E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

১৯৭১ সালের ১১ নভেম্বর১৪ শহীদের রক্তে লাল হয়ে উঠেছিল বাবুর পুকুর

২০১৪ নভেম্বর ১১ ১১:২৯:০২
১৯৭১ সালের ১১ নভেম্বর১৪ শহীদের রক্তে লাল হয়ে উঠেছিল বাবুর পুকুর

আব্দুস সালাম বাবু: আজ ১১ নভেম্বর বেদনাবিধুর বাবুরপুকুর দিবস। ১৯৭১ সালের ১১ নভেম্বর রাতের আধাঁরে বাড়ি থেকে টেনে হিচড়ে নিয়ে গিয়ে বাবুরপুকুর নামকস্থানে ১৪ জনকে গুলি করে হত্যা করে পাকবাহিনী।

সেই ১৪জন শহীদের স্মৃতি রক্ষার্থে নির্মাণ করা হয়েছে একটি স্মৃতিসৌধ।মঙ্গলবার সেই স্মৃতি সৌধে শহীদদের স্মরণ করবে শহীদ পরিবারের সদস্য ও বগুড়ার সাংস্কৃতিক কর্মীরা। জানা যায়, ১৯৭১ সালের মার্চ মাসে বগুড়া শহরের ঠনঠনিয়া এলাকার কিছু তরুণ ও যুবককে সংগঠিত করেন মুক্তিযোদ্ধা সাইফুল ও পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় নেতা মান্নান পশারী। তাদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সহযোগিতায় মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি চলতে থাকে।

এদিকে মে মাসেই ওই একই এলাকায় গঠন করা হয় পিচ (শান্তি) কমিটি। মুক্তিযুদ্ধের শেষ পর্যায় ১৯৭১ সালের নভেম্বর মাস। অনেকে যুদ্ধের মাঠ থেকে বাড়ি এসেছেন স্বজনদের সঙ্গে দেখা করতে। ১১ নভেম্বর আর রমজানের ২১ তারিখ শেষ রাতে সকলে যখন সেহরী খাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেলো, সেই সময় শান্তি কমিটির সহযোগিতায় পাক হানাদার বাহিনীরা হানা দেয় ঠনঠনিয়ার শাহ পাড়া, মন্ডলপাড়া, তেঁতুলতলা, হাজীপাড়া ও পশারীপাড়াসহ কয়েকটি এলাকায়।

হানাদার বাহিনী সেসব বাড়ি থেকে টেনে হেচরে বের করে আনে পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় নেতা মান্নান পশারী ও তার ভাই হান্নান পশারী, ন্যাপ কর্মী ওয়াজেদুর রহমান টুকু, জালাল মন্ডল ও তার ভাই মন্টু মন্ডল, আব্দুস সবুর ওরফে ভোলা মন্ডল, মুক্তিযোদ্ধা সাইফুল ইসলাম, আলতাফ আলী, বাদশা শেখ, বাচ্চু শেখ, ফজলুল হক খান, টিএন্ডটির অপারেটর নূর জাহান, আবুল হোসেন ও তার পিতা গেদু জিলাদার, ছোটভাই আশরাফ আলী, জনাব আলী ও তার পুত্র জাহাঙ্গীর খন্দকার, সিবের আলীসহ অজ্ঞাতনামা আরও ৩ জনকে।

পাক বাহিনী এই ২১ জনকে বাড়ি থেকে বের করেই হাত ও চোখ বেঁধে গাড়িতে তুলে নেয়। শত কাকুতি-মিনতি কিছুই থামাতে পারেনি হানাদারদের। গাড়িতে তুলে নিয়ে যাওয়া হয় বগুড়া-নাটোর মহাসড়কের পাশে বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলার বাবুরপুকুরে। সঙ্গে ছিল শান্তি কমিটির নেতা। সেই নেতাই আটকৃকতদের মধ্য থেকে ১৪ জনকে সনাক্ত করে দেয়। তার সনাক্ত করা টিএন্ডটির মহিলা অপারেটর নূর জাহানসহ ১৪ জনকে সারিবদ্ধভাবে দাঁড় করিয়ে ব্রাশফায়ারে হত্যা করা হয়। বাকি ৭ জনকে সেখান থেকে ছেড়ে দেয় হানাদাররা।

সেই দিন যারা পাক বাহিনীর হাত থেকে রক্ষা পেয়েছিল তারা হলেন শহীদ আবুলের পিতা গেদু জিলাদার ও ছোট ভাই আশরাফ আলী, জনাব আলী ও তার পুত্র জাহাঙ্গীর খন্দকার, সাবের আলী এবং অজ্ঞাত ২ জন। সেখানে হত্যাযজ্ঞের পর লাশ সারিবদ্ধ ভাবে সেখানে ফেলে রাখা হয়। প্রাণে বেঁচে আসা ৭ জনের কাছে খবর পেয়ে তাদের আত্মীয়-স্বজনরা বাবুরপুকুরে ছুটে যায় লাশের সন্ধানে। কিন্তু সেখান থেকে লাশ আর আনতে পারেনি। সেখানেই কবর দেওয়া হয় ১৪ শহীদের। এই গণকবরস্থলে কোন সমাধি ছিল না। পরে ১৯৭৯ সালে বগুড়া প্রেসক্লাবের উদ্যোগে সেখানকার কবরগুলো পাকা করে দেওয়া হয়।

২০০৯ সালের মাঝামাঝিতে সেখানে স্মৃতি সৌধ স্থাপন করার কাজ শুরু হয়। বগুড়া জেলা পরিষদ এই প্রকল্পের অর্থায়ন করে। বাবুরপুকুরে শহীদদের নামে বগুড়া শহরে তাদের বসবাসের এলাকাটিকে শহীদ নগর হিসেবে নামকরন করা হলেও শহীদ পরিবারের কোন খোঁজ খবর রাখেনা কেউ বলে জানালেন শহীদ হান্নান পশারী ও মান্নান পশারীর ছোট ভাই শহিদুর রহমান মন্টু পশারী। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে শহীদ পরিবারের সদস্যদের স্বাধীনতা ও বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানে ডেকে সান্তনার বাণীই শুধু শুনানো হয়েছে বিগত সময়গুলোতে।

খোঁজ না রাখায় শহীদ পরিবারের সদস্যদের রয়েছে নানা অভিযোগ। বেদনা বিধুর এই দিনটিকে স্মরণ করতে শহীদ পরিবারের সদস্য এবং বগুড়ার সাংস্কৃতিক কর্মীরা সেখানে অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। অনুষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে, শহীদদের আত্মার শান্তিকামনা করা, পুস্পমাল্য অর্পন, স্মৃতি চারণ, ১৪ শহীদের জীবনী নিয়ে আলোচনা সভা।



(এএসবি/এসসি/নভেম্বর১১,২০১৮)

পাঠকের মতামত:

২৩ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test