E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

জরায়ু ক্যান্সারে বছরে মারা যান ১১ হাজার নারী

২০১৪ মে ৩১ ২০:২৪:১৮
জরায়ু ক্যান্সারে বছরে মারা যান ১১ হাজার নারী

বাকৃবি প্রতিনিধি : বাংলাদেশে জরায়ু ক্যান্সারে প্রতিবছর প্রায় ১১ হাজার মহিলা মারা যান। গ্রামের অশিক্ষিত মহিলা ও যৌনকর্মীদের ওই রোগে আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা বেশি।

অনিরাপদ যৌন সম্পর্ক, বাল্যবিবাহ, ধুমপান বা তামাক সেবন, অধিক সন্তান প্রসবসহ সাতটি কারণে জরায়ু ক্যান্সার হয়ে থাকে। তবে জরায়ু ক্যান্সার সঠিক সময়ে নির্ণয় করতে পারলে সম্পূর্ণ নিরাময়যোগ্য।

সম্প্রতি বাংলাদেশের চারটি জেলায় সহস্রাধিক মহিলা ও যৌনকর্মীর উপর জরিপ চালিয়ে এমন তথ্য দিয়েছেন দেশের এক দল জরায়ু ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ। প্রজনন শিক্ষা এবং প্রজনন স্বাস্থ্য খাতে সঠিক নীতিমালার অভাবেই দিন দিন ওই রোগ মারাত্মক আকার ধারণ করছে। এখনই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না নিলে মহামারি আকার ধারণ করতে পারে বলে জানিয়েছেন গবেষক দলের অন্যতম সদস্য অধ্যাপক ড. মোজাহিদ উদ্দিন আহমেদ। গবেষক দলের প্রধান ছিলেন স্কয়ার হাসপাতালের স্ত্রী ও প্রসূতি বিভাগের অধ্যাপক ডা. সুলতানা রাজিয়া বেগম।

গবেষণার ফলাফল সম্পর্কে অধ্যাপক ড. মোজাহিদ বলেন, খাগড়াছড়ি, জালামপুর, টাঙ্গাইল, গাজীপুর জেলার প্রায় সহস্রাধিক মহিলা ও যৌনকর্মীদের জরায়ু পরীক্ষা করা হয়েছে। প্রায় ১১ শতাংশ গ্রামীণ মহিলা এবং ৩১ শতাংশ যৌনকর্মীর কাছে জরায়ু ক্যান্সার সৃষ্টিকারী প্যাপিলোমা ভাইরাসের উপস্থিতি পাওয়া গেছে।

তিনি বলেন, সেসব মহিলার জরায়ু পরীক্ষা করা হয়েছে তারা সকলেই আপাতদৃষ্টিতে দেখতে সম্পূর্ণ সুস্থ হলেও যেকোনো সময় জরায়ু ক্যান্সারে আক্রান্ত হতে পারেন। অনিয়মিত রক্তস্রাব, কোনো কারণ ছাড়াই জরায়ু হতে রক্তপাত, সঙ্গম করার সময় রক্তপাত, তলপেটে প্রচণ্ড বেদনা, অধিক সময় ধরে রক্তস্রাব হওয়ায় জরায়ু ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার প্রাথমিক লক্ষণ। এর কোনো একটি লক্ষণ দেখা দিলে বুঝতে হবে জরায়ু ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে।

তিনি বলেন, গবেষণায় দেখা গেছে অনিরাপদ যৌন সম্পর্ক, বাল্য বিবাহ, অধিক সন্তান প্রসব, ধুমপান বা তামাক সেবন, ঘন ঘন সন্তান প্রসব, স্বেচ্ছায় গর্ভপাত এবং প্রজনন শিক্ষার অভাবই মূল কারণ জরায়ু ক্যান্সারের। তবে যেসকল পুরুষ একাধিক নারীর সঙ্গে যৌন সম্পর্কে লিপ্ত হয় তার দ্বারাও জরায়ু ক্যান্সারের প্যাপিলোমা ভাইরাস অন্য নারীর জরায়ুতে সংক্রামিত হয়। ওই পুরুষও লিঙ্গ ক্যান্সারে আক্রান্ত হতে পারে। গবেষণায় দেখা গেছে, যৌনকর্মীরা প্রজনন স্বাস্থ্য সম্পর্কে অজ্ঞ হওয়ায় জরায়ু ক্যান্সারে বেশি আক্রান্ত হয়ে থাকেন।

গবেষক অধ্যাপক ড. মোজাহিদ বলেন, জরায়ু ক্যান্সার এমন একটি রোগ যা সম্পূর্ণ নিরাময়যোগ্য। ক্যান্সার সৃষ্টিকারী ভাইরাসের সংক্রমণ প্রাথমিক পর্যায়ে নির্ণয় করা সম্ভব হলে এটা নিরাময় করা যায়। এছাড়া, নির্দিষ্ট সময় পর পর প্রতিষেধক টিকা গ্রহণ করেও ওই রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। কিন্তু জরায়ু ক্যান্সারের প্রতিষেধক ব্যয়বহুল। তবে বছরে একবার করে সরাসরি জরায়ু পরীক্ষার মাধ্যমে ভাইরাসের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে পারলে মারাত্মক ওই রোগের হাত থেকে বাঁচতে পারেন অসংখ্য মহিলা।

এ বিষয়ে গবেষক দলের প্রধান অধ্যাপক ডা. সুলতানা রাজিয়া বেগম বলেন, বাংলাদেশের মহিলাদের আক্রমণকারী ১০ ধরনের ক্যান্সারের মধ্যে জরায়ুর ক্যান্সার রোগটি দ্বিতীয় অবস্থানে আছে, যেটি শতকরা ১৯ দশমিক ২ ভাগ। লজ্জাবশত অনেক মহিলাই জরায়ু ক্যান্সারের প্রাথমিক উপসর্গগুলো লুকিয়ে রাখে, আবার পরীক্ষাও করতে চান না। যৌন ও প্রজনন শিক্ষা এবং সচেতনতাই পারে জরায়ু ক্যান্সার থেকে মুক্তি দিতে। সেক্ষেত্রে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে নিয়মিত দেশের সব পাড়া, মহল্লা, গ্রামে এমনকি প্রত্যন্ত অঞ্চলে জরায়ু পরীক্ষার ক্যাম্পেইন করা গেলে এ রোগ থেকে দেশের নারী সমাজকে পরিত্রাণ দেওয়া সম্ভব।

সম্পূর্ণ নিজস্ব উদ্যোগে গবেষণা কার্যক্রমটি পরিচালনা করেছে গবেষক দল। গবেষক দলে আরে ছিলেন ডা. নাসিমা শাহীন, ডা. সামছুন্নাহার, ডা. মোছা. সোনিয়া পারভীন এবং বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) ভেটেরিনারি অনুষদের মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. একেএম আনিসুর রহমান ও ড. মো. তৌহিদুল ইসলাম।

সম্প্রতি চীনের বেইজিংয়ে এশিয়া ওশেনিয়া রিসার্চ অর্গানাইজেশন কর্তৃক আয়োজিত জেনিটাল ইনফেকশেন এবং নিওপ্লাশিয়া বিষয়ের উপর ৬ষ্ঠ দ্বিবার্ষিক সম্মেলনে বাংলাদেশের জরায়ু ক্যান্সারের উপর গবেষণা প্রতিবেদন পোস্টার আকারে প্রদর্শন করে প্রথম স্থান অধিকার করেছে ওই গবেষক দল। সম্মেলনে জেনিটাল ক্যান্সারের উপর এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলের ২৫টি অংশগ্রহণকারী দলের ৩৫টি পোস্টার প্রদর্শিত হয়।

(ওএস/এস/মে ৩১, ২০১৪)

পাঠকের মতামত:

২৬ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test