E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

শিশুর দাঁতের যত্নে যা করণীয়

২০১৬ ডিসেম্বর ১৯ ১৭:১৩:০৪
শিশুর দাঁতের যত্নে যা করণীয়

নিউজ ডেস্ক : শিশুর ফুটফুটে হাসিতে কার না ভরে ওঠে মন। আর ওই নির্মল হাসির প্রতীক হলো  শিশুর ঝকঝকে দাঁত। ছোট সোনাদের প্রথম দিকে যে দাঁত উঠে তাকে দুধ দাঁত বলে। এই দুধ দাঁতেরও যত্ন নেওয়া জরুরি। অনেকে মনে করেন এই দাঁত তো আর স্থায়ী নয় ক’দিন পরেই তো স্থায়ী দাঁত উঠবে, তাই ওই দাঁতের বাড়তি যত্ন নিয়ে আর লাভ কী। কিন্তু এ ধারণা মোটেও ঠিক নয়। কারণ এই দুধ দাঁতগুলোই প্রথম কয়েক বছর শিশুর সুস্থতার প্রতীক। দুধ দাঁতের যত্ন না নিলে তা সহজেই পড়ে যাবে বা ক্ষয়প্রাপ্ত হবে।

একটি নবজাতক শিশুর দাঁত এখনো ওঠেনি, কিন্তু তাই বলে তার দাঁত বা মাড়ির যত্নের প্রয়োজন নেই, তা নয়। জন্মের পর থেকেই শিশুর দাঁত ও মাড়ির যত্ন নিতে হবে। ছোট্ট শিশুটির দাঁত ওঠার আগে ও পরে চাই যত্ন। সাধারণত নবজাতকের চার থেকে আট মাসের মধ্যে দাঁত উঠতে শুরু করে। পরে আস্তে আস্তে পড়তে শুরু করে। এসব দাঁতের স্থানে ৬-৮ বছরের দিকে স্থায়ী দাঁত উঠতে থাকে।

যখন দাঁত উঠছে
সাধারণত ছয় মাস বয়স থেকে শিশুর মুখে দাঁত গজাতে শুরু করে। সে তখন যা কিছু সামনে পায় সেটাই কামড়াতে চায়। তাই এই সময় শিশুর হাতের কাছে বিষাক্ত বা ধারালো কোনো দ্রব্য, নোংরা জিনিস বা ওষুধপত্র রাখা উচিত নয়। কামড়ানোর জন্য বাজারে কিছু সামগ্রী পাওয়া যায়, তা শিশুর হাতে দেওয়া যায়। কিন্তু খেয়াল রাখুন, যেন তা পরিচ্ছন্ন ও জীবাণুমুক্ত থাকে। দাঁত ওঠার সময় শিশুর হাতে শক্ত বিস্কুটজাতীয় কিছু দেওয়া যেতে পারে। কিন্তু এমন কিছু দেবেন না যা গিলে ফেললে তার গলায় আটকে যেতে পারে।

দাঁত ব্রাশ করতে হবে?
শিশুকাল থেকেই দাঁত ব্রাশের অভ্যাস গড়ে তুলুন। শিশুরা খুব অনুকরণপ্রিয়। তাই মা সকালে ও রাতে শিশুর সামনেই দাঁত ব্রাশ করবেন। শিশুর হাতে দাঁত ওঠার শুরুতেই একটা ব্রাশ দেওয়া ভালো। একটু বড় হলে শিশুকে হাতে ধরিয়ে সঠিক পদ্ধতিতে ব্রাশ করা শিক্ষা দিতে হবে। তবে লক্ষ্য রাখুন শিশুদের টুথ ব্রাশটি যেন নরম শলাকার তৈরি হয়। শিশুদের উপযোগী ব্রাশ ও টুথপেস্ট বাজারে পাওয়া যায়। এমন টুথপেস্ট যা গিলে ফেললেও সমস্যা নেই। বাড়ন্ত শিশুর দাঁতের ক্ষয় রোধে ফ্লোরাইড কার্যকরী, তাই এই টুথপেস্ট ফ্লোরাইড মিশ্রিত হলে ভালো। আর অবশ্যই ব্রাশ করার পর তাকে কুলি করার জন্য গ্লাসে বা মগে ফুটিয়ে ঠান্ডা করা খাবার পানি দিন, কলের পানি নয়।

দুধদাঁতগুলোর যত্ন নিন
শিশুর দুধদাঁত কখনো কখনো ১১ বছর বয়স পর্যন্ত মুখে অবস্থান করে। অনেকের ধারণা এই দাঁত তো পড়ে যাবে, তাই এর যত্নের দরকার নেই। কিন্তু তা যদি সুস্থ ও সুরক্ষিত না থাকে পরবর্তী স্থায়ী দাঁতগুলোতেও সমস্যা হতে পারে। দুধদাঁতের শিকড়ে প্রদাহ অনেক দিন স্থায়ী থাকলে স্থায়ী দাঁতের ক্ষতি হয়। দুধদাঁত পড়া ও স্থায়ী দাঁত ওঠার সময়ে শিশুর দিকে নজর রাখা প্রয়োজন। নয়তো স্থায়ী দাঁতগুলো আঁকাবাঁকা বা অসমানভাবে বেড়ে উঠতে পারে।

টুথব্রাশ
পরিমিত মাত্রায় পেস্ট নিয়ে সকালে নাশতার পরে ও রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে দাঁত ব্রাশ করুন। সম্ভব হলে ফ্লোরাইডযুক্ত টুথপেস্ট ব্যবহার করুন। শিশুদের জন্য কম ঝাঁঝাল টুথপেস্ট বেছে নিন। ব্রাশের শলাকাগুলো দাঁতের সঙ্গে ৪৫ ডিগ্রি কোনাকুনিভাবে ধরে ও পাটির দাঁত ওপর থেকে নিচে এবং নিচের পাটির দাঁত নিচ থেকে ওপরে ব্রাশ করুন। দাঁতের ভেতরে ও বাইরের অংশে সমান সময় নিয়ে ব্রাশ করুন। তাড়াহুড়া করবেন না। কমপক্ষে দুই মিনিট সময় নিয়ে ব্রাশ করুন। তিন মাস অন্তর টুথব্রাশ পরিবর্তন করা উচিত। দীর্ঘদিন ব্যবহারে ব্রাশের শলাকাগুলো বাঁকা হয়ে গেলে অবশ্যই পরিবর্তন করতে হবে। দিনে কমপক্ষে দুবার ব্রাশ করার পাশাপাশি অন্য সময় চকলেট কিংবা মিষ্টিজাতীয় আঠালো খাবার খাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই দাঁত ব্রাশ করুন।

কীভাবে দাঁত ব্রাশ করবেন?
ওপরের পাটি মাড়ির নিচের অংশ পর্যন্ত পরিষ্কার করতে প্রতিটি দাঁতের আশপাশে ব্রাশ পৌঁছে দিন।
নিচের পাটি মাড়ির নিচের অংশ পর্যন্ত পরিষ্কার করতে প্রতিটি দাঁতের আশপাশে ব্রাশ করুন।
দাঁতের ওপরের অংশ পেছনের দাঁতের ওপর-নিচ সবখানে ব্রাশ করুন।
দাঁতের বাইরের অংশ এক প্রান্ত থেকে শুরু করে অপর প্রান্ত পর্যন্ত অথবা ওপর থেকে নিচের দিকে ব্রাশ করুন ভালোভাবে। দাঁত ব্রাশ করতে এক থেকে দুই মিনিট সময় নিন। অল্প পরিমাণে ফ্লোরাইড টুথপেস্ট ব্যবহার করুন।

যা করা উচিত নয়
অতিরিক্ত দীর্ঘ সময় নিয়ে দাঁত ব্রাশ করার প্রয়োজন নেই। বেশি জোরে ও দ্রুত ব্রাশ করা থেকেও বিরত থাকুন। ব্রাশের আঘাতে যেন মুখগহ্বরের ভেতের ঝিল্লির পর্দা ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেদিকে খেয়াল রাখুন। সামনে-পিছে দাঁত ব্রাশ করলে দাঁতের গোড়া ক্ষয়ে যেতে পারে তাই ওপর-নিচে ব্রাশ করুন। টকজাতীয় খাবার খাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দাঁত ব্রাশ করা থেকে বিরত থাকুন।

দাঁত না থাকলেও নবজাতক শিশুর মুখ ও মাড়ি পরিষ্কার রাখা উচিত|
দুধদাঁত সুস্থ ও সুরক্ষিত না হলে পরবর্তী স্থায়ী দাঁতগুলোতেও সমস্যা হতে পারে|

(ওএস/এএস/ডিসেম্বর ১৯, ২০১৬)

পাঠকের মতামত:

১০ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test