E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

বিবিসি অ্যাপ তৈরিতে কাজ করলেন বাংলাদেশের তরুণ চিকিৎসক

২০১৯ মার্চ ০৩ ১৭:৩২:০৮
বিবিসি অ্যাপ তৈরিতে কাজ করলেন বাংলাদেশের তরুণ চিকিৎসক

নিউজ ডেস্ক : বিবিসি ওয়ার্ল্ড সার্ভিস (ইংলিশ) তাদের খবর আরও সহজলভ্য এবং কম খরচে পাঠক-শ্রোতাদের কাছে পৌঁছানোর জন্য নতুন অ্যাপ তৈরি করেছে। বিবিসি ওয়ার্ল্ডের তত্ত্বাবধানে অ্যাপটি তৈরি করেছে জেনো মিডিয়া। অ্যাপটি তৈরিতে কাজ করেছেন বাংলাদেশের তরুণ ডাক্তার নাজিফ মাহবুব। তিনি জেনো মিডিয়ার দক্ষিণ এশিয়ার রিজিওনাল ডিরেক্টর।

সম্পূর্ণ নতুন আঙ্গিকে তৈরি এ অ্যাপে ব্যবহার হয়েছে উন্নত প্রযুক্তি। নির্দিষ্ট কিছু দেশে অ্যাপের ইউজাররা সিলেক্ট করতে পারবেন তারা কীভাবে বিবিসির কন্টেন্ট শুনতে চান? এক্ষেত্রে তারা দুটি অপশন পাবেন। ‘কল-টু-লিসেন’ অর্থাৎ ফোন কলের মাধ্যমে অথবা মোবাইল ডাটা বা ওয়াই-ফাইয়ের মাধ্যমে ইউজাররা অ্যাপটি ব্যবহার করতে পারবেন। ফলে যেসব দেশে ইন্টারনেট নেটওয়ার্ক অপ্রতুল অথব মোবাইল ডাটা ব্যয়বহুল সেসব দেশের নাগরিকরা কম খরচে ‘কল-টু-লিসেন’ এর মাধ্যমে বিবিসির কন্টেন্ট শুনতে পারবেন।

এ প্রযুক্তির আওতায় একজন শ্রোতা তার মোবাইলে ইন্টারনেট অথবা এফএম রেডিও না থাকলেও শুধুমাত্র একটি লোকাল মোবাইল নম্বর ডায়াল করে রেডিও লাইভ শুনতে পারবেন। এক্ষেত্রে এটি একটি ফোন-কল হিসেবে গণ্য হবে এবং ফোনের চার্জই কাটা হবে।

অ্যাপটি সারাবিশ্বে উন্মুক্ত করা হয়েছে (ইংল্যান্ড বাদে) যা পাওয়া যাবে অ্যানড্রয়েড ও অ্যাপল স্টোর উভয় মাধ্যমে। কল-টু-লিসেন সার্ভিস উন্মুক্ত করা হয়েছে বিশ্বের ৩৫টি দেশে যা ক্রমান্বয়ে বাড়ানো হবে।

বিবিসি ওয়ার্ল্ড সার্ভিসের (ইংলিশ) কন্ট্রোলার মার্ক হকাডে বলেন, ‘বিবিসি ওয়ার্ল্ড সার্ভিস (ইংলিশ) বর্তমানে সারাবিশ্বে প্রতি সপ্তাহে ৭৯ মিলিয়ন মানুষ ব্যবহার করেন। আমরা বিবিসির নিরপেক্ষ সংবাদ ও উন্নত কলেবরের মূল্যবান প্রোগ্রামগুলো এমন সব স্থানে পৌঁছাতে চাই যেখানে ইন্টারনেট নেটওয়ার্ক অপ্রতুল অথবা খরচ অনেক বেশি। পৃথিবীজুড়ে তরুণরা এখন মোবাইল ফোনে অ্যাপ ব্যবহারের দিকে বেশি ঝুঁকছেন। এ সিম্পল অ্যাপ ব্যবহারের মাধ্যমে কম খরচে এখন থেকে শ্রোতারা বিবিসির খবর ও বিভিন্ন প্রোগ্রাম শুনতে পারবেন।’

ধীরে ধীরে এ সংখ্যা আমরা বাড়াচ্ছি। আপাতত ৩৫টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ নেই কারণ বাংলাদেশের মোবাইল ফোনের কলিং সার্ভিসের মডেল ভিন্ন। কিন্তু আমরা কাজ করে যাচ্ছি এবং খুব শিগগিরই বাংলাদেশে কল-টু-লিসেন সার্ভিসটি নিয়ে আসতে পারব।

অ্যাপটি লাইট-টাচ ডিজাইনে তৈরি করা হয়েছে যেন এটি খুব সহজে এবং কম ডাটা খরচ করে ব্যবহার করা যায়। ‘কল-টু-লিসেন’ বাটনটি অ্যাপের মাঝে আছে যার মাধ্যমে শ্রোতারা আইভিআর টেকনোলজি ব্যবহার করে বিবিসি ওয়ার্ল্ড সার্ভিস (ইংলিশ) শুনতে পারবেন।

মোবাইল ডাটা বা ওয়াই-ফাইয়ের মাধ্যমে অ্যাপটি ব্যবহার করলে শ্রোতারা অ্যাপের কন্টেন্টগুলো পছন্দ মতো পারসোনালাইজ করতে পারবেন। এতে করে তারা তাদের পছন্দের প্রোগ্রামগুলো দ্রুত ও সহজে এক্সেস করতে পারবেন।

বিবিসি ওয়ার্ল্ড সার্ভিস (ইংলিশ) অ্যাপের আগেও জেনো মিডিয়া বিবিসির ‘বিবিসি সোমালি’ ও ‘বিবিসি হাউসা’- এ দুটি অ্যাপ তৈরি করে।

জেনো মিডিয়ার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মরিস বারজার বলেন, ‘বিবিসি ওয়ার্ল্ড সার্ভিসের সঙ্গে আমাদের সম্পর্কের পরিধি বৃদ্ধি করতে পেরে আমরা গর্বিত।’

জেনো মিডিয়ার দক্ষিণ এশিয়ার রিজিওনাল ডিরেক্টর ডা. নাজিফ মাহবুব জাগো নিউজকে বলেন, বিবিসি ওয়ার্ল্ড সার্ভিস ইংলিশ অ্যাপটি তৈরিতে জেনোর অ্যাপ টিমের সঙ্গে কাজ করতে পেরে অনেক ভালো লাগছে। অ্যাপটি চালুর মাধ্যমে মিডিয়া টেকনোলজিতে একটি মাইল-ফলকের অংশ হলাম।

‘দক্ষিণ এশিয়া ও বাংলাদেশে জেনো মিডিয়ার কার্যক্রম বৃদ্ধি করতে কাজ করব’- বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

ডা. নাজিফ মাহবুব আরও বলেন, জেনো মিডিয়া বিশ্বের বিভিন্ন বড় বড় ব্রডকাস্টারদের জন্য ২০১৮ সালের অক্টোবর থেকে অ্যাপ বানিয়ে আসছে। এরই ধারাবাহিকতায় বিবিসির অ্যাপটি নিয়ে জেনো মিডিয়ার অ্যাপ টিমের সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছি। জেনো মিডিয়ার রিজিওনাল ডিরেক্টর (দক্ষিণ এশিয়া) হিসেবে আমার কাজ মূলত অ্যাপটির দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন বিষয় সমন্বয় করা।’

অ্যাপটি সম্পর্কে তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘কল-টু-লিসেন’ রেডিও প্রযুক্তিতে জেনো মিডিয়ার একটি অভূতপূর্ব উদ্ভাবন। এ প্রযুক্তির আওতায় একজন শ্রোতা তার মোবাইলে ইন্টারনেট অথবা এফএম রেডিও না থাকলেও শুধুমাত্র একটি লোকাল মোবাইল নম্বর ডায়াল করে রেডিও লাইভ শুনতে পারবেন। এক্ষেত্রে এটি একটি ফোন-কল হিসেবে গণ্য হবে এবং ফোনের চার্জই কাটা হবে। আমেরিকা ও বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মোবাইল ইন্টারনেট-ডাটা ব্যয়বহুল হলেও তারা ফোন-কলের ক্ষেত্রে আনলিমিটেড মিনিট পেয়ে থাকেন। তাই কল-টু-লিসেন সার্ভিসটি এসব দেশে খুবই জনপ্রিয়। যেসব দেশে আমরা কল-টু-লিসেন সার্ভিস উন্মুক্ত করেছি তাদের মধ্যে আছে আমেরিকা, ইংল্যান্ড, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, জার্মানি, জাপান, ফ্রান্সসহ ৩৫টি দেশে।’

‘ধীরে ধীরে এ সংখ্যা আমরা বাড়াচ্ছি। আপাতত ৩৫টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ নেই কারণ বাংলাদেশের মোবাইল ফোনের কলিং সার্ভিসের মডেল ভিন্ন। কিন্তু আমরা কাজ করে যাচ্ছি এবং খুব শিগগিরই বাংলাদেশে কল-টু-লিসেন সার্ভিসটি নিয়ে আসতে পারব।’

পেশায় ‘চিকিৎসক’, তথ্যপ্রযুক্তির বিষয়ে কীভাবে সম্পৃক্ত হলেন- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘ছোটকাল থেকেই বিজ্ঞান ও তথ্য-প্রযুক্তির প্রতি আমার অনেক আকর্ষণ ছিল। রেডিও নিয়ে কাজ করছি ২০১১ সাল থেকে। নিজেই গড়ে তুলি বাংলাদেশের প্রথম আন্তর্জাতিক সাইবার রেডিও, রেডিও বিটজ। মেডিকেল কলেজের তৃতীয় বর্ষে পড়া অবস্থায় ২০১৪ সালে পরীক্ষা দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক মিডিয়া ব্রডকাস্টিং প্রতিষ্ঠান তৎকালীন জেনো রেডিওতে বাংলাদেশের রিজিওনাল কন্টেন্ট ম্যানেজার হিসেবে যোগ দেই। এরপর ক্রমাগত অরগানাইজেসনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে উন্নতির স্মারক রাখায় ২০১৬ সালে জেনো রেডিওর দক্ষিণ এশিয়ার রিজিওনাল ডিরেক্টর হিসেবে পদোন্নতি পাই। বর্তমানে আমি বাংলাদেশ ছাড়াও নেপাল ও পাকিস্তানে জেনো মিডিয়ার (পরিবর্তীত নতুন নাম) কার্যক্রম পরিচালনা করছি।’

জেনো মিডিয়া একটি যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক আন্তর্জাতিক মিডিয়া ব্রডকাস্টিং অরগানাইজেসন। এটি মূলত বিশ্বের বিভিন্ন দেশের রেডিওর সঙ্গে বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে। যেমন- অনলাইন স্ত্রিমিং, অ্যাপ ডেভেলপমেন্ট, কল-টু-লিসেনসহ আরও অনেক কিছু।

বর্তমানে ব্রডকাস্টিংয়ে অনেক বড় বড় ব্রডকাস্টার যেমন- বিবিসি, ভয়েজ অব আমেরিকা, ইএসপিএন, ইউনাইটেড নেশনস, আরএফআই, ডয়চে ভেলেসহ সাত হাজারের বেশি রেডিও আমাদের ক্লায়েন্ট বলে জানান ডা. নাজিফ মাহবুব।

(ওএস/এসপি/মার্চ ০৩, ২০১৯)

পাঠকের মতামত:

২৬ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test