E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

‘বাঘের বল শক্তি যখন পড়ে যায় তখন হরিণও মশকরা করে’

২০২৩ মে ১১ ১৫:৫৩:২৩
‘বাঘের বল শক্তি যখন পড়ে যায় তখন হরিণও মশকরা করে’

অজানাকে জানার আগ্রহ মানুষের কখনোই ফুরায় না। মানুষেরই ঝোঁক অজানাকে জানা। অজানা বিষয় সম্পর্কে জানতে গেলে কখনো কখনো পাঠকের সামনে এমন কিছু সত্য চলে আসে, যা হয়তো আমাদের ধারণা ও চিন্তার বাইরে। তাই অজানাকে জানার এই যাত্রাতে আপনাদের স্বাগতম। গত ২৪ মার্চ কর্ণফুলী উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী-কমিটি ঘোষণা করা হয়। কমিটি ঘোষণার ৩২ দিন পর কমিটির কৃষি বিষয়ক সম্পাদক মো. হারুন চৌধুরী (নেভী) ব্যক্তিগত ও পারিবারিক কারণ দেখিয়ে পদত্যাগ করেন। কিন্তু যে কোন রাজনীতিবিদ পদত্যাগ করলে তার পদত্যাগ পত্রে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই আমরা দেখি ব্যক্তিগত কারণ। কিন্তু এর পেছনের কাহিনী সহজে কেউ বলতে চান না। মুখ খুলতে চান না। হয়তো দলের প্রতি ক্ষোভ, মান-অভিমান, পাওয়া না পাওয়া, অনেক কিছুই অজানা রয়ে যায়। যা পাঠকের সামনে আসে না।

অবিচল সত্যের পেছনে থাকা আরো কিছু সত্য জানাতে উত্তরাধিকার ৭১ নিউজকে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন সদ্য পদত্যাগ করা কর্ণফুলী উপজেলা বর্ষিয়ান আ.লীগ নেতা মো. হারুন চৌধুরী (নেভী)। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন উত্তরাধিকার ৭১ নিউজের চট্টগ্রাম প্রতিনিধি জে.জাহেদ।

উত্তরাধিকার ৭১ নিউজ: শুরুতেই আপনাকে সালাম জানাচ্ছি, কেমন আছেন আপনি?

মো. হারুন চৌধুরী নেভী: ‘আপনার উপরও শান্তি বর্ষিত হোক। হা বেশ ভালো আছি।’

উত্তরাধিকার ৭১ নিউজ: কর্ণফুলী উপজেলা আওয়ামী লীগের কমিটি ঘোষণা হল মার্চের ২৪ তারিখ। দু’একটি বর্ধিত সভাও হয়ে গেল। কিন্তু ৩২ দিন পর হঠাৎ আপনি কেন পদত্যাগ করলেন?

মো. হারুন চৌধুরী নেভী: ‘পদত্যাগ করে ফেলছি। কারণ এখন তো আর বল শক্তি নাই। আওয়ামী লীগের জন্য ভোট চাওয়ার। সুন্দরবনের বাঘেরও যখন বল শক্তি পড়ে যায়। তখন হরিণও মশকরা করে। আমার বেলাতেও হয়তো এমন হচ্ছে। তাই পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছি।’

উত্তরাধিকার ৭১ নিউজ: বিস্তারিত যদি একটু খুলে বলতেন?

মো. হারুন চৌধুরী নেভী: ‘বীর চট্টলার অবিসংবাদিত নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা মরহুম আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবু ভাইয়ের সময় ছিলো প্রকৃত রাজনীতি। তখন আমরা প্রাণ খুলে রাজনীতি করেছি। উপজেলায় এখন যা আওয়ামী লীগে নেতা আছেন বলতে গেলে সবাই আমার জুনিয়র। কিন্তু আমি এবারও নাকি কৃষি বিষয়ক সম্পাদক।’

উত্তরাধিকার ৭১ নিউজ: আপনি বিগত সময়ে কর্ণফুলী আওয়ামী লীগের কোন পদে ছিলেন?

মো. হারুন চৌধুরী নেভী: ‘২০০৩ সালে আমি পশ্চিম পটিয়া কর্ণফুলী থানা আওয়ামী লীগের কৃষি বিষয়ক সম্পাদক ছিলাম। ২০০৮ সালে শিকলবাহা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক ছিলাম। আমি গত ৪ বার মানে ২০ বছর ধরে উপজেলা আওয়ামী লীগের কৃষি বিষয়ক সম্পাদক। একই পদে আমার ২০ বছর জীবন শেষ। আমি পদত্যাগ না করে কে করবে। আদু ভাইয়ের মতো কী এত বছর এক পদে থাকা যায়! আপনারাই মন্তব্য করুন।’

উত্তরাধিকার ৭১ নিউজ: কিন্তু সদ্য ঘোষিত কমিটিতে সম্পাদক ও সহ-সভাপতি পদে এমনও বহু নেতা রয়েছেন, যারা এবারও একই পদে রয়েছেন। তাঁরা তো পদত্যাগ করেনি? আপনি কেন পদত্যাগ করেছেন?

মো. হারুন চৌধুরী নেভী: ‘আমি তো কোন পদ চাইনি। আমাকে কেন আবারো একই পদ দেওয়া হলো। আপনারা আরেকটি বিষয় দেখেন। উপজেলা নির্বাচনের সময় কর্ণফুলীর ৪টি ইউনিয়নের আ.লীগ নেতারা এক জোট হয়েছিলেন। সবাই এক হয়ে নৌকাকে ডুবানোর জন্য। যা যা করা দরকার, সব করেছেন। এমন কি চরপাথরঘাটার চেয়ারম্যান হাজী ছাবের আহমেদ নৌকা কে ডুবাতে দুই কোটি টাকা খরচ করেছেন। পরে আবার নিজেই ইউপি নির্বাচনে নৌকার বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন। তিনি কিভাবে যেন চেয়ারম্যানও হয়ে গেলেন। এখন দেখি তিনিই আবার নতুন কমিটিতে সহ-সভাপতি পদ পেলেন। আমি তো পদের জন্য একবারও বলিনি। ৭১ সদস্য কমিটির মধ্যে গত উপজেলা নির্বাচনে আমরা ফারুক চৌধুরী’র পক্ষে ছিলাম মাত্র আমরা ৮ জন। বাকি সবাই ছিলো বিরুদ্ধে। আজ দেখছি অন্য দৃশ্য। যা ভাষায় প্রকাশ করাও কঠিন।’

উত্তরাধিকার ৭১ নিউজ: কিভাবে একটু খুলে বলবেন প্লিজ?

মো. হারুন চৌধুরী নেভী: ‘যেমন-বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান আমির আহমদ জুলধায় গিয়ে নিজের নির্বাচন করেছেন। হালিম শিকলবাহায় গিয়ে নির্বাচন করেছেন। বকুল চেয়ারম্যানের মেয়ে আমাদের খুব কাছের আত্মীয়। তাঁর বাবা মারা যাবার আগে বলে গিয়েছিলেন মেয়েটাকে একটু দেখতে। তার পক্ষে পর্যন্ত যেতে পারিনি। কিন্তু ফারুক চৌধুরী’র জন্য এত কিছু করলাম। শুধু নৌকাকে জেতানোর জন্য। আমি তো ফারুক চৌধুরীকে বলিনি যে, আমাকে সহ-সভাপতি পদ দেন। আমি কী কখনো পদ চাইছি কারো কাছে। পদের জন্য আমি কখনো লবিং করিনি। তাহলে কেন আবারও একই পদ দিলেন।’

উত্তরাধিকার ৭১ নিউজ: বিষয়টি কী স্থানীয় সংসদ সদস্য বা ভূমিমন্ত্রী মহোদয় জানেন?

মো. হারুন চৌধুরী নেভী: ‘আমি মিনিস্টার সাহেবের প্রস্তাবকারী ছিলাম। কিভাবে তা বলছি-‘বাবু ভাই মারা যাবার পরে মিনিস্টার সাহেব যখন উপ-নির্বাচন করেছিলেন তখন আমি উনার প্রস্তাবকারী ছিলাম। মন্ত্রী সাহেব আমাকে খুব সম্মান করেন। অথচ প্রায় সময় মন্ত্রীর বাসায় বা কাছে যাইনা বলে অনেক সময় মন্ত্রী আমাকে আদর করে বকাও করেন। প্রায় সময় কেন যাই না বলে।’

উত্তরাধিকার ৭১ নিউজ: নতুন কমিটিতে আবারও আপনাকে কৃষি বিষয়ক সম্পাদক করেছেন, এটাতে কী আপনি অপমান বোধ করতেছেন?

মো. হারুন চৌধুরী নেভী: ‘পদ না চাইলেও আমাকে সম্মান করতে পারতেন কিন্তু তা করেনি। যে কমিটি ঘোষণা করেছে তাতে দেখি জায়গা পেয়েছে জুলধার তেল শুক্কুর। বঙ্গবন্ধু কণ্যা বিদেশে লবিং করে তেল আনেন। দেশের উন্নয়নের চাকা সচল রাখতে আর তেল শুক্কুর জুলধার ডাঙারচর বসে সে তেল চুরি করে ব্যবসায়ি সেঁজেছেন। তেল শুক্কুর তো কখনো আওয়ামী লীগের রাজনীতি করেনি। হঠাৎ এত আওয়ামী লীগার কেন হয়ে গেলেন বুঝলাম না। যারা পদ দিয়েছেন তাঁরা জানবে।’

উত্তরাধিকার ৭১ নিউজ: এতে কী আপনি কর্ণফুলী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক দুর্বলতা উপলব্ধি করেছেন? না অন্য কিছু?

মো. হারুন চৌধুরী নেভী: ‘আমি ভূমিমন্ত্রীর কাছে ৯ টি গঠনতন্ত্র নিয়ে গিয়েছিলাম। যেখানে আওয়ামী লাগ, যুবলীগ, কৃষকলীগ, শ্রমিকলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ, মৎস্যজীবী লীগ, ছাত্রলীগসহ অন্যান্য সহযোগী সংগঠনের। ওয়ার্ড থেকে সব কমিটি পূর্ণাঙ্গ করলে ২৩ হাজার পদ সৃষ্টি হয়। ২৩ হাজার পদ থেকে ৪৬ হাজার কর্মী উঠে আসে। এক সাথে যদি ৪৪ হাজার কর্মী মাঠে নামে বিএনপি তো দুরে থাক। জিন ভূতও ধারে কাছে থাকবে না। কিন্তু আমার কথা তো তাঁরা শোনে না। তাঁরা শোনে ভুট্টো সাহেবদের কথা। তাঁরা তৃণমূলে কর্মী তৈরি করতে পারেনি কিন্তু গুটিকয়েক নেতা তৈরি করতে পেরেছেন। আমি আর কি করব বলেন? আমি কি আওয়ামী লীগের জন্য শহীদ হয়ে যাবো। আমি কি বিএনপিকে ভোট দিতে পারব।’

উত্তরাধিকার ৭১ নিউজ: কর্ণফুলী আ.লীগের সাবেক সভাপতি প্রয়াত জামাল আহমেদ, থানা আ.লীগের সভাপতি মোহাম্মদ আলী ও সদ্য সাবেক সাধারণ সম্পাদক হায়দার আলী রনি যেভাবে রাজনৈতিক মারপ্যাচে কোণঠাসা হয়ে ব্যাকফুটে চলে গেছেন। ঠিক তেমনি আপনিও কী পরিস্থিতির শিকার?

মো. হারুন চৌধুরী নেভী: ‘অবশ্যই ঠিক তাই। তাঁদের মতো আমিও তো কোণঠাসা। আমাকে হাল চাষ করার জন্য ডাকে। জমি চাষ করার জন্য ডাকে। চারা রোপন করার জন্য ডাকে কিন্তু ধান কাটার সময় তাঁরা কেটে নিয়ে যান। এটাই এখন কর্ণফুলীর রাজনীতি।’

উত্তরাধিকার ৭১ নিউজ: গত উপজেলা নির্বাচনে আপনার ভুমিকা কি ছিলো?

মো. হারুন চৌধুরী নেভী: ‘আমি হলফ করে বলতে পারি। এক থেকে একত্রিশ পর্যন্ত যারা কমিটিতে আছে। যেমন ফারুক থেকে শুরু করে ফোরকান পর্যন্ত। ফোরকান ৩১ নম্বরে কোষাধ্যক্ষ। গত উপজেলা নির্বাচনে শুধুমাত্র তিনটি ভোট কেন্দ্রে পাশ করেছিল নৌকা। যেমন-শিকলবাহায় আমার ৭ নম্বর কেন্দ্র, হালিম-মন্নান ও হাসমতের কেন্দ্র। বাকি কেন্দ্র পাশ করতে পারেনি। আমাদের কী এটাই অপরাধ? আমার ৭ নম্বর ভোট কেন্দ্র সারাদিন পাহারা দিয়েছি। ভাত খেতেও বাসায় যাইনি। নৌকাকে পাশ করাতে কত যে কষ্ট করেছি! কিন্তু বিনিময়ে কি পেলাম? আমার কি এটাই ছিল পাওনা?

উত্তরাধিকার ৭১ নিউজ: আপনার পদত্যাগ কী কমিটিকে বিতর্কিত করতে? না অন্য কিছু?

মো. হারুন চৌধুরী নেভী: ‘কমিটি ঘোষণার পরে আওয়ামী লীগের সভা কিংবা অনুষ্ঠানে তো আমি যাইনি। এসব আমি বয়কট করছি। আমি যদি মন্ত্রী সাহেব কে বলতাম, সিনিয়র সহ-সভাপতি পদটি আমার লাগবে। আমি হলফ করে বলতে পারি, তিনি আমাকে অসম্মান/নিরাশ করতেন না। আমি ৪টি কৃষি পুরস্কার পেয়েছি। একটি স্বর্ণ পদক ও ৩টি ব্রোঞ্জ পদক। এসব তো আওয়ামী লীগের আমলে পেয়েছি। এবারও একটি পদক পেতাম ‘ডেইরি আইকন এ্যাওয়ার্ড।’ কিন্তু নাজিম ফোন করায় আর আগ্রহ করিনি। কাউকে বিতর্কিত করতে পদত্যাগ করিনি।’

উত্তরাধিকার ৭১ নিউজ: আপনার পদত্যাগ পত্র কী কর্ণফুলী আওয়ামী লীগ গ্রহণ করেছেন?

মো. হারুন চৌধুরী নেভী: ‘আমি ডাকযোগে এডি করে পাঠিয়েছি। আমি কাঁচা কাজ করি না। আরেকটি ছোট্ট ঘটনা শোনেন, বিএনপির ওয়ার্ড সভাপতি আমাকে আক্রমণ করেছিলেন। আমাকে ইয়াবাবাসীরা মারধর করেছিলেন। আমি ফারুক চৌধুরীকে বলেছি। থানায় অভিযোগ করেছি। আপনারা একটু কল করে ওসিকে সাহেব কে বলেন। কিন্তু ফারুক, দিদার-সোলায়মান কেউ একটা কল করেনি। মাদক ব্যবসায়িরা প্রকাশ্যে শিকলবাহা চৌমুহনীতে ব্যানার টাঙিয়ে রেখেছেন। সব তো বিএনপির লোক। কষ্টের কথা কি বলব আমরা। এর মধ্যে শুনতেছি এই কমিটির নাকি আরও ৪/৫ জন পদত্যাগ করবেন।’

উত্তরাধিকার ৭১ নিউজ: তাঁরা কেন পদত্যাগ করবেন?

মো. হারুন চৌধুরী নেভী: ‘তাঁরা স্ব স্ব উদ্যোগে পদত্যাগ করবেন বলেছেন। কিন্তু আমার স্ত্রী আমাকে বলেছেন-আপনি কেন পদত্যাগ করেছেন। এরা যদি আপনাকে আবার মামলা তামলা দেয়। তখন আমি বলেছি-আমি বঙ্গবন্ধুর সৈনিক মামলা দিলে জেলে যাবো। সমস্যা কী? কিন্তু নীতি আর বিবেকের কাছে প্রশ্নবিদ্ধ হবো না।’

উত্তরাধিকার ৭১ নিউজ: কমিটির বিষয়ে অন্যান্য পদে নতুন যাঁরা এসেছেন, তাঁদের বিষয়ে আপনার কোন মন্তব্য রয়েছে কিনা?

মো. হারুন চৌধুরী নেভী: ‘দেখেন কমিটিতে সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে জায়গা পেয়েছেন রাশেদুর রহমান মিলন। সে তো কর্ণফুলীতে এক দিনের জন্যও রাজনীতি করেনি। সে কি কমিটিতে ডুকা মাত্রই সাংগঠনিক সম্পাদক পদ পায়? আসলে কী জানেন, আমাদের মন্ত্রী মহোদয়কে গুটিকয়েক লোক পাহারা দিয়ে রাখেন। সাধারণ মানুষকে কাছে ঘেঁষতে দেন না। মন্ত্রীর সাথে কথা বলার সুযোগ পায় না। অন্যান্য নেতা কিংবা এলাকার সাধারণ মানুষজন খুব অসহায়। তবে আমাদের মন্ত্রী খুব ভালো লোক। দোষ কিন্তু উনার না, দোষ হলো চামচাদের। দোষ হলো মন্ত্রীকে যারা পাহারা দিয়ে রাখেন।’

উত্তরাধিকার ৭১ নিউজ: আপনি কি মন্ত্রীকে জানিয়ে পদত্যাগ করেছেন?

মো. হারুন চৌধুরী নেভী: ‘আমাকে অনেকে এ কথাটি বলেছেন। আবার অনেকে বললেন-আপনি পদত্যাগ করার আগে মিনিস্টার কে জানাইতেন। আগে একটি ছোট্ট ঘটনা বলি। গত কয়েক মাস আগে উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আমার ঘনিষ্ট বন্ধু সালাম ভাই, কৃষক লীগের সম্মেলনে আমাকে দেখে বললেন, কিছু লাগবে ভাই। নালা বা ড্রেন এলাকার জন্য? তিনি বললেন, জাস্ট মন্ত্রীর সুপারিশ নিয়ে জেলা পরিষদে আবেদনটি জমা দিতে। আমি যোগাযোগ করলে মন্ত্রীর এপিএস বললেন, এসবে ডিউ লেটার লাগবে। আজ ১৩ বছরেও ডিউ লেটার পাইনি। মন্ত্রীর ডিউ লেটার আসতে আসতে সালাম সাহেবের পদও চলে। এখন আপনারাই বলেন মন্ত্রীর কাছে আর চাওয়া পাওয়ার কি আছে।’

উত্তরাধিকার ৭১ নিউজ: নৌ বাহিনীতে চাকরির পরে অবসরে এলেন। মাঠে আবার কৃষক লীগের সাথে জড়িত ছিলেন। বর্তমানে আপনার সময় কাটে কিভাবে?

মো. হারুন চৌধুরী নেভী: ‘আমি এখন গরু ছাগল পালন করি। চাষাবাদ করি। তবে টিআর-কাবিকা খাই না, প্রকল্প খাই না। যারা খায় তাদের তো ব্রিজ করার জন্য প্রকল্প দিয়েছেন। যেমন কোষাধ্যক্ষ ফোরকানকে জুলধা বিলের মাঝে ব্রিজ নির্মাণ করতে দিলেন। এ ব্রিজের কারণে এ রোডে চলাচল করতে সাধারণ মানুষের হাশর কেয়ামত হয়ে গেছে। সে কি ঠিকাদার, না কন্ট্রাকটর। তাঁকে যে ব্রিজ তৈরি করতে দিলেন! এলাকার লোকজন ভোগান্তি নিরসনে ফোরকানের কাছে ফোন করলে তিনি উল্টো বললেন, ‘জুলধায় কি তিনি বেয়াইওয়ালা করবেন। কাজ এভাবে চলবে। অথচ শেখ হাসিনা দেশ কে দাঁড় করাতে জান দিয়ে ফেলতেছে আর ওরা খেয়ে সব শেষ করে দিচ্ছে। আমরা অসহায় এখন।’

উত্তরাধিকার ৭১ নিউজ: কর্ণফুলী রাজনীতি কি স্বস্তির দিকে যাচ্ছে, না দলীয় কোন্দল আর দ্বিধা দ্বন্ধে বিভক্ত?

মো. হারুন চৌধুরী নেভী: ‘ফারুক চৌধুরী কি ছিলো সবাই জানে, ২০০৮ সালে বাবু ভাইকে লড়াই করে আমরা জিতিয়েছি। সেদিন কোথায় ছিলো এই ফারুক সাহেব। ২০ টাকা না দিলে অনেকেই মহল মার্কেটে ভাত খেতে পারতো না। এসব ইতিহাস কর্ণফুলীর লোকেরা সবই জানে। এখন তো এরা সবাই কর্মবীর ও যুবরাজ, আমরা হলাম বৃদ্ধরাজ।’

উত্তরাধিকার ৭১ নিউজ: আ.লীগ ১৪ বছর ক্ষমতায়, এই ১৪ বছরের চাওয়া পাওয়া হিসাবটা কিভাবে মূল্যায়ন করবেন?

মো. হারুন চৌধুরী নেভী: ‘বেশি কিছু বলব না। একটু বলি। আমার বাড়িতে একটি ডিপ টিউবওয়েল বসিয়েছিলো। কিছুদিন পর দেখি নোনা পানি আসতেছে। পরে দেখি টিউবওয়েলটির মোটর এক বিএনপি নেতা নিয়ে তার ঘরে লাগিয়েছে। এটার কী কোন বিচার হয়েছে? আমার এলাকার মোড়ে বীর মুক্তিযাদ্ধা আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবু ভাইয়ের একটা বড় ব্যানার ছিল। বিএনপি নেতা জানে আলম লাঠি দিয়ে আঘাত করতে করতে তা ফেলে দিয়েছেন। এসবের কী বিচার হয়েছে। গত ১৪ বছরে আমাদের কর্ণফুলী আওয়ামী লীগ গুলো বিএনপির কাছে বিক্রি হয়ে গেছে। উপজেলার সবদিকে নেতাদের এত এত বিলবোর্ড আর ব্যানার দেখে অবাক হই। কারণ যেখানে এক সময় আওয়ামী লীগ খুঁজে পাওয়া কঠিন ছিল। সেখানে এত নেতা।’

উত্তরাধিকার ৭১ নিউজ: দক্ষিণ জেলায় ডেইরি ফার্ম করে বেকার যুবকেরা নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারছেন কিনা?

মো. হারুন চৌধুরী নেভী: ‘আমি ৯১-৯৬ সালে বিশেষ বাহিনীর সিকিউরিটি ফোর্স এ ছিলাম। মাল পানি বানালে চাইলে অনেক টাকা বানিয়ে আসতে পারতাম। তারপর ১৯৮১ সালে খুলনার মংলা বন্দরের মার্শাল ল বোর্ডের সদস্য ছিলাম। চাইলে কোটি কোটি টাকা বানিয়ে আসতে পারতাম। গরু-ছাগল পালন করে খেতে হত না। নীতি আর ব্যক্তিত্ব বিসর্জন দিইনি। তারপরেও বলব দক্ষিণ চট্টগ্রামে বিপ্লব ঘটিয়েছি। আমিই ডেইরি ফার্মের প্রথম উদ্যোক্তা। বেকার লোকজন নিজের গ্রামে ডেইরি ফার্ম করতে পারেন। তাতে কারো উপর নির্ভর হতে হয় না ।’

উত্তরাধিকার ৭১ নিউজ: আপনি দক্ষিণ জেলা আ.লীগের কৃষক লীগের সহ-সভাপতি, আবার মাঠের একজন কৃষক হিসেবে কর্ণফুলী উপজেলা থেকে কোন ধরনের সাহায্য সহযোগিতা পান কিনা (যেমন-সার-বীজ-পরামর্শ)?

মো. হারুন চৌধুরী নেভী: ‘আমি কোন ধরনের সহযোগিতা পাই না। উপজেলার কৃষকেরা পান কিনা সেটাও বলতে পারব না।’

উত্তরাধিকার ৭১ নিউজ: ধন্যবাদ আপনাকে, আমাদের কে সময় দেওয়ার জন্য।

মো. হারুন চৌধুরী নেভী: ‘আপনাকেও ধন্যবাদ।’

প্রসঙ্গত, মো. হারুন চৌধুরী পুরো কর্ণফুলী জুড়ে নেভী হারুন হিসেবে পরিচিত। তিনি ১৯৯৬ সালে অবসর গ্রহণ করে কর্ণফুলী উপজেলার শিকলবাহা চৌমুহনীতে গড়ে তুলেন ‘শাহনাজ ডেইরি ফার্ম’। ডেইরি শিল্পে অবদানের জন্য ২০১৫ সালে অর্জন করেন বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পুরস্কার (স্বর্ণ), ২০১৭ সালে চ্যাম্পিয়ন ফার্মার অব দি ইয়ার ‘স্ট্যাণ্ডার্ড চাটার্ড এগ্রো এ্যাওয়ার্ড, ২০২২ সালে দেশের সেরা কৃষি উদ্যোক্তা হিসেবে পান ‘এসিআই দীপ্ত কৃষি এ্যাওয়ার্ড’, একই বছরে পান ‘ডেইরি আইকন এ্যাওয়ার্ড’।

মো. হারুন চৌধুরী প্রকাশ নেভী হারুন অবসর নেয়ার পর আমেরিকান সাহায্যকারী একটি সংস্থার আওতায় প্রশিক্ষণ নিয়ে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে মাত্র দুইটি গাভী নিয়ে ডেইরি ফার্ম ও গরুর ঘাস উৎপাদনের কাজ শুরু করেন। পাশাপাশি এ প্রকল্পের আওতায় স্থানীয়ভাবে এলাকার তরুণ সমাজকে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেন এবং ডেইরি খামার গড়তে উদ্বুদ্ধ করেন। এরপর তিনি দেশ সেরা উদ্যোক্তা নির্বাচত হন। পান স্বর্ণপদকসহ একাধিক পুরস্কার। এরমধ্যে ২০১৫ সালে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজ হাতে তাঁকে তুলে দেন ‘বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পুরস্কার’।

(জেজে/এসপি/মে ১১, ২০২৩)

পাঠকের মতামত:

১৭ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test