E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

ফোরজি ইন্টারনেট সুবিধা এ বছরেই

২০১৭ জুলাই ০৭ ১২:৫৭:৪৭
ফোরজি ইন্টারনেট সুবিধা এ বছরেই

তথ্যপ্রযুক্তি ডেস্ক : ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে দেশব্যাপী চতুর্থ প্রজন্মের তারবিহীন ইন্টারনেট বা ফোরজি ইন্টারনেট সুবিধা চালু হচ্ছে এবছরই। এর ফলে জনগণ পাবে এলটিই প্রযুক্তির তারবিহীন আল্ট্রা গতির ইন্টারনেট ব্যবহার সুবিধা।

একজন থ্রি-জি মোবাইল গ্রাহক এখন যেখানে ইন্টারন্টে থেকে যে কোন কনটেন্ট ডাউনলোড করতে প্রতি সেকেন্ডে মাত্র ১৪ মেগাবাইট গতি পাচ্ছেন, সেখানে ফোরজিতে পাবেন ১ গিগাবাইট পার সেকেন্ড গতির ইন্টারনেট।

এছাড়া ফোরজিতে চলন্ত ট্রেন, গাড়ি বা বাস বসেও ডাটা ট্রান্সফারের গতি হবে প্রতিসেকেন্ডে ১০০ মেগাবাইট। সারা বিশ্বে থ্রি-জি নেটওয়ার্কের গড় ডাউনলোড স্পিড ৪.৪ এমবিপিএস। এলইইটি বা লং টার্ম এভোলুশন প্রযুক্তিকেই ফোর জি বলা হয়।

আইটি বিশেষজ্ঞদের সাথে বলে এসব তথ্য জানা যায়। আইটি জার্নালের তথ্য অনুযায়ী, ফোরজি স্পিডের ক্ষেত্রে বর্তমানে শীর্ষে রয়েছে সিঙ্গাপুর। তবে ফোর জি পরিষেবা প্রদানকারী দেশগুলির মধ্যে এক নম্বরে দক্ষিণ কোরিয়া। বাংলাদেশে ফোরজি স্থাপনে আর্থিক ও কারিগরি সহযোগিতা করছে দক্ষিণ কোরিয়া।

পার্শবর্তী দেশ ভারত পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কা এরমধ্যে ফোর-জি প্রযুক্তি চারু করেছে। বাংলাদেশেও চলতি বছরেই এই প্রযুক্ত চালুর নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি উপদেষ্টা সজিব ওয়াজেদ জয়।

বিটিআরসি সূত্র জানায়, ফোরজি গাইড লাইন প্রনয়নের কাজ শেষ হয়েছে। এখন ফোর-জির লাইসেন্স প্রক্রিয়া শেষ হলেই দেশে ফোরজি নেটওয়ার্ক যাত্রা শুরু করবে।

রাজধানী ঢাকাসহ সকল মেট্রোপলিটন শহর থেকে শুরু করে উপজেলা শহর পর্যন্ত অপটিক্যাল ফাইবার ও বিটিএস ট্রান্সমিশন যন্ত্র স্থাপনের কাজ চলছে। ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তোলার জন্য ‘ওয়্যারলেস ব্রডব্যান্ড নেটওয়ার্ক (ফোরজি, এইটিই) স্থাপন’ প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে ২০১৪ সালের মে মাসে।

এ প্রকল্পের আওতায় উপজেলা পর্যন্ত চলছে ওয়ারলেস ব্রন্ডব্যান্ড নেটওয়ার্ক ট্রান্সমিশনের যন্ত্রপাতি স্থাপনের কাজ। এরমধ্যে প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে ৩০ জুন। তবে প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ থেমে নেই। এই প্রকল্প বাস্তবায়নে খরচ হয়েছে ৯৫৬কোটি ৮৪ লাখ টাকা। এরমধ্যে কোরিয়ান সরকার আর্থিক সহযোগিতা দিচ্ছে ৬১২ কোটি ১৫ লাখ টাকা।

এই প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে দেশের সর্বত্র জনগণ আল্ট্রা স্পীডের ওয়্যারলেস ব্রডব্যান্ড সুবিধা নিশ্চিত হবে। জানা যায়, দেশে এখন ৬ কোটি ৪০ লাখ ইন্টারনেট ব্যবহারকারী রয়েছে।

বিটিআরসি সূত্র জানায়, দক্ষিণ কোরিয়ার এই প্রকল্পের মাধ্যমে বিটিসিএল ফোরজি, এলটিই প্রযুক্তি ব্যবহার করে ইন্টারনেট সেবা পৌঁছে দেবে। লাইসেন্স প্রদান ও তরঙ্গ ফি নির্ধারণের কাজ চলছে। বেসরকারি মোবাইল ফোন অপারেটরগুলো কম দামে ফোর-জি সেবার পুরো স্টেকট্রাম কিনে ব্যবসা করতে চায়।

পক্ষান্তরে সরকার চাইছে আল্ট্রাগতির এই স্পেকট্রামের সল্ট বিক্রি করতে। এ নিয়ে এখন চলছে দর কষাকষি। সেক্ষেত্রে প্রতি মেগাহার্ডজ স্পেকট্রামের দাম দুই কোটি ডলারের নিচে নামিয়ে আনতে সরকারকে অনুরোধ জানিয়ে চিঠি দিয়েছে।

গত ২৯ মে পাঠানো এ যৌথ চিঠিতে সই করেছেন গ্রামীণফোনের মূল কোম্পানি টেলিনর, রবির মূল কোম্পানি আজিয়াটা ও বাংলালিংকের মূল কোম্পানি ভিয়েনের কোম্পানির তিন শীর্ষ কর্মকর্তা। এরবাইরে বাংলা লায়ন, কিউবি, বাংলাদেশ ইন্টারনেট এক্সচেঞ্জ লিমিটেড (বিআইইএল), ম্যাঙ্গো এবং রাষ্ট্রায়ত্ত টেলিযোগাযোগ কোম্পানি বিটিসিএল এই সেবা চালুর লাইসেন্স পেতে পারে বলে জানা যায়। লাইসেন্স বাবদ এসব প্রতিষ্ঠানকে ফি দিতে হবে ২৪৬ কোটি টাকা।

এরমধ্যে রাশিয়ান প্রতিষ্ঠান মাল্টিনেটের মালিকানাধীন বিআইইএল লাইসেন্স বাবদ সরকার নির্ধারিত ফি ২৪৬ কোটি টাকা জমা দিয়েছেন। এছাড়া তাদের জন্য ২ হাজার ৬০০ ব্যান্ডে তরঙ্গ বরাদ্দ চূড়ান্ত করা হয়েছে বলে জানান বিটিআরসির এক কর্মকর্তা।

মোবাইল ফোন অপারেটরদের দাবি, সেল ফোন কোম্পানী গুলোকে যেহেতু থ্রিজির জন্য নিলামে তরঙ্গ বরাদ্দ নিতে হয়েছে এবং এজন্য প্রতি মেগাহার্টজ (২১০০ ব্যান্ড) এর জন্য ২ কোটি ১০ লাখ মার্কিন ডলার সরকারকে দিতে হয়েছে।

তাই তারা চাইছে না ওয়াইম্যাক্স অপারেটর বা ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানকে আধুনিক প্রযুক্তিতে ২৬০০ ব্যান্ড-এর ফোর-জি বা এলটিই লাইসেন্স ও তরঙ্গ বরাদ্দ দেয়া হোক। কার মধ্যেমে কোন সেবা জনগণের কাছে পৌঁছে দেওয়া হবে, এটা রাষ্ট্র ও সরকারের বিষয়।

এখানে অন্য কারো আপত্তি তোলার সুযোগ নেই। তবে সেল ফোন কোম্পানীগুলোকে বিটিআরসির পক্ষ থেকে আস্বস্থ্য করে বলা হয়েছে, নীতিমালা অনুযায়ী, মোবাইল ফোন অপারেটর ছাড়া বাংলা লায়ন বা অন্যকোন ওয়াইম্যাক্স অপারেটরা কোনোভাবেই ভয়েস সার্ভিস দিতে পারবে না। তারা কেবল ফোর-জি সুবিধার ক্যাবল ডেটা সার্ভিস দিতে পারবে।

জানা যায়, ২০০৮ সালে নিলামের ভিত্তিতে ২১৫ কোটি টাকা দরে বাংলা লায়ন ও কিউবিক বিটিআরসি থেকে ওয়াইম্যাক্স লাইসেন্স পায়। এদিকে ব্রডব্যান্ড ওয়ারলেস একসেস (বিডব্লিউএ) নীতিমালা সংশোধনের পর ইন্টারনেট সেবা এলটিইর জন্য নতুন করে নিলামের আর প্রয়োজন পড়ছে না।

ফলে ওয়াইম্যাক্স অপারেটররা খুব কম দামে এই সুবিধা পেয়ে যাচ্ছে। আর বেসরকারি মোবাইল ফোন কোম্পানীগুলির আপত্তি এখানেই।

(ওএস/এসপি/জুলাই ০৭, ২০১৭)

পাঠকের মতামত:

২০ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test