E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

শিরোনাম:

বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস : ডায়াবেটিস

২০১৬ এপ্রিল ১০ ১৮:৪১:৫৫
বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস : ডায়াবেটিস

ডাঃ আহমদ পারভেজ জাবীন :


বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস ৭ এপ্রিল। প্রতি বছর এইদিনে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) এ দিনটি পালন করে। এ দিনটিতে ১৯৪৮ সালে জাতিসংঘের তদানিন্তন ২৬টি দেশ কর্তৃক গঠনতন্ত্র অনুমোদনের মধ্য দিয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) গঠিত হয়, উদ্দেশ্য বিশ্ব জনগোষ্ঠীর স্বাস্থের উন্নতি করা। এর আলোকে প্রতি বছর সংস্থাটি স্বাস্থ্যের কোন না কোন গুরুতপূর্ণ বিষয়কে বেছে নিয়ে জনসচেতনতা সৃষ্টির মধ্য দিয়ে বিশ্ববাসীকে সচেতন করে রোগ নিয়ন্ত্রণ ও নির্মূলে অবদান রাখছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এ বছরের জন্য নির্দিষ্ট বিষয় ডায়াবেটিস। প্রতিপাদ্য 'সুশৃঙ্খল জীবনযাপন করুন, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখুন'।

ডায়াবেটিস একটি দীর্ঘস্থায়ী (ক্রণিক) বিপাক জনিত রোগ। এ রোগে রক্তের শর্করার (গ্লুকোজের) পরিমাণ স্বাভাবিকের চেয়ে বেড়ে যায়। সুস্থ ব্যক্তির চেয়ে ডায়াবেটিসে আক্রন্তের রক্তের রক্তরসে (প্লাজমায়) সব সময় বেশী পরিমাণে গ্লুকোজ থাকে। রক্তের অতিরিক্ত গ্লুকোজ মানবদেহে বিভিন্ন প্রকারের জীবনবিনাশী জটিলতা তৈরী করে যেমন হার্ট এটাক, পক্ষাঘাত, কিডনী বিকল(ফেইলর), অন্ধত্ব ইত্যাদি। তবে প্রথম হতে যদি এ রোগের চিকিৎসা করা হয় তবে একজন এ রোগ নিয়ে সুস্থ সবল জীবনযাপন করতে পারে। ডায়াবেটিস কোন ছোঁয়াছে বা সংক্রামক রোগ নয়। ডায়াবেটিস একটি অসংক্রমক রোগ (Noncommunicable Disease/NCD)। এ রোগ সর্ম্পকে স্বচ্ছ ধারণা ব্যক্তি জীবনে, রাষ্ট্রীয় ও বিশ্ব পর্যায়ে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ ও নির্মূলে সঠিক অবদান রাখবে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (WHO) হিসাব অনুসারে, ২০১৪ সালে বিশ্বে প্রাপ্তবয়ষ্কদের (১৮+ বছর) লোকদের মধ্যে ডায়াবেটিসে আক্রন্তের হার ৯%; ২০১৪ সালে ডায়াবেটিসে ১৫ (পনের) লাখ লোক মৃত্যুবরণ করে। ডায়াবেটিসে মৃতের ৮০% নিন্ম ও নিন্ম-মধ্যম আয়রে দেশে বসবাস করে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার আরেকটি তথ্যানুসারে ২০৩০ সালে বিশ্বে ডায়াবেটিসে কারণে মৃত্যুর অবস্থান হবে ৭ম। বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতি ২০১৪-১৫ সালে ৪০ হাজার নতুন ডায়াবেটিস রোগীকে সনাক্ত করতে সচেষ্ট হয়ছে। সমিতির আওতায় বাংলাদেশ নিবন্ধিত রোগীর সংখ্যা বর্তমানে ৩০ লাখ। আন্তর্জাতিক ডায়াবেটিস ফেডারেশনের (আইডিএফ) হিসাব অনুসারে, বাংলাদেশে ডায়াবেটিসে আক্রন্ত রোগীর সংখ্যা ৭০ লাখ। আইডিএফের হিসাব অনুসারে ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা বিবেচনায় বাংলাদেশের অবস্থান ১০ম। বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতি বর্তমানে ৪২% ডায়াবেটিস রোগীকে সেবা প্রদানের আওতায় আনতে সচেষ্ট হয়ছে; ২০২৫ সালে ৭৫% রোগীকে চিকৎসা সেবার আওতায় আনতে বদ্ধ পরিকর।

ডায়াবেটিস সর্ম্পকে বিদ্যমান জ্ঞান বতর্মানে বিশ্বে ডায়াবেটিসের চিকিৎসা ও নিয়ন্ত্রণে যথেষ্ট অবদান রাখতে পারে। শুধুমাত্র প্রয়োজন এ রোগ সম্পর্কে সচেতনতা ও অঙ্গীকার। জীবনযাপন পদ্ধতির পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে ব্যক্তি জীবনে ও বিভিন্ন দেশে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ সম্ভব। ডায়াবেটিস ধরা পড়ার পর খাদ্যাবাসের সমন্বয়, ব্যায়াম, প্রয়োজন হল ঔষধ অথবা ইনসুলিন গ্রহণ, সুশৃঙ্খল জীবনযাপন ও স্বাস্থ্যশিক্ষার সাহায্যে সুস্থ স্বাভাবিক জীবনযাপন সম্ভব।

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ বিশ্ববাসী, রাজনৈতিক নেতা, সুশীলসমাজ, সরকারি ও বেসরকারি খাতের কাছে বড় চ্যালঞ্জে। এ চ্যালঞ্জে মোকাবেলায় বিশ্বের দেশসমূহ একক ও সমন্বিত ভাবে কাজ করে যাচ্ছে যেমন ডায়াবেটিস লক্ষণ, চিকিৎসা ও জটিলতা সম্পর্কে জনসাধারণকে সচেতন করা, প্রচলিত চিকিৎসা সেবার তথ্য তুলে ধরে ডায়াবেটিস সেবা গ্রহনে উদ্বুদ্ধ করা। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO)এ বছর ডায়াবেটিসকে জনস্বাস্থ্য সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করে সকল সদস্য দেশকে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধে তাদের জনগণকে তথ্য প্রদান ও সেবা উদ্বুদ্ধকরণে আহ্বান জানিয়েছে।

আসুন আমরা সকলে ডায়াবেটিস সম্পর্কে সচেতন হই, নিয়ন্ত্রণ-প্রতিরোধে ব্রত হই।

লেখক : জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ

পাঠকের মতামত:

২৮ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test