E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

শেবাচিমে ১১ লিফটের নয়টি অচল, সচল দুইটিতেও ভোগান্তি

২০২৪ মার্চ ২৩ ১৮:৫২:৩৬
শেবাচিমে ১১ লিফটের নয়টি অচল, সচল দুইটিতেও ভোগান্তি

আঞ্চলিক প্রতিনিধি, বরিশাল : বরিশাল বিভাগীয় শহরের নির্ভরযোগ্য চিকিৎসা সেবা কেন্দ্র শের-ই বাংলা চিকিৎসা মহাবিদ্যালয়ের (শেবাচিম) ১১টি লিফটের নয়টি অচল অবস্থায় পরে রয়েছে। দুইটি লিফট দিয়ে রোগীসহ দর্শনার্থীরা চলাচল করছেন। তাও আবার একটি প্রায়ই আটকে যায়।

লিফট সমস্যায় হাসপাতালে প্রবেশের পর থেকেই নানা ভোগান্তিতে পরতে হচ্ছে রোগীসহ তাদের স্বজনদের। গণপূর্ত বিভাগের দোহাই দিয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জনভোগান্তির কথা স্বীকার করলেও গণপূর্ত বিভাগ বলছে ভিন্নকথা। হাসপাতালের ভবনগুলোও রয়েছে চরম ঝুঁকিতে। সামান্য ভূমিকম্প হলেই হাসপাতালের পুরনো ভবনগুলো ধ্বসে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এছাড়া হাসপাতালে ভর্তি মুমূর্ষ রোগীদের জন্য বিনামূল্যে রক্ত দিতে এসে ডোনারদেরও পরতে হচ্ছে চরম বিরম্বনায়। ঘন্টার পর ঘন্টা রক্তের ডোনাররা বসে থাকলেও সংশ্লিষ্ট দায়িত্বপ্রাপ্তদের কাজ চলে কচ্ছপগতিতে। মুমূর্ষ রোগীদের আনা নেওয়ার জন্য ট্রলি ব্যবহার করতে দায়িত্বরতদের দিতে হচ্ছে দুই থেকে তিনশ’ টাকা করে। টাকা ছাড়া ট্রলি ব্যবহার করতে দিচ্ছেন না ওয়ার্ডের দায়িত্বপ্রাপ্ত আয়া ও বুয়ারা।

সূত্রমতে, শেবাচিমের সারা অঙ্গে সমস্যার কথা জেনেও। তার উপরেই ভরসা করে প্রতিদিন চিকিৎসা সেবা নিচ্ছেন দুই থেকে আড়াই হাজার মানুষ। পদ্মার দক্ষিণপাড়ের মানুষের আধুনিক চিকিৎসা সেবার একমাত্র ভরসাস্থল শেবাচিম হাসপাতাল বয়সের ভারে প্রতিনিয়তই নতুন নতুন সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। চিকিৎসা সেবার মান নিয়ে রোগীদের অভিযোগ না থাকলেও হাসপাতালটিতে প্রবেশের পর থেকেই শুরু হয় নানা ভোগান্তি। পুরো হাসপাতালের কোথাও রোগীর স্বজনদের জন্য বসার কোন ব্যবস্থা নেই। তাই বিভাগের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা থেকে আসা রোগীর স্বজনদের প্রতিনিয়ত চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।

আজ শনিবার সকালে উজিরপুর থেকে সন্তানের চিকিৎসা করতে আসা গৃহবধূ মুক্তা বেগম জানান, গত চার দিন আগে তিনি সন্তানের জন্য বাহির থেকে ওষুধ ক্রয় করতে আনতে যাওয়ার জন্য লিফটে উঠে প্রায় ২০ মিনিট আটকা ছিলেন। তখন দম বন্ধ হয়ে তিনি নিজেই মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে এসেছেন। অপর এক রোগীর স্বজন শাহজালাল হাওলাদার জানান, হাসপাতালে ভর্তি তার মুমূর্ষ স্ত্রীকে ট্রলিতে শুয়িয়ে তৃতীয় তলা থেকে পঞ্চম তলায় যাওয়ার জন্য লিফটে উঠেছিলেন। পথিমধ্যে প্রায় ১৫ মিনিট লিফটের মধ্যে তারা আটকে পরেছিলেন। তখন দম বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়ে তাদের অবস্থাও বেকায়দায় পরেছিলো। তার মতোই হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগী ও তাদের স্বজনরা লিফট নিয়ে নানা বিড়ম্বনার কথা জানিয়েছেন।

হাসপাতালের জরুরি বিভাগের গেট থেকে রোগী বহন করা ট্রলি নিয়ে লিফটের সামনে দীর্ঘক্ষণ দাঁড়ি থাকতে দেখা গেছে রোগীর স্বজনদের। এসব অপেক্ষমান এক রোগীর স্বজন জুবায়ের ইসলাম বলেন, লিফটগুলো দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ। হাসপাতালের পশ্চিম পাশের একটি লিফট ভালো আছে শুনে মুমূর্ষ রোগী নিয়ে পঞ্চম তলায় যাওয়ার জন্য দাঁড়িয়ে রয়েছি। তিনি আরও বলেন, নির্ভরযোগ্য চিকিৎসা সেবা কেন্দ্র জনগুরুত্বপূর্ণ এ হাসপাতালটি বর্তমানে রোগীদের চাইতেও অসুস্থ। আমাদের দাবি অতিদ্রুত সকল সমস্যার সমাধান করা হোক।

ট্রলিতে রোগী বহনকারী বয় রুবেল হাওলাদার বলেন, সব লিফট নষ্ট। দুই একটা চলে, তাও মাঝে মধ্যে বন্ধ হয়ে যায়। রোগী নিয়ে লিফটের সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। পাবলিক রোগী সব এক লিফটে উঠে। কোন কোন সময় পাবলিক উঠে ভরে যাওয়ায় মুমূর্ষ রোগী নিয়ে তাদের দাঁড়িয়ে থাকতে হয়।

হাসপাতালের বাকি লিফটগুলো ঠিক করা না হলে কয়েকদিন পর যে দুইটা চলে তাও বন্ধ হয়ে যাবে।
তিনি আরও জানান, জরুরী বিভাগের গেটের সামনের অংশে দুইটি লিফট থাকলেও সচল রয়েছে একটি এবং প্রধান ফটকের মাঝের অংশে ছয়টি লিফ থাকলেও রোগী বহনকারী লিফট রয়েছে একটি। তাও মাঝে মধ্যে আটকে পরে। ১৯৬৮ সালের দুইটি লিফটের একটি সচল রয়েছে। তাও নড়বড়ে অবস্থা। এতে ডাক্তার, স্টাফরা চলাচল করে। বাকি লিফটগুলোর অবস্থা বেহাল।

শেবাচিম হাসপাতাল পরিচালক ডাঃ এএইচএম সাইফুল ইসলাম বলেন, ভবন এবং লিফটগুলো অনেক পুরনো হাওয়ায় বেশির ভাগই অচল। তবে লিফটগুলোর দায়িত্ব গণপূর্ত বিভাগের হওয়ায় তাদের একাধিকবার পত্র প্রেরণ করা হয়েছে। কিন্তু গণপূর্ত থেকে কোন উদ্যোগই গ্রহণ করা হয়নি।

অপরদিকে দীর্ঘদিন ধরে লিফটগুলো অচল থাকার কথা স্বীকার করে খুব শীঘ্রই এ সমস্যা সমাধানের ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছেন, বরিশাল গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. ফয়সাল আলম।
উল্লেখ্য, দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের উন্নত চিকিৎসার জন্য ৫৬ বছর আগে ১৯৬৮ সালে নির্মাণ করা হয়েছে পাঁচশ’ শয্যার বরিশাল শের-ই বাংলা চিকিৎসা মহাবিদ্যালয় (শেবাচিম) হাসপাতাল। ২০০৬ সালে হাসপাতালটি এক হাজার শয্যায় উন্নতি করা হয়েছে। এরপর থেকে প্রতিদিনই এ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকছেন প্রায় তিনগুণ রোগী।

(টিবি/এসপি/মার্চ ২৩, ২০২৪)

পাঠকের মতামত:

২৭ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test