E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

এনেসথেসিয়া ডাক্তার নেই, কাজ চালাচ্ছেন ইলেকট্রিশিয়ান!

২০১৭ ফেব্রুয়ারি ২৭ ১১:৫৪:১২
এনেসথেসিয়া ডাক্তার নেই, কাজ চালাচ্ছেন ইলেকট্রিশিয়ান!

রঘুনাথ খাঁ (সাতক্ষীরা) : এক বছরেরও বেশি সময় ধরে এনেসথেসিয়া চিকিৎসক নেই সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। ফলে ইলেক্ট্রিশিয়ান দিয়েই চালানো হচ্ছে চেতনাহীনতার (এনেসথেসিয়া) কাজ। এতে রোগীর মৃত্যুসহ বিভিন্ন শারিরীক সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে।

শ্যামনগর ৫০ শয্যার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সূত্রে জানা গেছে, প্রতি মাসে গড়ে ৫০ জনের বেশী অস্ত্রপচার করে থাকে এ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। সাধারণ মানুষের কথা ভেবে চিকিৎসা সেবার মান বাড়াতে ২০১৪ সালে তৎকালিন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী ডাঃ আ.ফ.ম রুহুল হক এ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ডিএসএফ প্রকল্প চালু করেন। সেখানে সার্জন পান এক হাজার ১০০ টাকা, এনথেসিয়া চিকিৎসক পান ৬০০ টাকা, সহকারি চিকিৎসক পান ৫০০ টাকা।

সূত্রটি আরো জানায়, গত বছরের ১২ এপ্রিল এ স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সে কর্মরত এনেসথেসিয়া চিকিৎসক ডাঃ আশরাফুল ইসলাম রনিকে বদলি করেন সাতক্ষীরার সিভিল সার্জন উৎপল কুমার দেবনাথ। ১৯ এপ্রিল বদলীর আদেশ পেয়ে আশরাফুল ইসলাম খুলনা মেডিকেল কলেজ এণ্ড হাসপাতালে যোগদান করেন। এরপর থেকে অদ্যাবধি কোন এনেসথেসিয়া চিকিৎসককে নিয়োগ না দেওয়ায় ওই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ম্যাকানিক আবুল হোসেন ওই দায়িত্ব পালন করে আসছেন।

চলতি বছরের ৩ ফেব্রুয়ারি শ্যামনগর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হন উপজেলার ঈশ্বরীপুর গ্রামের আনোয়ার হোসেনের স্ত্রী সন্তানসম্ভবা সাবিনা সুলতানা। ওই দিনই তাকে সিজারের মাধ্যমে অপারেশন করেন ডাঃ আনিসুর রহমান। তাকে সহযোগিতা করেন ডাঃ মামুন ও উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কর্মকর্তা খান হাবিবুর রহমান।

তবে সাবিনাকে ম্যাকানিক কাম ইলেকট্রিশিয়ান আবুল হোসেন এনেসথেসিয়া দেন বলে ওই রোগীর স্বজনরা জানান। যদিও স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পক্ষ থেকে ডাঃ মামুনই এসেথেসিয়া দিয়েছিলেন বলে দাবি করা হলেও তারও নেই ওই বিষয়ে প্রশিক্ষন। তবে অবস্থার অবনতি হওয়ায় অস্ত্রপাচারের পরদিন ৪ ফেব্রুয়ারি খুলনা মেডিকেল কলেজ এণ্ড হাসপাতালে সাবিনার মৃত্যু হয়। সেখানে কর্মরত এক চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলে জাানা গেছে এনেসথেসিয়া হ্যাজাটের কারণে অপারেশনের পরবর্তীতে সাবিনার কার্ডিয়াক এট্যাক হয়। একপর্যায়ে সে মৃত্যুর মুখে ঢলে পড়ে।

ঈশ্বরীপুরের রওশান আলী জানান, ভুল এনেসথেসিয়ার কারণে তার বোন সাবিনার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পর তারা বিষয়টি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কর্মকর্তার কাছে অভিযোগ করেন। বেগতিক বুঝে ডাঃ খান হাবিবুর রহমান মৃতের স্বামীর হাতে কিছু টাকা ধরিয়ে দিয়ে বলেন, যে গেছে সে গেছে। সবই তো আল্লার ইচ্ছা। শেষ মেশ তুমি নতুন একটা বিয়ে করতে পারবে এটাও বা মন্দ কি! এ নিয়ে আর বেশিদূর এগোনোর দরকার নেই। সিভিল সার্জন ঠিক থাকলে তোমরা আমাদের কিছুই করতে পারবে না।

একইভাবে নূরনগরের ওহাব আলী, পানখালির অসিত মহালদার, কৈখালির হাবিবুল্লাহসহ কয়েকজন জানান, তাদের স্ত্রীর প্রসব যন্ত্রণা ওঠার পর শ্যামনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হলেও সিজার করানোর আগে ইলেকট্রিশিয়ান আবুল হোসেন এনেসথেসিয়া দেবেন জানতে পেরে তড়িঘড়ি করে রোগী পার্শ্ববর্তী ক্লিনিকে ভর্তি করানো হয়। এতে হাসপাতালে খরচের কয়েকগুণ টাকা খরচ হলেও আনাড়ী ডাক্তারের হাত থেকে জীবন বাঁচাতে পেরেছেন তাদের স্ত্রীদের।

নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক শ্যামনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কয়েকজন চিকিৎসক ও স্বাস্থ্য কর্মী জানান, ডিএসএফ প্রকল্পের আওতায় সিজার অপারেশন করা হলেও সাতক্ষীরা শহরের দু’টি ক্লিনিকে কর্মরত এজি খানকে কাগজে কলমে এনেসথেসিয়া চিকিৎসক দেখিয়ে লুটে নেওয়া হচ্ছে ওই প্রকল্পের টাকা। এ লুটপাটের টাকা পকেটস্ত করছেন সিভিল সার্জন উৎপল কুমার দেবনাথ, শ্যামনগর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যান কর্মকর্তা খান হাবিবুর রহমানসহ একটি দূর্ণীতিবাজ চক্র।

আর এ লুটপাট অব্যহত রাখতেই এনেসথেসিয়া চিকিৎসক ডাঃ আশরাফুল ইসলাম রনিকে পরিকল্পিতভাবে বদলী করা হয়েছে। একইভাবে আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাঃ শম্পাকে শ্যামনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে সরানোর জন্য ক্ষমতাসীন দলের এক জনপ্রতিনিধিকে ব্যবহার করে ওই চক্রটি।

এ ব্যাপারে শ্যামনগর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক ডাঃ মামুন জানান, সাবিনার মৃত্যুর বিষয়টি বেশ কিছুদিন হয়ে গেছে। তাই এই মুহুর্তে কিছু বলা সম্ভব নয়।

শ্যামনগর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার কণ্যান কর্মকর্তা ডাঃ খান হাবিবুর রহমান জানান, এক বছরেরও বেশি সময় ধরে এখানে এনেসথেসিয়া চিকিৎসক না থাকার কারণে চিকিৎসা সেবা ব্যহত হচ্ছে। বিষয়টি সিভিল সার্জন মহোদয়কে অবহিত করা হয়েছে।

তবে ডিএসএফ ফাণ্ডের টাকা লুটপাটের বিষয়টি অস্বীকার করে তিনি বলেন, আভ্যন্তরীন বিরোধের কারণে একটি মহল তার ও সিভিল সার্জনের বিরুদ্ধে বদনাম ছড়াচ্ছে। তবে ভূল এনেসথেসিয়ার কারণে সাবিনার মৃত্যুর বিশয়টি নিশ্চিত করলেও তার স্বামীকে টাকা দিয়ে মুখ বন্ধ করার বিষয়টি অস্বীকার করেন তিনি।

সাতক্ষীরার সিভিল সার্জন উৎপল কুমার দেবনাথ তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ অস্বীকার করেই বলেন, শ্যামনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এনেসথেসিয়া ডাক্তার শূন্য থাকার বিষয়টি ঢাকা অফিসে জানানো হয়েছে। তবে ডিএসএফ ফাণ্ডের টাকা লুটপাটের বিষয়টি সঠিক নয় বলেও দাবি করেন তিনি।

(আরকে/এসপি/ফেব্রুয়ারি ২৭, ২০১৭)

পাঠকের মতামত:

০৬ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test