয় না! 

বাচ্চাদের দুধ দাঁত (deciduous teeth) থাকে ২০ টি যা জন্মের ৬ মাস থেকে ২.৫ বছর পর্যন্ত উঠে থাকে! অনেকের দেরী করে উঠে! এটা সম্পূর্ণ নির্ভর করে বাচ্চা বুকের দুধ খাচ্ছে নাকি ফিডার খাচ্ছে! বুকের দুধ খেলে বাচ্চাদের মুখের একটা ব্যায়াম হওয়ায় চোয়াল সুগঠিত হয় এজন্যে ওদের দাঁত আগে আসে! ফিডার খাওয়া বাচ্চাদের অনেকসময় প্রথম দাঁত ১বছর পরেও উঠে! এতে ভয় পাওয়ার কিছু নেই! ৬ বছর থেকে ১৪ বছর পর্যন্ত দুধ দাঁত ক্রমানুসারে পরে আসল/স্থায়ী দাঁত উঠে।

বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অভিভাবকরা আসেন শিশুর দাঁতের অত্যাধিক ক্ষয় কিংবা গর্ত নিয়ে, যাকে আমরা বলি ডেন্টাল ক্যারিজ। আমাদের দেশে দাঁতের ক্ষয় বা গর্ত হওয়াকে অনেকেই দাঁতের পোকা হওয়া বলে। আমাদের দাঁতের উপরিভাগের শক্ত আবরনকে দাঁতের এনামেল বলা হয়। মুলত চিনি বা মিষ্টিজাতীয় খাদ্য মুখের ভেতরে একধরনের জীবাণুর সঙ্গে মিশে অ্যাসিড তৈরি করে। এই অ্যাসিড দাঁতের ওপরের শক্ত আবরন বা এনামেলকে ক্ষয় করে এবং পরে গর্তের সৃষ্টি করে। বাচ্চাদের দাঁতের ব্যথা হওয়ার অনেক বড় কারন দাঁতের ক্ষয় ।

বিভিন্ন কারনে ডেন্টাল ক্যারিজ বা দাঁতের ক্ষয় হতে পারে। যেমন-

১। অনেক বাচ্চাই মায়ের বুকের দুধ/ফিডার খেতে খেতে ঘুমায়। যেহেতু বাচ্চা দীর্ঘক্ষন ঘুম এ থাকে, এই সময় দুধের মিষ্টি দাঁতের গায়ে এনামেলের ওপর এক ধরনের আবরণ সৃষ্টি করে, যার নাম পেলিক্যাল। এই পেলিক্যালকেই বলা হয় ডেন্টাল প্ল্যাক । এই ডেন্টাল প্ল্যাক লাখ লাখ জীবাণুর সঙ্গে মিশে অ্যাসিড তৈরি করে যা শিশুদের ডেন্টাল ক্যারিজ বা দাঁত ক্ষয় রোগের প্রধান কারণ।

২। শিশুর দাঁত ওঠার আগে পরিষ্কার সুতি কাপড় হালকা গরম পানিতে ভিজিয়ে মুখের ভিতর পরিষ্কার করে দিতে হবে। দাঁত ওঠার পর নরম বেবি টুথ ব্রাশ দিয়ে সতর্কতার সঙ্গে দাঁত ও জিহ্বা পরিষ্কার করতে হবে। বেবি টুথ পেস্ট না পেলে বা বড়দের টুথপেস্ট খেয়ে ফেলার আশঙ্কা থাকলে পেস্ট না দিলেও চলবে।

৩। শিশুর দাঁত ঠিকমত ব্রাশ না করলে ডেন্টাল ক্যারিজ হতে পারে। নিয়মিত ব্রাশ করা, বিশেষ করে রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে এবং সকালে ঘুম থেকে ওঠে নাস্তার পরে দাঁত ব্রাশ করার অভ্যাস করাতে হবে। মনে রাখতে হবে , শিশুকালই উপযুক্ত সময় ভাল অভ্যাস তৈরি করে দেয়ার । শিশু যতদিন পর্যন্ত নিজে ব্রাশ করতে পারবে না, অভিভাবক এর উচিত অন্তত রাতে নিয়মিত শিশুর দাঁত ব্রাশ করে দেয়া।

৪। মিষ্টি জাতীয় খাবার যেমন চকলেট, আইসক্রিম, কোক, জুস শিশুর দাঁতের জন্য ক্ষতিকর। শিশুরা এ ধরনের খাবার খেতে পছন্দ করে। আপনি যতই মানা করুন ওরা এই খাবারগুলো খাবেই! তাই এসব খাবার খাওয়ার পর ওদের দাঁত যেন পরিষ্কার থাকে সেটা আপনাকে নিশ্চিত করতে হবে।

আমাদের দেশের অভিভাবকদের অনেকেরই একটা ভুল ধারনা , দুধ দাঁততো পড়েই যাবে, এর বেশি যত্ন নেওয়ার দরকার নেই। কিন্তু সময়ের আগে দুধ দাঁত পরে গেলে/ফেলে দিলে স্থায়ী দাঁত ক্রমানুসারে আসে না যার জন্যে আঁকা-বাঁকা দাঁত উঠে । দাঁতের ধর্মই হচ্ছে ফাঁকা জায়গা দখল করা। কোনো দাঁত সময়ের আগে ফেলে দিলে পিছনের দাঁত সেখানে হেলে পড়ে অথবা জায়গা দখল করে নেয় যার কারণে সেই শূন্যস্থানে যে স্থায়ী দাঁত উঠার কথা ছিল সেটা উঠার জায়গা না পেয়ে অন্য দিক দিয়ে উঠে তখনই দাঁত আঁকা বাঁকা হয়! এছাড়াও হাতের বুড়ো আঙ্গুল চোষা, মুখ দিয়ে শ্বাস নেয়া, জিহ্বা দিয়ে ধাক্কা দেয়া, পেসিফায়ার ব্যাবহার করা, দীর্ঘদিন বোতলের মাধ্যমে খাওয়ালে পরবর্তিতে স্থায়ী দাঁত উচু হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

সুতারং শিশুর প্রাথমিক দাঁত বা দুধ দাঁতের ভাল থাকাটা ভবিষ্যতের স্থায়ী দাঁতের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। শিশুর দাঁতের ক্ষয়রোগ এড়াতে শিশুর দুধ দাঁতের যত্ন নিতে হবে। সকল সচেতন অভিভাবকদের উচিত শিশুর বয়স এক বছর হলেই ডেন্টিস্ট কে দেখানো এবং পরামর্শ গ্রহন করা । শিশুর প্রথম ৬ বছরে অন্তত ৩ বার ডেন্টিস্টের সাথে পরামর্শ করা উচিত যাতে শিশুর দাঁতের কোনো সমস্যা না হয়!

লেখক : ডেন্টাল সার্জন, সিকদার ডেন্টাল কেয়ার, ঢাকা।

পাঠকের মতামত:

০৬ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test