E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

দিনাজপুরের পাঁচ উপজেলা মুক্ত দিবস আজ

২০২২ ডিসেম্বর ০৬ ১৩:৫৩:০২
দিনাজপুরের পাঁচ উপজেলা মুক্ত দিবস আজ

শাহ্ আলম শাহী, দিনাজপুর : দিনাজপুরের বোচাগঞ্জ, বীরগঞ্জ, কাহারোল, বিরামপুর ও নবাবগঞ্জ উপজেলা মুক্ত দিবস আজ (৬ ডিসেম্বর)। এই চার উপজেলায় দিবসটি পালন উপলক্ষে শোভাযাত্রা, স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন, বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পন, বিভিন্ন সরকারি/বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসহ সকল ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে জাতীয় পতাকা উত্তোলন, মিলাদ মাহফিল, শহীদ মিনারে আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানসহ গ্রহণ করা হয়েছে ব্যাপক কর্মসূচি।

বোচাগঞ্জ
১৯৭১ সালের এই দিনে বোচাগঞ্জের বীর মুক্তিযোদ্ধারা পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে পরাজিত করে শত্রুমুক্ত করেছিলেন বোচাগঞ্জ।

দীর্ঘ নয় মাসের লড়াই-সংগ্রামে মুক্তিযোদ্ধাদের সুসংগঠিত করেন,বোচাগঞ্জের কৃতিসন্তান সাবেক প্রতিমন্ত্রী তৎকালীন তাজউদ্দীন সরকারের বিশেষ দূত, আওয়ামী লীগ নেতা মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, প্রয়াত জননেতা আব্দুর রউফ চৌধুরী ও বিশিষ্ট রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর ঘনিষ্ঠ সহচর মরহুম আনোয়ারুল হক চৌধুরী নবাব।

এছাড়া বোচাগঞ্জের ১১৫ জন দামাল ছেলে ও একজন আনসার সদস্যসহ মোট ১১৬ জন মুক্তিযোদ্ধা প্রাণপণ লড়াই চালিয়ে ১৯৭১ সালের এই দিনে বোচাগঞ্জকে হানাদারমুক্ত করেন। সম্মুখযুদ্ধে শহীদ হন ধনতলা গ্রামের আব্দুর বারেক ও এনামুল হক, কাঁকদুয়ার গ্রামের চিনিরাম দেবশর্মা, বিহাগাঁও গ্রামের কাশেম আলী, রণগাঁও ইউনিয়নের ধনঞ্জয়পুর গ্রামের গুলিয়া বাংরু, বনকোট চুনিয়াপাড়া গ্রামের বীর্যমোহন রায়সহ সর্বমোট ১৩ জন।

আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর ২০০৯ সাল থেকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক বর্তমান নৌ পরিবহন প্রতিমন্ত্রী ও দিনাজপুর-২ (বিরল-বোচাগঞ্জ) আসনের সংসদ সদস্য খালিদ মাহমুদ চৌধুরীর ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় বোচাগঞ্জের কেন্দ্রীয় স্মৃতি সৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন ও বিভিন্ন কর্মসূচীর মধ্যদিয়ে বোচাগঞ্জ মুক্ত দিবসটি পালন করা হচ্ছে।

বীরগঞ্জ
এই দিনে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করে বীরগঞ্জকে শক্রমুক্ত করেন মুক্তি ও মিত্রবাহিনীর যোদ্ধারা। পার্শ্ববর্তী ঠাকুরগাঁও জেলা ৩ ডিসেম্বর শক্রমুক্ত হওয়ার পর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী সৈয়দপুর (পাকবিহার) অভিমুখে পালিয়ে যাওয়ার সময় মুক্তি ও মিত্রবাহিনীর প্রবল প্রতিরোধের মুখে পড়ে।

হানাদার বাহিনী বীরগঞ্জ থেকে পিছু হটে বীরগঞ্জ-কাহারোল উপজেলা সীমান্তে দিনাজপুর-পঞ্চগড় মহাসড়কে ভাতগাঁও ব্রিজের পূর্বপ্রান্তে অবস্থান নেয়। এখানে পাকিস্তানি বাহিনী ও রাজাকারদের সাথে মুক্তিবাহিনীর তুমুল যুদ্ধে ভাতগাঁও ব্রিজের একাংশ ভেঙে যায়। যুদ্ধে বেশ কয়েকজন মুক্তি ও মিত্রবাহিনীর বীরযোদ্ধা শহীদ হন।

৫ ডিসেম্বর বিকেল ৪টায় মিত্রবাহিনীর বিমান হামলার মধ্যে দিয়ে বীরগঞ্জ শক্রমুক্ত হতে থাকে। রাতেই পুরো এলাকা মুক্তি ও মিত্রবাহিনী পুরোপুরি দখল করে নেয়। সকালে বীরগঞ্জের অলিগলির মুক্তবাতাসে ওড়ে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা।

কাহারোল
আজ ৬ ডিসেম্বর কাহারোল হানাদার মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের স্বাধীনতাযুদ্ধে হানাদার বাহিনীর দখল থেকে আজকের দিনে ভোরে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা ও মিত্র বাহিনী কাহারোল উপজেলা এলাকাকে পাকিস্তানি হানাদার মুক্ত করেন। ৬ ডিসেম্বর সকালে মুক্তি বাহিনী কাহারোল বাজারে অবস্থান নিয়ে বাংলাদেশি পতাকা উত্তোলন করে।

বিরামপুর
১৯৭১ সালে আজকের দিনে পাক হানাদার বাহিনীর হাত থেকে এই উপজেলা মুক্ত হয়।
৪ ডিসেম্বর পাকহানাদার বাহিনী বিরামপুর উপজেলার বিভিন্নস্থানে সর্বাত্মক আক্রমণ চালায়। সেইদিন শহরের রেলগুমটি, কেটরাহাটের শালবাগান, ভেলারপাড় ব্রিজ, ডাকবাংলো ও পূর্ব জগন্নাথপুর এলাকাসহ বিরামপুর শহরের প্রবেশ পথগুলোতে মুক্তিযোদ্ধারা জীবনবাজি রেখে যুদ্ধ করে তাদের (পাকিস্তানিদের) পরাজিত করে ৬ ডিসেম্বর বিরামপুরকে মুক্ত ঘোষণা করেন।


মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন ৭ নম্বর সেক্টরের দায়িত্ব পালন করেন মুক্তিযোদ্ধা অন্যতম বীরসেনানি যথাক্রমে মেজর নাজমুল হুদা ও মেজর নুরুজ্জামান। তাদের নেতৃত্বে বিরামপুরে দেশ স্বাধীন করার লক্ষ্যে মুক্তিযোদ্ধারা মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন। তারা বিরামপুরকে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর হাত থেকে রক্ষা করার জন্য ঘোড়াঘাট রেলগুমটি, কেটরা শালবাগান, ভেলারপাড় ব্রিজ, ডাকবাংলা, পূর্ব জগন্নাথপুর মামুনাবাদ বাঙ্কার বসিয়ে সতর্ক অবস্থায় থাকতেন।

পাকিস্তানি সেনারা ৪ ডিসেম্বর পাইলট স্কুলের সম্মুখে ও ঘাটপাড় ব্রিজে প্রচণ্ড শেলিং করে ভাইগড় গ্রাম দিয়ে তীরমনিতে শেল নিক্ষেপ করে। লোমহর্ষক ও সম্মুখযুদ্ধে কেটরা হাটে ১৬ মুক্তিযোদ্ধাসহ সাত পাকিস্তানি সেনা নিহত ও শতাধিক মুক্তিযোদ্ধা আহত ও পঙ্গুত্ববরণ করেন। এতে উপজেলার ২০ মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন, পঙ্গু হন দুজন, মারাত্মকভাবে আহত হন ১৩ জন।

বিরামপুর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় ৭ নং সেক্টরের মেজর নাজমুল হুদা ও মেজর নুরুজ্জামানের নেতৃত্বে ভারতের কালিয়াগঞ্জ তরঙ্গপুর ক্যাম্পে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে ২৮০ জন মুক্তিযোদ্ধা প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। মুক্তিযুদ্ধে বিরামপুর উপজেলায় ২০ জন বীরমুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। ২ জন পঙ্গু এবং ১৩ জন মুক্তিযোদ্ধা আহত হন।

নবাবগঞ্জ
১৯৭১ সালের স্বাধীনতাযুদ্ধে হানাদার বাহিনীর দখল থেকে আজকের দিনে ভোরে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা ও মিত্রবাহিনীর তীব্র আক্রমণের শিকার হয় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। আক্রমণে পিছু হটতে থাকে হানাদার বাহিনী।
একপর্যায়ে উপজেলার ভাদুরিয়া নামক স্থানে পাকিস্তানি হানাদারদের সাথে মিত্রবাহিনীর তুমুল লড়াই হয়। সেখান থেকে হানাদাররা মিত্রবাহিনীর নিকট পরাজিত হওয়ার আশঙ্কায় পিছু হটতে হটতে ঘোড়াঘাট এলাকায় যায় এবং নবাবগঞ্জ উপজেলা হানাদার মুক্ত হয়।

৯ মাস যুদ্ধ চলাকালে আজকের দিনে ৭নং সেক্টরের অধীনে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা শাহ মাহফুজার রহমান, শামসুল আরেফিন, মকবুল হোসনসহ অন্যান্য মুক্তিযোদ্ধা ও মিত্র বাহিনীর তীব্র আক্রমণের শিকার হয় পাক হানাদার বাহিনী। তাদের আক্রমণের কারণে পিছু হটতে থাকে হানাদার বাহিনী। এক পর্যায়ে উপজেলার ভাদুরিয়া নামক স্থানে পাক হানাদারদের সাথে মিত্র বাহিনীর তুমুল লড়াই হয়। সেখান থেকে পাক হানাদাররা মিত্র বাহিনীর নিকট পরাজিত হবার আশংকায় পিছু হটতে হটতে ঘোড়াঘাট এলাকায় যায় এবং নবাবগঞ্জ উপজেলা হানাদার মুক্ত হয়।

(এসএএস/এএস/ডিসেম্বর ০৬, ২০২২)

পাঠকের মতামত:

১৯ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test