E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

জনগণ চাইলে নির্বাচন করব : ইঞ্জিনিয়ার ইসলাম আহমেদ

২০২২ মে ১০ ১৪:৫৬:০২
জনগণ চাইলে নির্বাচন করব : ইঞ্জিনিয়ার ইসলাম আহমেদ

একজন ইঞ্জিনিয়ার ইসলাম আহমেদ, যতটা না অভিজ্ঞ রাজনীতিবিদ, তারচেয়ে বেশি মানবিক। দীর্ঘ ৩৯ বছর ধরে রাজনীতি করেছেন বঙ্গবন্ধুর আদর্শের উপর দাঁড়িয়ে, পেয়েছেন অগণিত মানুষের স্নেহ-ভালোবাসা। কর্ণফুলী উপজেলায় তাঁর নিজ হাতে গড়া শত শত নেতাকর্মী আর অনুসারি রয়েছে বলে শোনা যায়। দলের দুঃসময়ে তিনি হাল ধরেছেন। সহ্য করেছেন জেল, জুলুম ও কারা নির্যাতন। আন্দোলন সংগ্রামে সব সময় রাজপথে ছিলেন সক্রিয়। আওয়ামী লীগের রাজনীতিই ছিল তাঁর ব্রত। দেখতে দেখতে সামনেই কর্ণফুলী উপজেলা পরিষদ নির্বাচন, তার আগেই অনুষ্ঠিত হচ্ছে চরপাথরঘাটার ইউপি নির্বাচন। কোন নির্বাচনে তিনি আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী? সে খবর জানতে আমাদের প্রতিবেদকের নেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, তাঁর রাজনৈতিক জীবনের খুঁটিনাটি ও এলাকার মানুষের উন্নয়ন এবং কিছু অজানা কথা। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন উত্তরাধিকার ৭১ নিউজের চট্টগ্রাম জেলা প্রতিনিধি জে.জাহেদ

উত্তরাধিকার ৭১ নিউজ: আমরা জানি আপনি মেরিন ফিশারীজ একাডেমির একজন চৌকস ক্যাডেট। কিন্তু কিভাবে ছাত্র রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত হলেন?

ইঞ্জিনিয়ার ইসলাম আহমেদ : ‘১৯৮২ সালে আমি এসএসসি পাশ করে চট্টগ্রাম সিটি কলেজে ভর্তি হই। তখন থেকে কলেজে ছাত্র রাজনীতি শুরু করি। ৮৬ সালে কলেজে প্রথম ক্লাস প্রতিনিধি নির্বাচিত হই। ৮৭-৯০ সালের দিকে কলেজ শাখা ছাত্রলীগের কমিটিতে নির্বাহী সদস্য নির্বাচিত হই। ৯০ এর গণঅভ্যূদয় ও আন্দোলন সংগ্রামে মাঠে ময়দানে সক্রিয় ভূমিকা পালন করি। ৯১ সালে বিএনপি জোট সরকারের আমলে লালদীঘি ময়দানে মিটিং পন্ড করতে গিয়ে পুলিশি হয়রানির শিকার হই। নগরীর জিপিও মোড়ে শিবির ক্যাডার নাছিরের সঙ্গে রাজপথে মুখোমুখি সংঘর্ষে ঘটে। সামনে থেকে এসব ঘটনায় অংশ নিয়েছি। এভাবে কখন যে ছাত্র রাজনীতির সাথে ওতোপ্রোতোভাবে জড়িত গেছি আসলে তা বলা মুশকিল।’

উত্তরাধিকার ৭১ নিউজ: বঙ্গবন্ধুর আদর্শে বিশ্বাসী হয়ে রাজনীতিতে আসার মূল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য কি ছিলো?

ইঞ্জিনিয়ার ইসলাম আহমেদ : ‘রাজনীতিতে যখন আসি তখন একমাত্র ব্রত ও উদ্দেশ্য ছিলো মানুষের কল্যাণে, উন্নয়নে, বিপদে সহযোগিতা করা। একজন নগন্য কর্মী হিসেবে সব সময় চেয়েছি বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার লক্ষ্যে প্রিয় মাতৃভূমিকে জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ‘আজকের বাংলাদেশ’ দেখার সাধ্যমতো চেষ্টা করা।’

উত্তরাধিকার ৭১ নিউজ: ৩৯ বছরের রাজনৈতিক জীবনে সাবেক পটিয়া বর্তমান কর্ণফুলী উপজেলার পাঁচ ইউনিয়নে আশানুরূপ কর্মী সৃষ্টি করতে পেয়েছেন কিনা?

ইঞ্জিনিয়ার ইসলাম আহমেদ : ‘কি করতে পেরেছি আর কি করতে পারিনি তার মন্তব্য করবে আমার উপজেলার জনগণ ও সাধারণ মানুষ। এ প্রশ্নের উত্তর দেওয়া আমার সমীচীন হবে না। তবে শুধু এটাই বলব। আজকে যারা কর্ণফুলী উপজেলায় নেতৃত্ব দিচ্ছেন তাঁর নব্বই ভাগ নেতাকর্মী আমার হাতে গড়া। বিএনপি, জামায়াত অধ্যুষিত এলাকার পাঁচ ইউনিয়নে বঙ্গবন্ধুর আদর্শে কর্মী সৃষ্টি করা ততটা সহজ ছিল না। তবুও বন্ধুর পথটি পাড়ি দিতে পেরেছি। এটাই শান্তি।’

উত্তরাধিকার ৭১ নিউজ:এই দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে আপনি হয়তো নেতা হিসেবে সফল, কিন্তু কখনো জনপ্রতিনিধি হওয়ার চিন্তা বা ইচ্ছা রয়েছে কিনা?

ইঞ্জিনিয়ার ইসলাম আহমেদ : ‘বর্তমান প্রেক্ষাপটে ব্যাপক উন্নয়ন, সহযোগিতা, ন্যায় বিচার, সুন্দর ও সুষ্ঠু সমাজ বিনির্মাণে জনপ্রতিনিধি হতে খুব ইচ্ছে করে। কারণও একটাই। সেটা হলো সাধারণ মানুষের খুব কাছে গিয়ে তাদের দুঃখ, সুখ, কঠিন সময়ে সাথী হওয়া, আগামী প্রজন্মের জন্য শিক্ষার মান বৃদ্ধি ও প্রসার ঘটানো, ড্রেনেজ সিস্টেম আধুনিকায়ন করা, সর্বোপরি মানুষ যা চাই, যা প্রত্যাশা করে, যা স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে তার ব্যবস্থা করতে পারলে নিজেকে ভাগ্যবান মনে করতাম। দলের সুসময়ে কিছু করতে পারলে ভালো লাগতো।’

উত্তরাধিকার ৭১ নিউজ:২০১৬ সালে কিংবা ২০১৭ সালে আপনার জনপ্রতিনিধি হওয়ার সুযোগ ছিলো বলে অনেকেই বলে থাকেন? ওই সময়ে নৌকা প্রতীক না পাওয়ার অভিমানে কী নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করেননি? না, নৌকা ছাড়া পরাজয়ের ভয় ছিল! কোনটা বলবেন?

ইঞ্জিনিয়ার ইসলাম আহমেদ : ‘কঠিন সময়ে দলের হাল ধরেছিলাম। তখনও ভয় পাইনি, এখনো পাব না। আসলে দলের প্রতি সম্মান দেখিয়ে গতবার সুযোগ থাকা সত্বেও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে করিনি। যদিও দলের অনেকেই সে সময় আমাকে নির্বান করতে বলেছিলেন। কিন্তু আমি করিনি। কেননা দলীয় প্রধান জননেত্রী শেখ হাসিনার সিদ্ধান্ত মেনে নেওয়া দরকার ছিল। পাশাপাশি এখনো বলছি, আমাদের কর্ণফুলী-আনোয়ারার রাজনৈতিক অভিভাবক মাননীয় ভূমিমন্ত্রী আলহাজ্ব সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ মহোদয়ের সিদ্ধান্তই আমার কাছে চূড়ান্ত। তবে জনগণ চাইলে আমি একটা নির্বাচন করবো (ইনশাল্লাহ)। সেটা সময়ে বলে দেবে হয়তো।’

উত্তরাধিকার ৭১ নিউজ:রাজনীতির পাশাপাশি আপনি সমাজসেবা ও সামাজিক কর্মকান্ডে কতটা জড়িত?

ইঞ্জিনিয়ার ইসলাম আহমেদ : বলতে গেলে রাজনীতিও একটা সমাজসেবা। রাজনীতি করে কিংবা জনপ্রতিনিধি হলে মানুষের আরো কাছে থেকে সেবা দেওয়া সম্ভব হয়, সেটা সত্য। ১৯৯৬ সালে চাকরি জীবনে থাকাকালিন কর্ণফুলীতে এসে শেখ রাসেল স্মৃতি সংসদ গঠন করি। জামায়াত-শিবিরে সম্পৃক্ত থাকা তরুণদের সুকৌশলে শেখ রাসেল স্মৃতি সংসদে একীভূত করি। তরুণদের মুখে জয়বাংলা শ্লোগান শিখাই। তখন শেখ রাসেল স্মৃতি সংসদের প্রথম আহ্বায়ক কমিটিতে জায়গা পেয়েছিলেন-ইঞ্জিনিয়ার নাজিম উদ্দিন (আহ্বায়ক) ও ইঞ্জিনিয়ার রাশেদুর রহমান মিলন (সদস্য সচিব)।

পরে ১৯৮৭ সালে দুরন্ত দুর্বার গঠন হলে সেখানে ক্রীড়া সম্পাদক এবং পরে উপদেষ্টা পদে আসীন হই। পাশাপাশি আমি খোয়াজনগর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় (পরিচালনা কমিটির সভাপতি), খোয়াজনগর সমাজ কল্যাণ পরিষদ ৬নং ওয়ার্ড (সভাপতি), হাজী ইসমাইল পাটোয়ারী জামে মসজিদ (পরিচালনা কমিটির সভাপতি), হাজী ইসমাইল পাটোয়ারী স্মৃতি সংসদ (প্রধান পৃষ্ঠপোষক), হাজী আলীম উদ্দিন স্কুল এন্ড কলেজ (প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি), কর্ণফুলী উপজেলা ক্রীড়া সংস্থা (সহ-সভাপতি), মেরিন ফিশারীজ একাডেমি এক্স ক্যাডেট এ্যাসোসিয়েশন (সাবেক সাধারণ সম্পাদক), মুক্তিযোদ্ধা ক্রীড়া সংস্থা (সাবেক চেয়ারম্যান) ২০০৪ সাল থেকে ২০০৫ এ আবাহনী প্রিমিয়ার ফুটবল লীগ (সাবেক সদস্য সচিব) ছিলাম। ২০০৯ সালে কর্ণফুলী উপজেলা বাস্তবায়ন কমিটির সদস্য সচিব। ২০২০ সালে চরপাথরঘাটা ইউনিয়ন করোনা প্রতিরোধ সমন্বয় কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক ছিলাম। বলতে পারেন এক কথায় সামাজিক সংগঠক হিসেবে মাঠে ঘাটে কাজ করেছি।’

উত্তরাধিকার ৭১ নিউজ:যদি জিজ্ঞেস করি কার হাত ধরে আপনি মূলধারার রাজনীতিতে আসলেন, তার বিস্তারিত যদি একটু পাঠকদের বলতেন?

ইঞ্জিনিয়ার ইসলাম আহমেদ : ১৯৯৭ সালে দক্ষিণ চট্টগ্রামের আমার রাজনৈতিক গুরু আওয়ামী লীগের প্রয়াত প্রেসিডিয়াম সদস্য আলহাজ্ব আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবু ভাইয়ের হাত ধরে আমি সরাসরি রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হই। ২০০১ সালের নির্বাচনে বাবু ভাইয়ের পক্ষে প্রচারণায় নেমে মাঠে কাজ করেছি। অতীত রেকর্ড ভেঙ্গে স্বাধীনতার পর খোয়াজনগর কেন্দ্রে বিপুল ভোটে বাবু ভাইকে বিজয়ী করেছিলাম। বিএনপি জোট সরকার আমলে মামলা-হামলা ও বহু নির্যাতনের শিকার হই। ২০০৫ সালে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে আটক হই। ২ মাস ১৩ দিন কারাগারে ছিলাম। ২০০১ সাল থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত খোয়াজনগর কেন্দ্রে বিজয়ের ধারা অব্যাহত রেখেছি। ওয়ান ইলেভেনের সময় দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের কার্যকরী কমিটির নির্বাহী সদস্য হিসেবে দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের প্রতিটা কর্মসূচিতে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেছি। গণতন্ত্র পূনরুদ্ধার ও জননেত্রী শেখ হাসিনাকে মুক্তির লক্ষ্যে ভূমিকা পালন করি। ২০১৩ সালে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা জাতীয় শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক পদ হই। দীর্ঘ ৯ বছর ধরে দায়িত্ব পালন করে আসছি। দীর্ঘ রাজনৈতিক পথচলায় বেশ কয়েকবার কারাবরণ করেছি। বিভিন্ন সময়ে বিএনপি জামায়াত কতৃক গাড়ি-ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ ও নাশকতা বিরোধী আন্দোলনে মাঠে থেকেই নেতৃত্ব দিয়েছি। আন্দোলন ও সংগ্রামে সক্রিয় অংশগ্রহণ করে আসছি। দল ও কর্মীর প্রতি ভালোবাসায় এসব করেছি। হয়তো একদিন মূল্যায়ন হবে এ আশায়।’

উত্তরাধিকার ৭১ নিউজ: আমাকে সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।

ইঞ্জিনিয়ার ইসলাম আহমেদ : আপনাকেও ধন্যবাদ।

(জেজে/এসপি/মে ১০, ২০২২)

পাঠকের মতামত:

২০ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test