E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

আজ ৮ ডিসেম্বর শত্রু মুক্ত হয়ে স্বাধীন হয় বরিশাল

২০১৪ ডিসেম্বর ০৮ ০০:০০:৫৮ ২০১৪ ডিসেম্বর ০৮ ০০:৫০:০০
আজ ৮ ডিসেম্বর শত্রু মুক্ত হয়ে স্বাধীন হয় বরিশাল

বরিশাল প্রতিনিধি : জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে সারাদিয়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন বরিশাল নগরীর কালিবাড়ী রোড এলাকার বাসিন্দা মজিবুর রহমান কাঞ্চন। এজন্য তার দু’ছেলেকে নগরীর পানি উন্নয়ন বোর্ডের অভ্যন্তরের পাক সেনাদের ক্যাম্পের টর্চার সেলে আটক করে স্থানীয় রাজাকাররা কাঞ্চনকে আত্মসর্মপনের জন্য মাইকিং করেছিলো। দু’ছেলের জীবন বাঁচাতে মুক্তিযোদ্ধা কাঞ্চন পাক সেনাদের কাছে আত্মসমর্পন করায় তার দু’ছেলের সামনে বসেই দিনভর অমানুষিক নির্যাতনের পর তাকে (কাঞ্চনকে) ব্রাশ ফায়ার করে হত্যা করা হয়। সেইদিনের লোমহর্ষক ঘটনার বর্ননা করতে গিয়ে আজো আতঁকে ওঠেন শহীদ মুক্তিযোদ্ধা মজিবুর রহমান কাঞ্চনের ছেলে কামাল হোসেন (৫৫)।

স্বাধীনতার ডাকে সারাদিয়ে দেশকে শত্র“মুক্ত করতে দেশের অন্যান্য এলাকার ন্যায় বরিশালসহ গোটা দক্ষিণাঞ্চলের মুক্তিকামী মানুষও মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন। গঠন করেছিলেন সর্বদলীয় সংগ্রাম কমিটি। পাক সেনাদের বিরুদ্ধে গড়ে তোলা হয়েছিলো দুর্বার প্রতিরোধ। ফলে একে একে বরিশাল থেকে পালিয়ে যেতে থাকে পাক সেনারা। ওই বছরের ৮ ডিসেম্বর বরিশাল নগরীকে পাকহানাদার মুক্ত করে বিজয় পতাকা উড়িয়েছিলো বাংলার অকুতোভয় বীর মুক্তিযোদ্ধারা। বিজয়ের উল্লাসে সেদিন মুক্তিযোদ্ধাদের ‘জয় বাংলা-জয় বঙ্গবন্ধু’ শ্লোগানে নগরীর আকাশ-বাতাস মুখরিত হয়ে উঠেছিলো।

সূত্রমতে, ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল পাক বাহিনী আকাশ পথে বরিশালে প্রথম হামলা চালায়। জল, স্থল ও আকাশ পথে ২৭ এপ্রিল দ্বিতীয় দফা হামলা চালানো হয়। বরিশাল শত্র“কবলিত হওয়ার আগেই সরকারী বালিকা বিদ্যালয়ে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিলো স্বাধীন বাংলা সরকারের অস্থায়ী সচিবালয়। মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের সবাইকে নিয়ে এ সচিবালয় গঠিত হয়েছিলো। এখান থেকেই দেশের বিভিন্ন এলাকায় মুক্তিযোদ্ধাদের অস্ত্র ও অর্থ সরবরাহ করা হতো। মুক্তিযোদ্ধাদের সংগঠিত করে এ সচিবালায় থেকে ভারতে প্রশিক্ষনের জন্য পাঠানো হতো। এ সচিবালায়ের সামরিক প্রধান ছিলেন মেজর এম.এ জলিল আর বেসামরিক প্রধান ছিলেন নুরুল ইসলাম মঞ্জুর। মুক্তিযোদ্ধাদের তীব্র প্রতিরোধের মুখে ৮ ডিসেম্বর দুপুরে পাক সেনারা গানবোট, লঞ্চ, স্টীমারে বরিশাল থেকে গোপনে পালিয়ে যেতে শুরু করে। একপর্যায়ে ওইদিন বিকেল তিনটার দিকে মুক্তিযোদ্ধারা চারিদিক থেকে পুরো শহরের নিয়ন্ত্রন গ্রহন করেন।

মুক্তিযোদ্ধা সংগঠক ও যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার সৈয়দ মনিরুল ইসলাম বুলেট ছিন্টু জানান, ১৯৭১ সালের ২৫ এপ্রিল পাক সেনারা ঢাকা-বরিশাল মহাসড়ক দিয়ে এ জনপদে প্রবেশের মাধ্যমে হত্যাযজ্ঞ শুরু করে। তাদের প্রবেশের খবর শুনে গৌরনদীর স্বেচ্ছাসেবক দলের কর্মীরা সাউদেরখালপাড় নামকস্থানে পাক সেনাদের প্রতিহত করার জন্য অবস্থান নেয়। হানাদাররা সেখানে পৌঁছলে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতিরোধের মুখে পরে। সেদিন (২৫ এপ্রিল) পাক সেনাদের সাথে সম্মুখ যুদ্ধে প্রথম শহীদ হন গৌরনদীর নাঠৈ গ্রামের সৈয়দ আবুল হাসেম, চাঁদশীর পরিমল মন্ডল, গৈলার আলাউদ্দিন ওরফে আলা বক্স ও বাটাজোরের মোক্তার হোসেন হাওলাদার। মুক্তিযোদ্ধাদের গুলিতে সেদিন আট জন পাক সেনা নিহত হয়েছিলো। এটাই ছিলো বরিশালসহ গোটা দক্ষিণাঞ্চলে স্থলপথে প্রথম যুদ্ধ এবং এরাই হচ্ছেন প্রথম শহীদ। পাক সেনারা গৌরনদীতে প্রবেশ দ্বার মুখ খাঞ্জাপুর নামস্থানে মোস্তান নামক এক পাগলকে গুলি করে হত্যা করেছিলো। ২৫ এপ্রিল মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে আটজন পাকসেনা নিহত হবার পর তারা ক্ষিপ্ত হয়ে এলোপাথাড়ি গুলি ছুঁড়তে থাকে। ওই নরপশুদের গুলিতে সেইদিন দু’শতাধিক নিরীহ গ্রামবাসী মারা যায়।

সেইদিনের প্রত্যক্ষদর্শী ও মুক্তিযোদ্ধাদের বর্ননায় জানা গেছে, ১৯৭১ সালের এপ্রিল মাসে পাকিস্তানী সেনা সদস্যরা নগরীর পানি উন্নয়ন বোর্ডের অভ্যন্তরে ক্যাম্প বসিয়ে টর্চারসেল স্থাপন করে। নগরীর বীর মুক্তিযোদ্ধা কাঞ্চন ও এ্যাডভোকেট সুধীর চক্রবর্তীর মতো অনেক মুক্তিকামী মানুষদের ধরে এনে এখানে ব্র্যাশফায়ার করে হত্যা করে পাশ্ববর্তী ডোবায় লাশ ফেলা হতো। সেইদিনের শহীদ কাঞ্চনের ছেলে কামাল হোসেন জানান, তার বাবা মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করায় পাক সেনাদের সাথে নিয়ে স্থানীয় আলবদর ও রাজাকাররা তাকেসহ তার ভাই জামাল হোসেনকে ধরে এনে আটক করে রাখে। পরবর্তীতে মাইকিং করে তাদের বাবাকে (মুক্তিযোদ্ধা কাঞ্চন) আত্মসমর্পন করতে বলে। পরে দু’ছেলের জীবন বাঁচাতে তাদের বাবা মুক্তিযোদ্ধা কাঞ্চন আত্মসমর্পন করেন। পাক সেনারা তাদের দু’ভাইয়ের সামনে বসে দিনভর তাকে (কাঞ্চনকে) অমানুষিক নির্যাতনের পর ব্রাশ ফায়ার করে হত্যাকরে লাশ পাশ্ববর্তী ডোবায় ফেলে দেয়। একপর্যায়ে শহীদ কাঞ্চনের অবুঝ দু’শিশু পুত্র কামাল ও জামালকে নির্যাতন করে ছেড়ে দেয়া হয়।

সেইদিনের গণহত্যার স্বাক্ষী হয়ে আজও দাঁড়িয়ে আছে পানি উন্নয়ন বোর্ড এলাকার শত বছরের বট বৃক্ষটি। আর মুক্তিকামীদের লাশ ফেলা সেই ডোবায় (বধ্যভূমিতে) সরকারি ভাবে একটি স্তম্ভ নির্মিত হয়েছে। অপরদিকে নগরীর কালিবাড়ী রোডের ব্রজ মোহন বিদ্যালয় ও নার্সিং সেন্টারের পাশের অরক্ষিত স্থান উন্নয়নের মাধ্যমে শহীদ মুক্তিযোদ্ধা মো. মজিবুর রহমান কাঞ্চনের নামে ২০০৯ সালে তৎকালীন সিটি মেয়র শওকত হোসেন হিরণ “শহীদ মুক্তিযোদ্ধা কাঞ্চন উদ্যান” গড়ে তোলেন। মুক্তিযুদ্ধে নিহতদের স্মরনে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সম্মুখে নির্মিত হয় স্মৃতিস্তম্ভ। নগরীর ৩০ গোডাউন সংলগ্ন বধ্যভূমিতেও নির্মিত হয় স্মৃতিফলক। ২০০৭ সালে নগরীর আমতলা মোড়ে নির্মান করা হয় বিজয় বিহঙ্গ নামে একটি স্মৃতিস্তম্ভ।

স্বাধীনতা যুদ্ধে পাক বাহিনী বরিশাল অঞ্চলে ধর্ষণ, লুটপাট, গণহত্যায় মেতে উঠেছিলো। তাদের হিংস্রতার ছোঁবল ছিলো সভ্যতা বিবর্জিত। তাদের বর্বরতায় শিশু থেকে আবাল বৃদ্ধ বনিতা কেউ রক্ষা পায়নি। জাতির ইতিহাসকে মুছে ফেলার উদ্দেশ্যে নির্বিচারে মানুষ হত্যা করে পাক বাহিনী গণকবর দিয়েছিলো। গণকবরের স্মৃতি রক্ষার্থে বরিশালের বিভিন্নস্থানে ইতোমধ্যে সরকারি ও বেসরকারীভাবে নির্মিত বধ্যভূমিগুলো অযন্তে অবহেলায় পরে রয়েছে। এছাড়া স্বাধীনতার ৪৩ বছর পরেও সরকারীভাবে চিহ্নিত হয়নি অসংখ্য বধ্যভূমি। দক্ষিনাঞ্চলের সবচেয়ে বড় বধ্যভূমি আগৈলঝাড়ার কেতনার বিল আজও সরকারীভাবে স্বীকৃত হয়নি। এছাড়াও একই উপজেলার রাজিহার খ্রিস্টান পাড়ায় একই পরিবারের ৭ জনতে হত্যা ও কাঠিরা বধ্যভুমিতে ব্যক্তি উদ্যোগে নাম ফলক করা হলেও রাস্ট্রিয় উদ্যোগে কোন স্মৃতিসৌধ নির্মান তো দুেেরর কথা সরকারী স্বীকৃতি মেলেনি একাত্তরের বধ্য ভূমি হিসেবে স্বাধীনতার ৪৩ বছর পার হলেও।

বরিশাল নগরীর ত্রিশ গোডাউন এলাকার পানি উন্নয়ন র্বোড সংলগ্ন কীর্তনখোলা নদীর তীরে সরকারীভাবে স্তম্ভ নির্মিত বধ্যভূমি (চিহ্নিত) এখানে গনহত্যা করা হয়েছিলো প্রায় দু’হাজার মুক্তিকামী মানুষকে। তালতলী বধ্যভূমি বেসরকারীভাবে ফলক নির্মিত (চিহ্নিত) এখানে গনহত্যা করা হয়েছিলো অর্ধ শতাধিক ব্যক্তিকে। চরকাউয়া মোসলেম মিয়ার বাড়ি সংলগ্ন খালের পাড় বধ্যভূমি (অচিহ্নিত) এখানে গনহত্যা করা হয়েছিলো প্রায় অর্ধশতাধিক জনগনকে। নগরীর ১নং সিএন্ডবি পুল বধ্যভূমি (অচিহ্নিত) এখানে গনহত্যার শিকার হয়েছিলো ৮ থেকে ১০ জন মানুষ।

গৌরনদীর বাটাজোর হরহর মৌজার মরার ভিটার বধ্যভূমি (অচিহ্নিত) এখানে প্রায় দু’শতাধিক, গৌরনদীর পালরদী নদীর তীরবর্তী সহকারী পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের সম্মুখের বধ্যভূমি (অচিহ্নিত) এখানে প্রায় তিন শতাধিক, গৌরনদীর গয়নাঘাটা পুল বধ্যভূমিতে (অচিহ্নিত) এখানেও প্রায় তিন শতাধিক, গৌরনদী কলেজ সংলগ্ন হাতেম পিয়নের বাড়ির ঘাটলার বধ্যভূমি (অচিহ্নিত) এখানে প্রায় ৫ শতাধিক ব্যক্তিকে গনহত্যা করা হয়েছিলো।

আগৈলঝাড়ার কাঠীরা ব্যাপ্টিষ্ট চার্চ সংলগ্ন বধ্যভূমিতে বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে ফলক নির্মিত (চিহ্নিত) এখানে প্রায় অর্ধশতাধিক, রাজিহার কেতনার বিল (অচিহ্নিত) গণহত্যা করা হয় প্রায় সহস্রাধীক, রাজিহার ফ্রান্সিস হালদার বাড়ির বধ্যভূমিতে ব্যক্তিগতভাবে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মিত (চিহ্নিত) এখানে গণহত্যা করা হয় একই বাড়ির সাত জনকে।

পতিহার গ্রামের বধ্যভূমি (অচিহ্নিত) এখানে গণহত্যা করা হয়েছিলো ২০জনকে। দক্ষিণ শিহিপাশা গ্রামের বধ্যভূমি (অচিহ্নিত) এখানে প্রায় ৩০ জনকে, বাকেরগঞ্জের কলসকাঠী বধ্যভূমি ব্যক্তিগতভাবে ফলক নির্মিত (চিহ্নিত) এখানে প্রায় ৪ শতাধিক, বেবাজ বধ্যভূমি (অচিহ্নিত) এখানে প্রায় দু’শতাধিক, শ্যামপুর বধ্যভূমি (অচিহ্নিত) এখানে প্রায় ৪০ জনকে, বানারীপাড়ার দক্ষিণ গাভা নরেরকাঠী বধ্যভূমি (অচিহ্নিত) এখানে প্রায় শতাধিক, গাভা বাজার বধ্যভূমি (অচিহ্নিত) এখানে প্রায় ৩০ জনকে, গাভা বিল্ববাড়ি বধ্যভূমি (অচিহ্নিত) এখানে ৭ জনকে, গাভা পূর্ববেড় মহল বাওনেরহাট বধ্যভূমিতে (অচিহ্নিত) প্রায় ৪০ জন, গাভা রাম চন্দ্রপুরের পূর্ববের মহল (অচিহ্নিত) এখানে অর্ধশতাধিক, বাবুগঞ্জের ক্যাডেট কলেজ বধ্যভূমিতে (অচিহ্নিত) প্রায় অর্ধশতাধিক, উজিরপুর বড়াকোঠা দরগাবাড়ি বধ্যভূমিতে (অচিহ্নিত) প্রায় শতাধিক, উত্তর বড়াকোঠা মল্লিক বাড়ি বধ্যভূমিতে (অচিহ্নিত) ১০ জন, বড়াকোঠা মুক্তিযুদ্ধের মিলন কেন্দ্র সংলগ্ন বধ্যভূমিতে (অচিহ্নিত) এখানে প্রায় অর্ধশত, খাটিয়ালপাড়া বধ্যভূমিতে (অচিহ্নিত) ২০জন, বড়াকোঠা চন্দ্র কান্ত হালদার বাড়ির বধ্যভূমিতে (অচিহ্নিত) ১০জন।

উজিরপুরের নারায়নপুর বধ্যভূমিতে (অচিহ্নিত) প্রায় অর্ধশতাধিক, মুলাদীর পাতারচর গ্রামের বধ্যভূমিতে (অচিহ্নিত) প্রায় অর্ধশতাধিক, মুলাদী নদীর দক্ষিনপাড় বেলতলা বধ্যভূমিতে (অচিহ্নিত) ২০ জন, মেহেন্দিগঞ্জ থানা সংলগ্ন বধ্যভূমিতে (চিহ্নিত) প্রায় ৩ শতাধিক, পাতারহাট দক্ষিন পাড়ের খলিল মোল্লার বাড়ির বধ্যভূমিতে (অচিহ্নিত) ১২ জন ঘুমন্ত মুক্তিযোদ্ধাকে, পাতারহাট গার্লস্ স্কুল সংলগ্ন ব্রীজের গোড়ায় বধ্যভূমিতে (চিহ্নিত) প্রায় শতাধিক, ঝালকাঠী জেলার নলছিটি সুগন্ধা নদীর তীরের বধ্যভূমি (অচিহ্নিত) ১৩ জন, নলছিটি মানপাশা ঋৃষিপাড়া বধ্যভূমিতে (চিহ্নিত) প্রায় অর্ধশতাধিক, স্বরূপকাঠীর কুড়িয়ানা খালের বধ্যভূমিতে (অচিহ্নিত) প্রায় সহস্রাধীক, কুড়িয়ানা জয়দেব হালদারের বাড়ির বধ্যভূমিতে (চিহ্নিত) প্রায় ৫ শতাধিক, পূর্বজলাবাড়ী খালপাড় বধ্যভূমিতে (অচিহ্নিত) প্রায় দু’শতাধিক মুক্তিকামী মানুষকে নির্মম ভাবে গণহত্যা করা হয়। উল্লেখ্য, নলছিটি, ঝালকাঠী, কুড়িয়ানা ও স্বরূপকাঠী ১৯৭১ সালে বরিশাল জেলার অন্তর্ভূক্ত ছিলো।

জেলার মধ্যে সর্বশেষ পাক হানাদার মুক্ত হয়েছিলো গৌরনদী। সরকারি গৌরনদী কলেজের স্থায়ী ক্যাম্পে অবস্থানরত পাক সেনারা ১৯৭১ সালের ২২ ডিসেম্বর মিত্র বাহিনীর মেজর ডিসি দাসের মাধ্যমে মুক্তিবাহিনীর কাছে আতœসমর্পন করেছিলো। এরপূর্বে কলেজের পশ্চিম দিক থেকে মুজিব বাহিনী ও পূর্বদিক থেকে নিজাম বাহিনী আক্রমন করেন। দীর্ঘ ২৮ দিন যুদ্ধের পর পাক সেনারা পরাস্ত হয়। মুজিব বাহিনীর নেতৃত্বে ছিলেন কৃষক নেতা আব্দুর রব সেরনিয়াবাতের জেষ্ঠপুত্র আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ। তার চাচাতো ভাই আ. রকিব সেরনিয়াবাত, কসবার ফজলুর রহমান হাওলাদার, বিল্বগ্রামের মেজর শাহ আলম তালুকদার ছিলেন তার সহযোগী। নিজাম বাহিনীর নেতৃত্বে ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা নিজাম উদ্দিন আকন।

স্বাধীন দেশের সর্বশেষ পাক হানাদার মুক্ত গৌরনদীতে ১৯৭৫ সালের ৭ মে তৎকালীন মন্ত্রী আব্দুর রব সেরনিয়াবাত শহীদ মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতি সৌধ নির্মানের জন্য ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেছেন। ওই বছরের ১৫ আগস্ট ভয়ালকালো রাতে তিনি শহীদ হন। ফলে থমকে যায় স্মৃতি সৌধ নির্মানের উদ্যোগ। স্বাধীনতা যুদ্ধের দীর্ঘ ৪৩ বছরেও সাবেক মন্ত্রী শহীদ আব্দুর রব সেরনিয়াবাতের সেই স্বপ্ন আজও বাস্তবায়িত হয়নি। গৌরনদীতে আজও নির্মিত হয়নি শহীদ মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতি সৌধ। স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা গৌরনদীতে শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের স্মৃতি সংরক্ষনে জরুরি ভিত্তিতে স্মৃতি সৌধ নির্মানের জন্য প্রধান মন্ত্রী ও সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয়ের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

বীর মুক্তিযোদ্ধা মহিউদ্দিন মানিক বীর প্রতীক বলেন, জাতির প্রত্যাশা পুরনের চেয়ে গ্লানি বেশী। যে গ্লানি নিয়ে আজো আমরা লড়াই করি। তিনি মহান বিজয় দিবসের পূর্বে দন্ডাদেশপ্রাপ্ত চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির রায় কার্যকরের দাবি করেন। এখনও অনেক প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা তালিকাভুক্ত হতে পারেনি। অথচ জীবন বাচাতে পালিয়ে থাকা ব্যাক্তিরাও টাকার বিনিময়ে মুক্তিযোদ্ধার সনদ নিয়ে ভাতাসহ রাস্ট্রিয় সুযোগ সুবিধা ভোগ করে আসছে। যা জাতির জন্য কলংকময়। তিনি আরো জানান, ১৯৭১ সালে পাকিস্তানী সরকার কর্তৃক গঠিত তথাকথিত পাকিস্তানের জাতীয় শান্তি কমিটির প্রভাবশালী ১০৪ জন সদস্যের মধ্যে বরিশালের রয়েছে ৩১ জন। আর এই ৩১ জন সদস্যকে নিয়ে ১৯৭১ সালের ২৮ এপ্রিল বরিশালে প্রথম গঠিত হয় তথাকথিত স্বাধীনতা বিরোধী জেলা শান্তি কমিটি।


(টিবি/পি/ডিসেম্বর ০৮, ২০১৪)

পাঠকের মতামত:

২৫ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test