E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

বগুড়ায় শহীদ স্মরণে নির্মিত বধ্যভূমি থেকে অবাধে বালু উত্তোলন

২০১৪ নভেম্বর ১৯ ১০:৩৭:৩৮
বগুড়ায় শহীদ স্মরণে নির্মিত বধ্যভূমি থেকে অবাধে বালু উত্তোলন

বগুড়া প্রতিনিধি: বালু দস্যুদের অবাধ বালু উত্তোলনে বগুড়ার শহরের ফুলবাড়ি বধ্যভূমি বিলীন । বালু উত্তোলনে ভূমি ধসে গিয়ে শহীদদের স্মরণে নির্মাণ করা বধ্যভুমিটি এখন জলাভূমিতে পরিণত হয়েছে।

শহীদ পরিবারের সদস্যরা বলছেন বালু দস্যুরা চিহ্নিত হলেও কিছুই হয়না তাদেও বিরুদ্ধে। বালুদস্যুদের কারণে বধ্যভুমি হারিয়ে যাওয়ায় শহীদদের স্মরণ করে আর শ্রদ্ধা নিবেদনের জায়গা রইলোনা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বগুড়া শহরের উত্তরে ফুরবাড়ির আমতলি এলাকাটি করতোয়া নদীর তীরে অবস্থিত। এলাকার কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি নদী বোরিং ও শ্যালো ইঞ্জিনচালিত যন্ত্র দিয়ে প্রতিদিন শত শত ট্রাক বালু উত্তোলন করছে। অবাধে এবং দীর্ঘদিন বালু উত্তোলনে আবাদী জমি নদী গর্ভে বিলিন হয়ে গেছে।

নদী তীরবর্তী এলাকায় ভাঙ্গন এবং চাষাবাদ জমিতে বড় বড় ফাটল দেখা দিয়েছে। কোথাও কোথাও আবার জমি ধ্বসে গেছে। ধ্বসে পড়া জমির সাথে অন্যান্য চাষাবাদকৃত জমিও ধ্বসে পড়ার উপক্রম হয়ে পড়েছে। ফুলবাড়ির আমতলী করতোয়া নদী ঘাট থেকে কিছুটা পূর্বে ছোট বালু নামকস্থানে বালু উত্তোলনে আরো ভয়াবহ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

নদী সংলগ্ন প্রতিটি জমিতে ফাটল, কোথাও ধ্বসে গিয়ে নদীর সাথে মিশে গেছে। আবার কোথাও বালু উত্তোলন করে আবাদী জমিতে বিক্রীর জন্য জমিয়ে রাখা হয়েছে। ছোট বালুঘাটেই ফুলবাড়ির বধ্যভুমিটির অবস্থান। ১৯৭১ সালের ২৪ এপ্রিল পাক আর্মিরা ৩৩ জনকে ধরে নিয়ে এসে আমতলী ঘাটের ছোট বালুঘাটে এক সাথে সকলকে গুলি করে হত্যা করে। গুলি করার পর কারো কারো লাশ নদীতে ভেসে যায়। ভাগ্যক্রমে দুই একজন বেঁচেও যায়।

ঘটনার পর পাক আর্মিরা চলে গেলে স্থানীয় কয়েকজন মিলে নিহতদের লাশ বিভিন্নস্থানে মাটি চাপা দিয়ে রাখে। তাদের মধ্যে ফুলবাড়ির আমতলী এলাকার শহীদ নাসির উদ্দিন প্রাং, শহীদ রোস্তম আলী ও শহীদ নুর আলম প্রাং এর নাম পাওয়া যায়।

সংস্কারের পর বধ্যভুমিটি গত ২০১০ সালের ৭ আগষ্ট তৎকালিন বগুড়া মুক্তিযোদ্ধা সংসদের ইউনিট কমান্ডার আমিনুল ইসলাম পিন্টু বধ্যভুমিটির ফলক উন্মোচন করেন। কিন্তু উন্মেচনের পর থেকে আর কেউ বধ্যভুমিটির খোঁজ রাখেননি।

২০১১ সালে শহীদ পরিবারের সদস্যরা বধ্যভুমিটি রক্ষায় উপজেলা প্রশাসনকে জানায়। সংস্কার না করায় গত কয়েকদিন আগে বধ্যভুমিটি ধসে গিয়ে জলাভুমিতে পরিণত হয়েছে।

বধ্যভুমির পাশে দর্শনার্থীদের জন্য ছোট আকারের বিশ্রামাগারটিও ভেঙ্গে পড়েছে। বধ্যভুমির পাশে থাকা গাছপালাও উল্টে জলাভুমির মধ্যে পড়ে আছে।

বালু উত্তোলনকারিরা খুবই প্রভাবশালী। প্রতিদিন শত শত ট্রাক বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। ফুলবাড়ি এলাকায় একটি পুলিশ ফাঁড়ি রয়েছে। তারপরেও অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের পর চড়া মূল্যে অন্যত্র বহন করা হচ্ছে। স্থানীয় এলাকাবাসির অনেকেই অভিযোগ করেছেন এলাকার কয়েকজন প্রভাবশালী ব্যক্তি অবাধে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছে।

বালু উত্তোলন রোধে পুলিশ ও জেলা প্রশাসন থেকে মাঝে মধ্যে অভিযান পরিচালনা করা হলে তা কিছুদিনের জন্য বন্ধ থাকে। সুযোগমত বালু উত্তোলনকারিরা আবারো বালু উত্তোলন করে থাকে। বেশ কিছু শ্যালো ইঞ্জিন আটক করেছে জেলা ও পুলিশ প্রশাসন। তারপরেও থেমে নেই বালু দস্যুরা।

স্থানীয় এলাকাবাসি শামসুর রহমান জানান, যুদ্ধ চলাকালিন সময়ে নিহতদের মধ্যে নাসির উদ্দিন, রোস্তম ও নুর আলমকে কবর দেওয়া হয় এই বধ্যভুমিতে। বাকিদের বিভিন্নস্থানে মাটি চাপা দেওয়া হয়।

শাজাহান আলীসহ স্থানীয় কয়েক ব্যক্তি লাশগুলো টেনে নিয়ে এসে কবর দেন। বধ্যভুমিটি রক্ষায় এটি পাকা করা হলেও এখন বালু দস্যুদের কারনে বধ্যভুটি আর রক্ষা হলো না। ভেঙ্গে পড়ে জলাভুমিতে পরিণত হয়েছে।

বগুড়া পৌরসভার ১৮ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর টিপু সুলতান জানান, তিনি বধ্যভূমির পাশে থেকে বালু উত্তোলন বন্ধ করার জন্য কয়েকবার আহবান জানিয়েছেন। তবুও উত্তোলন বন্ধ হয়নি। পরবর্তীতে জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনকে উক্ত বিষয়ে অবহিত করেছেন বলে তিনি জানান।

বগুড়া সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুর রহীম জানান, অবৈধভাবে বালু উত্তোলন রোধে আমাদের ভ্রাম্যমান আদালত প্রায়ই পরিচালনা করা হয়। চেষ্টা চলছে যেন অবৈধ ও নিয়মের বাহিরে কেউ যেন পরিবেশের ক্ষতি না করে বালু উত্তোলন না করতে পারে।

(এএসবি/এসসি/নভেম্বর১৯,২০১৪)

পাঠকের মতামত:

২৬ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test