E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

স্বাস্থ্যখাতে ৭০ হাজার জনবল নিয়োগ দেওয়া হয়েছে: স্বাস্থ্যমন্ত্রী

২০২৩ মে ১৫ ১৮:৫২:০২
স্বাস্থ্যখাতে ৭০ হাজার জনবল নিয়োগ দেওয়া হয়েছে: স্বাস্থ্যমন্ত্রী

স্টাফ রিপোর্টার : স্বাস্থ্যখাতে তিন বছরে ৭০ হাজার জনবল নিয়োগ দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী জাহিদ মালেক। সোমবার (১৫ মে) সকালে জাপানের ‘নাগাসাকি ইউনিভার্সিটি স্কুল অব মেডিসিন মেমোরিয়াল হলে ইন্টারন্যাশনাল সিম্পোজিয়াম, অ্যাভানসিং দ্যা গ্লোবাল হেলথ এজেন্ডা ফ্রম নাগাসাকি টু দ্যা ওয়ার্ল্ড’ শীর্ষক আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।

সম্মেলনে বাংলাদেশ, কেনিয়া, ইন্দোনেশিয়া, কম্বোডিয়া, জাপানসহ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ঊর্ধ্বতন প্রতিনিধিগণ অংশ নেন।

বাংলাদেশের পক্ষে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী জাহিদ মালেকের নেতৃত্বে স্বাস্থ্য শিক্ষা বিভাগের সচিব আজিজুর রহমান ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এবিএম খুরশীদ আলম সম্মেলনে অংশ নেন। সম্মেলনে বিভিন্ন দেশের স্বাস্থ্য প্রতিনিধিগণ স্বাস্থ্যসেবায় তাদের নিজ দেশ ও সংস্থার কার্যক্রম তুলে ধরেন।

সম্মেলনে জাহিদ মালেক বাংলাদেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে গত ১০ বছরে বাংলাদেশের স্বাস্থ্যখাতে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে বলে উল্লেখ করেন। বাংলাদেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উন্নয়নে জাপান সরকার ও বিশ্ব ব্যাংক ব্যাপক ভূমিকা রেখেছে বলেও তিনি জানান।

গত ১০ বছরে বাংলাদেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উন্নয়ন প্রসঙ্গে জাহিদ মালেক বলেন, গত তিন বছরে স্বাস্থ্যসেবার মান বৃদ্ধি করতে নতুন করে প্রায় ৭০ হাজার জনবল নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এরমধ্যে ২০ হাজার চিকিৎসক, ত্রিশ হাজার নার্স এবং ২০ হাজার জন অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মী নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

বাংলাদেশের হাসপাতাল সেবার মান বৃদ্ধি প্রসঙ্গে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, দেশের প্রায় পাঁচশ উপজেলায় ২৫ শয্যা থেকে বর্তমানে পঞ্চাশ শয্যার আধুনিক হাসপাতাল করা হয়েছে। প্রতিটি জেলা হাসপাতালকে ২৫০ শয্যায় উন্নীত করা হয়েছে। বাইশটি ৫০০ শয্যার আধুনিক মানের চিকিৎসা ইনস্টিটিউট, ১০০০ শয্যার ৩৭টি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং পাঁচটি মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় করা হয়েছে। এসব হাসপাতালের চিকিৎসা সেবার মান সরেজমিনে পর্যবেক্ষণ করতে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর নেতৃত্বে একটি উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দল দেশের আট বিভাগের স্বাস্থ্যসেবার মান পরিদর্শন করেছেন।

তিনি আরও বলেন, প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার মান বৃদ্ধিতে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ১৪ হাজার ২৮০টি কমিউনিটি ক্লিনিকে বিনামূল্যে বত্রিশ রকমের ওষুধ দেওয়া হয়। এই ক্লিনিকগুলোয় প্রায় ৫০ হাজার লোকবল স্বাস্থ্যসেবা দিয়ে যাচ্ছে। এর সাথে ৪ হাজার ৬৫০টি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্র থেকে প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষদের বিনামূল্যে ওষুধ, পরামর্শ ও ডেলিভারি চিকিৎসা সেবা দিচ্ছে।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সময়োপযোগী বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণের ফলে দেশের জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হয়েছে বলে উল্লেখ করে জাহিদ মালেক বলেন, দেশের স্বাধীনতার পর বাংলাদেশের প্রতিটি প্রাপ্ত বয়স্ক বিবাহিত নারী গড়ে ৬ দশমিক ৯ জন সন্তান জন্ম দিতেন। বর্তমানে প্রতিটি নারী গড়ে দুজন সন্তান জন্ম দিচ্ছেন। এতে দেশে জনসংখ্যা বৃদ্ধিতে ভারসাম্য রক্ষা পেয়েছে। বাংলাদেশ শিশু মৃত্যু ও মাতৃমৃত্যু হ্রাসে অভাবনীয় সাফল্য লাভ করায় জাতিসংঘের কাছ থেকে ২০১০ সালে এমডিজি পুরস্কার লাভ করে।

টিকা প্রদানে বাংলাদেশের সফলতা তুলে ধরে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ১৯৮৪ সালে টিকাদানে বাংলাদেশের সফলতা ছিল মাত্র দুই ভাগের নিচে। ২০২২ সালে সেটি দাঁড়িয়েছে ৯২ শতাংশে। বর্তমানে দেশের ৯২ শতাংশ ১২-১৩ বছর বয়সী শিশু যক্ষ্মা, হাম, পোলিও, টিটেনাস, হেপাটাইটিস রোগমুক্ত।

দেশে ওষুধ শিল্পের ব্যাপক প্রসার ঘটেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, দেশে বর্তমানে ৩ দশমিক ১ বিলিয়ন ডলার মূল্যের ওষুধ উৎপাদন হচ্ছে। এসব ওষুধ দেশের ৯৭ ভাগ চাহিদা মিটিয়ে বিশ্বের প্রায় আশিটি দেশে রপ্তানি করে বাংলাদেশ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করছে।

করোনাভাইরাস মোকাবিলায় বাংলাদেশ বিশ্বে পঞ্চম স্থান ও দক্ষিণ এশিয়ায় চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। করোনায় এত বড় সাফল্যের মূলে হচ্ছে বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সময়োপযোগী ও দূরদর্শী সিদ্ধান্ত গ্রহণ। স্বল্প সময়ে অধিক জনবল কাজে লাগিয়ে দেশের লক্ষ্যমাত্রার ৯০ শতাংশ মানুষকে টিকা দেওয়া হয়েছে। এই টিকার প্রায় ৩৭ কোটি ডোজ মানুষকে বিনামূল্যে দেওয়া হয়েছে। এর ফলে বাংলাদেশ করোনায় কম ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে দ্রুত ঘুরে দাঁড়িয়েছে। করোনায় দেশের হাসপাতালগুলোয় থাকা মাত্র ৫৭৮টি আইসিইউ শয্যা থেকে বর্তমানে ২০০০ আইসিইউ শয্যা উন্নীত করা হয়েছে। মাত্র একটি সেন্ট্রাল লাইন অক্সিজেন প্লান্ট থেকে দেশে এখন ১২০টি সেন্ট্রাল অক্সিজেন লাইন করা হয়েছে। এতে করে করোনা দুর্যোগ থেকে এখন পর্যন্ত কোনো হাসপাতালেই অক্সিজেন সংকট দেখা দেয়নি।

জাহিদ মালেক আরও বলেন, আগামীতে দেশে ইউনিভার্সাল হেলথ কভারেজের আওতায় গোটা দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন আনার পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে। বর্তমানে দেশে মোট মৃত্যুর প্রায় ৮০ শতাংশ অসংক্রামক রোগের কারণে মারা যাচ্ছে। এজন্য সংক্রামক রোগের পাশাপাশি অসংক্রমক রোগের চিকিৎসা ব্যবস্থায় উন্নয়ন ঘটাতে দেশের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক পর্যায়ের আর্থিক সহায়তার প্রয়োজনীয়তা অনেক বেশি প্রয়োজন। বাংলাদেশের মত একটি ঘনবসতিপূর্ণ দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উন্নয়ন ঘটাতে জাপানসহ, বিশ্ব ব্যাংক ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা আরও জোরালো ভূমিকা রাখবে বলে স্বাস্থ্যমন্ত্রী আশা করেন।

সম্মেলনে সূচনা বক্তব্য দেন নাগাসাকি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেসিডেন্ট কোহনো। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন একই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধি নায়োকো ইয়ামামোটো। অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ তুলে ধরেন নাগাসাকি বিশ্ববিদ্যালয় ও লন্ডন স্কুল অব হাইজেনি অব ট্রপিক্যাল মেডিসিনের পক্ষে প্রফেসর কারা হানসন।

(ওএস/এসপি/মে ১৫, ২০২৩)

পাঠকের মতামত:

২০ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test