E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

'ঐক্যবদ্ধ হলে সবে, যক্ষ্মা মুক্ত দেশ হবে'

২০১৬ মার্চ ২৪ ১১:২৩:০৩
'ঐক্যবদ্ধ হলে সবে, যক্ষ্মা মুক্ত দেশ হবে'

ডাঃ আহমদ পারভেজ জাবীন :


আজ ২৪শে মার্চ, বিশ্ব যক্ষ্মা দিবস। যক্ষ্মা বাংলাদেশের একটি প্রধান জনস্বাস্থ্য সমস্যা। প্রাপ্তবয়স্ক জনসংখ্যার প্রায় শতকরা ৫০ ভাগ লোক যক্ষ্মার জীবাণু দ্বারা সংক্রামিত। প্রতিবছর ৩ লক্ষেরও অধিক লোক নতুন ভাবে যক্ষারোগে আক্রান্ত হয় এবং ৮১ হাজার লোক মারা যায়। বিশ্বের যে ২২টি দেশে যক্ষারোগী সর্বধিক, বাংলাদেশ তার মধ্যে ৭ম।

১৮৮২ সালে যক্ষ্মারোগের জীবানু আবিষ্কারের পর থেকে ক্রমান্বয়ে চিকিৎসা বিজ্ঞানের অগ্রগতির সাথে সাথে যক্ষ্মারোগের বিস্তার কমে আসে। অক্সফোর্ড টেক্সট বুক অফ পাবলিক হেলথ অনুসারে ১৯৮০ এর দশকে যক্ষ্মারোগের পুনঃ পার্দুভাব ঘটে। এর পরিপ্রক্ষিতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিঊএইচও) ১৯৯০ এর দশকের গোড়ার দিকে যক্ষ্মাকে গ্লোবাল ইমারজেন্সি (Global Emergency) ঘোষণা করে। ১৯৯১ সালে অনুষ্ঠিত বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বার্ষিক সভায় (World Health Assembly) যক্ষ্মা রোগের কর্যকর চিকিৎসা কৌশল হিসাবে ডটস্ /DOTS (Directly Observed Treatment, Short-Course অর্থাৎ সরাসরি পর্যবেক্ষনের মাধ্যমে স্বল্প মেয়াদে চিকিৎসা) পদ্ধতি অবলম্বনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। একই সাথে দুইটি লক্ষ নির্ধারণ করা হয়, এক: কফে জীবাণু যুক্ত রোগীর ৭০% সনাক্তকরণ, দুই: সনাক্তকৃত রোগীর ৮৫% রোগীকে আরোগ্য করা ।

ডটস্ কর্মকৌশলের ৫টি উপাদান সমূহ: ১. যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণে রাজনৈতিক অঙ্গিকার, ২. তিন সপ্তাহ বা তার অধিক সময় ধরে কাশি এমন লোকের কফ পরীক্ষার মাধ্যমে যক্ষ্মা রোগী সনাক্তকরন, ৩. ডটস্ পদ্ধতিতে (সরাসরি পর্যবেক্ষনের মাধ্যমে ) চিকিৎসা প্রদান, ৪. যক্ষ্মারোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা নিশ্চিত করার জন্য ঔষধ, অন্যান্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী নিয়মিত ও পর্যাপ্ত সরবরাহ নিশ্চিত করা, ৫. তথ্য সংগ্রহ ও প্রতিবেদন তৈরীর জন্য একটি কার্যকর ও মানসম্মত পদ্ধতি অনুসরন করা, যার মাধ্যমে যক্ষ্মার চিকিৎসার ফলাফল যাচাই এবং যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির সামগ্রিক অগ্রগতির তথ্য অনুসরন ও মূল্যায়ন করা যায় ।

যক্ষ্মারোগের ভয়াবহতা অনুধাবন করে জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রন কর্মসূচি ১৯৯৩ সালে বাংলাদেশে যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণের জন্য ডটস্ কৌশল গ্রহণ করে এবং জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচিকে ঢেলে নতুন করে সাজানো হয়। নতুন কর্ম পরিকল্পনার আওতায় জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণে সরকারি কর্যক্রমের সাথে বেসরকারি সংস্থাকে সম্পৃক্ত করে। ১৯৯৪ সালে ডটস্ বাস্তবায়নের জন্য বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাক প্রথম সরকারের সাথে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করে। বর্তমানে সারাদেশে ২৮ টি বেসরকারি সংস্থা জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির সাথে যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণে অংশীদারিত্বের(Partnership) ভিত্তিত্বে যক্ষ্মা নির্মূলে এক সাথে কাজ করে যাচ্ছে ।

১৯৯৩ সাল থেকে ২০০৩ সাল পর্যন্ত রোগ সনাক্ত করণের হার সন্তোষজনক পর্যায়ে উন্নতি করা সম্ভব হয়নি। জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির ২০০৩ সালের বার্ষিক রিপোর্ট মতে, রোগী সনাক্ত করণের হার ছিল ৪১%। ২০০৪ সালের আগস্ট থেকে বাংলাদেশ গ্লোবাল ফান্ডের (GFATM Global Fund to Fight against AIDS, TB and Malaria) অধীনে সাহায্য পেতে শুরু করে তখন থেকে পর্যায়ক্রমে যক্ষ্মা রোগ সনাক্তের হার বৃদ্ধি পেতে শুরু করে। ২০১৫ সালে বাংলাদেশ প্রতি লক্ষে ১৩০ জন যক্ষ্মা রোগী সনাক্ত করে এবং ২০১৪ সালের কোহর্টে সনাক্তকৃত রোগীর ৯৪% আরোগ্য লাভে করে। এই অগ্রগতি যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রনে ডটস্ কার্যক্রমের সফলতা এবং সরকারি ও বেসরকারি সংস্থাসমূহের অংশীদারিত্বের সুফল হিসাবে দেশে-বিদেশে মূল্যায়িত হচ্ছে।

জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচীর উদ্দেশ্য সকল যক্ষ্মরোগী সনাক্ত করা এবং চিকিৎসার মাধ্যমে সম্পূর্ন সুস্থ্য করে তোলা। এ লক্ষ্য অর্জনে প্রয়োজন সমাজের সকল মানুষের সদিচ্ছা, সহায়তা ও অংশগ্রহন। এ জন্য আমাদের সকলের যে মূল বিষয় মনে রাখতে হবে তা হল:

১. তিন সপ্তাহ বা তার অধিক সময় ধরে কাশি যক্ষ্মারোগের প্রধান লক্ষন
২. তিন সপ্তাহ বা তার অধিক সময় ধরে কাশি থাকলে কফ পরীক্ষা করতে হবে
৩. কফ পরীক্ষা ও যক্ষ্মারোগের চিকিৎসা বিনামূল্যে পাওয়া যায়
৪. আপনার বাড়ীর নিকটস্থ উপজেলা হাসপাতাল, বক্ষ্যব্যাধি ক্লিনিক/ হাসপাতাল, নির্দিষ্ট এনজিও ক্লিনিক এবং মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বিনামূল্যে কফ পরীক্ষা, যক্ষ্মারোগের চিকিৎসা এবং ঔষধ পাওয়া যায়।


সুতরাং, এবারের বিশ্ব যক্ষ্মা দিবসে আমরা সকলে বলি, 'ঐক্যবদ্ধ হলে সবে, যক্ষ্মা মুক্ত দেশ হবে'।


লেখক : জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ

পাঠকের মতামত:

২৮ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test