E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

দক্ষিণ এশিয়ায় ইন্টারনেট ব্যবহারে বাংলাদেশ পিছিয়ে

২০১৫ জানুয়ারি ০৬ ১৭:০১:১৪
দক্ষিণ এশিয়ায় ইন্টারনেট ব্যবহারে বাংলাদেশ পিছিয়ে

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে ইন্টারনেট ব্যবহারে এখনো পিছিয়ে বাংলাদেশ। দেশে মাত্র ৪ দশমিক ৬ শতাংশ গৃহে ইন্টারনেট ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে। সার্কভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে কেবল আফগানিস্তানই ইন্টারনেট ব্যবহারে বাংলাদেশের চেয়ে পিছিয়ে রয়েছে।

‘দ্য স্টেট অব ব্রডব্যান্ড ২০১৪: ব্রডব্যান্ড ফর অল’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদন সম্প্রতি প্রকাশ করেছে ব্রডব্যান্ড কমিশন ফর ডিজিটাল ডেভেলপমেন্ট। ইন্টারনেট ব্যবহারে বাংলাদেশের পিছিয়ে থাকার এ চিত্র প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।


ইন্টারন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন ইউনিয়ন (আইটিইউ) ও জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি বিষয়ক সংস্থা ইউনেস্কোর যৌথ উদ্যোগে গঠিত ব্রডব্যান্ড কমিশন দ্রুতগতির ইন্টারনেটের ব্যবহার বৃদ্ধিতে কাজ করছে। ২০১৩ সালে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ফিক্সড ও মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহারের তথ্যের ভিত্তিতে প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে তারা।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, গৃহভিত্তিক হিসাবে ইন্টারনেট ব্যবহারে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে এগিয়ে আছে ভুটান। দেশটির ১৫ দশমিক ৫ শতাংশ গৃহে ইন্টারনেট ব্যবহার হচ্ছে। এ অঞ্চলের অন্যান্য দেশের মধ্যে ভারতে ১৩ শতাংশ, শ্রীলংকায় ১২ দশমিক ৭, পাকিস্তানে ৮ দশমিক ৩ ও নেপালে ৪ দশমিক ৯ শতাংশ গৃহ ইন্টারনেট ব্যবহারের সুযোগ পাচ্ছে। আর বাংলাদেশের চেয়ে পিছিয়ে থাকা আফগানিস্তানে ইন্টারনেট ব্যবহার হচ্ছে ২ দশমিক ১ শতাংশ গৃহে।

শ্রীলংকাভিত্তিক তথ্যপ্রযুক্তি গবেষণা প্রতিষ্ঠান লার্নএশিয়ার সিনিয়র পলিসি ফেলো ও অ্যাসোসিয়েশন অব মোবাইল টেলিকম অপারেটরস অব বাংলাদেশের সাবেক মহাসচিব আবু সাইদ খান এ প্রসঙ্গে বলেন, দেশে দ্রুতগতির ও মানসম্মত ইন্টারনেটের ব্যবহারকারী প্রত্যাশা অনুযায়ী বাড়ছে না। সরকারের ভ্রান্ত নীতির কারণেই ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম ইন্টারনেটের এ শ্লথ প্রবৃদ্ধি।

তিনি বলেন, আইটিইউকে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর এ তথ্য সরবরাহ করে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)। তবে তথ্য সংগ্রহের নিজস্ব কোনো প্রক্রিয়া নেই নিয়ন্ত্রক সংস্থাটির। ফলে আইটিইউর পাশাপাশি সরকারকেও বিভ্রান্ত করছে সংস্থাটি।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, ব্যক্তিপর্যায়ে বাংলাদেশে ইন্টারনেট ব্যবহারের ঘনত্ব দাঁড়িয়েছে ৬ দশমিক ৫ শতাংশে, যা আগের বছর ছিল ৬ দশমিক ৩ শতাংশ। স্বল্পোন্নত দেশগুলোর মধ্যে এ ঘনত্ব বিবেচনায় বাংলাদেশের অবস্থান ২০তম। ২৯ শতাংশ ব্যবহারী নিয়ে ভুটানের অবস্থান এ তালিকায় দ্বিতীয় ও ১৩ দশমিক ৩ শতাংশ নিয়ে নেপাল রয়েছে ১২তম অবস্থানে।

ফিক্সড ব্রডব্যান্ড ব্যবহারের ঘনত্ব বিবেচনায় বিশ্বের ১৯০টি দেশের একটি তালিকা করেছে ব্রডব্যান্ড কমিশন। এ তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান ১৩৬তম। বাংলাদেশে প্রতি হাজারে মাত্র ছয়জন ফিক্সড ব্রডব্যান্ড সংযোগ ব্যবহার করেন। দেশে সক্রিয় মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহারকারী প্রতি হাজারে চারজন। এক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবস্থান তালিকার ১২৮তম স্থানে।

উল্লেখ্য, দেশে এক এমবিপিএস গতির ইন্টারনেটকে ব্রডব্যান্ড হিসেবে সংজ্ঞায়িত করেছে বিটিআরসি। এ হিসাবে সেলফোন অপারেটরদের থ্রিজি এবং ওয়াইম্যাক্স ও আইএসপিগুলোর মাধ্যমেই কেবল ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবা পাওয়া সম্ভব।

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, বাংলাদেশ ও ভারতে কয়েক হাজার ইন্টারনেট কেন্দ্র গড়ে তোলা হয়েছে, যেগুলোর মাধ্যমে সরকারি বিভিন্ন সেবার পাশাপাশি ব্যাংকিং সেবাও পাওয়া যায়। আর এসব কেন্দ্র পরিচালনা করছেন সংশ্লিষ্ট অঞ্চলের অধিবাসীরাই।

বাংলাদেশ নেটওয়ার্ক অপারেটরস গ্রুপের (বিডিনগ) বোর্ড অব ট্রাস্টিজের সভাপতি ও অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডারস অব বাংলাদেশের (আইএসপিএবি) সাবেক সহসভাপতি সুমন আহমেদ সাবির বলেন, বাংলাদেশে জনসংখ্যার ঘনত্ব বিশ্বের অন্য অনেক দেশের চেয়ে বেশি। ফলে ইন্টারনেট ব্যবহারকারী বাড়লেও তা পরিসংখ্যানে তুলনামূলকভাবে কম প্রতিফলিত হয়। তবে উচ্চহারের করারোপ থাকায় এখনো ক্রয়ক্ষমতার আওতার বাইরেই রয়ে গেছে ইন্টারনেট। তাই আগ্রহ থাকলেও মানসম্মত ইন্টারনেট সেবা গ্রহণের সামর্থ্য নেই অনেকের।

গত কয়েক বছরে ব্যান্ডউইডথের মূল্য কমেছে। পাশাপাশি চালু হয়েছে ডাটাভিত্তিক থ্রিজি প্রযুক্তি। তার পরও ইন্টারনেট সেবার নিয়মিত গ্রাহকের সিংহভাগই রাজধানী ও বড় শহরকেন্দ্রিক। এখনো মূলত অভিজাত শ্রেণীর সেবা হিসেবেই পরিগণিত হচ্ছে ইন্টারনেট সেবা। উচ্চমূল্য, ইন্টারনেটভিত্তিক প্রয়োজনীয় সেবা ও সচেতনতার অভাবই এজন্য দায়ী বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

দেশের শীর্ষ সেলফোন অপারেটর গ্রামীণফোনের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশে ডাটাভিত্তিক সেবার সক্রিয় গ্রাহক মাত্র ১১ শতাংশ। ভারতে সেবাটির গ্রাহক ১৫ শতাংশ, পাকিস্তানে ১৫, থাইল্যান্ডে ৩২ ও মালয়েশিয়ায় ৩৭ শতাংশ। দেশে সেলফোন অপারেটরদের আয়ের মাত্র ৪ শতাংশ আসছে ডাটাভিত্তিক সেবা থেকে। প্রতিবেশী দেশ ভারত ও পাকিস্তানেও একই অবস্থা। তবে থাইল্যান্ডে ডাটাভিত্তিক সেবা থেকে ১৭ শতাংশ ও মালয়েশিয়ায় ২২ শতাংশ আয় করছে সেলফোন অপারেটররা।


ইন্টারনেট বিষয়ে মানুষের সচেতনতা ও আগ্রহের অভাবকে সেবাটির প্রবৃদ্ধির ক্ষেত্রে বড় বাধা বলে চিহ্নিত করা হচ্ছে। গ্রামীণফোনের জরিপ অনুযায়ী, সেলফোন অপারেটরদের ইন্টারনেট সেবার নিয়মিত ব্যবহারকারী ৮ শতাংশ। সেবাটির অনিয়মিত ব্যবহারকারী রয়েছে ৯ শতাংশ। এর বাইরে মোট জনসংখ্যার ৮০ শতাংশ ইন্টারনেট ব্যবহার সম্পর্কেই জানেন না। আর ৩ শতাংশের এ সম্পর্কিত জ্ঞান থাকলেও ব্যবহার করেন না। ডাটাভিত্তিক সেবার নিয়মিত গ্রাহকের ৮০ শতাংশই মূলত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক ব্যবহার করেন। এছাড়া ২১ শতাংশ ইউটিউব, ১৪ শতাংশ উইকিপিডিয়া, ১২ শতাংশ সংবাদ মাধ্যম ও ১১ শতাংশ ওয়ার্ডপ্রেস ব্যবহার করেন।

বিটিআরসি প্রকাশিত সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী, নভেম্বর শেষে দেশে ইন্টারনেটের সংযোগ সংখ্যা ৪ কোটি ২৯ লাখ ৯৬ হাজার ছাড়িয়েছে। এর মধ্যে সিংহভাগই সেলফোন অপারেটরদের ডাটাভিত্তিক সেবার গ্রাহক। ছয় সেলফোন অপারেটরের ইন্টারনেট সেবার সংযোগ সংখ্যা ৪ কোটি ১৫ লাখ ১৩ হাজার। এছাড়া আইএসপি ও পিএসটিএনের ইন্টারনেট সেবায় ১২ লাখ ৩৪ হাজার এবং ওয়াইম্যাক্স অপারেটরদের ২ লাখ ৪৯ হাজার সংযোগ চালু রয়েছে।

(ওএস/এএস/জানুয়ারি ০৬, ২০১৪)


পাঠকের মতামত:

২০ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test