E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

শিরোনাম:

আজ নাটোরের নলডাঙ্গা মুক্ত দিবস

২০১৪ ডিসেম্বর ১৪ ১৩:৪৬:৩৯
আজ নাটোরের নলডাঙ্গা মুক্ত দিবস

নাটোর প্রতিনিধি : ১৪ ডিসেম্বর নাটোরের নলডাঙ্গা হানাদার মুক্ত দিবস। এইদিন বীর মুক্তিযোদ্ধারা নলডাঙ্গাকে পাক বাহিনী ও তাদের দোসর রাজাকার, আলবদর ও আলসামস বাহিনীর কবল থেকে মুক্ত করে । দিবসটি উপলক্ষে এবার সদ্য উপজেলায় উন্নীত নলডাঙ্গা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, প্রেসক্লাবসহ বিভিন্ন সংগঠন প্রথমবারের মত নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। অনুষ্ঠান সুচির মধ্যে রয়েছে পতাকা উত্তোলন, আনন্দ শোভাযাত্রা, শহীদ বেদীতে পুষ্পমাল্য অর্পণ, আলোচনা সভা ও  দোয়া খায়ের।

স্থানীয়রা জানান, ১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ মধ্যরাতে ইতিহাসের বর্বরোচিত গণহত্যার পর মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়। তখন স্থানীয় মুক্তিকামী মানুষ যুদ্ধে অংশ নিতে কেউ কেউ ভারতে আবার কেউ কেউ স্থানীয় ভাবেই ট্রেনিং শেষ করে মুক্তিযুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়ে। শুরু হয় হানাদারদের কবল থেকে দেশকে মুক্ত করার চূড়ান্ত প্রতিরোধ লড়াই মুক্তিযুদ্ধ। সে মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর নির্বিচার হত্যা, নারী ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ আর লুটপাটের কলঙ্কিত অধ্যায়ের বিপরীতে অবস্থান নেয় মুক্তিযোদ্ধারা।

অন্যান্য এলাকার মত এই উপজেলার খোলাবাড়িয়া, পাটুল, হাপানিয়া, মাধনগর, সোনাপাতিল, ডাকাতিভিটা ও নলডাঙ্গা গ্রাম থেকে বেশ কিছু সংখ্যক মুক্তিযোদ্ধা বিভিন্ন এলাকায় যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করে। তারা বিভিন্ন এলাকায় সম্মুখ যুদ্ধে শত্র“কে পরাস্ত করে নিজ এলাকায় ফিরে আসে। পরে তারা নলডাঙ্গা এলাকাকে শত্র“মুক্ত করতে অবস্থান নেয়। তাদের এই অবস্থানের খবর চারিদিকে ছড়িয়ে পড়লে স্থানীয় রাজাকার বাহিনী পাক সেনাদের জানিয়ে দেয়। ফলে পাক সেনাদের আনাগোনা বেড়ে যায়। ১৯৭১ সালের ৮ ডিসেম্বর উপজেলার বিশাল হালতি বিলের অভ্যন্তরের খোলাবাড়িয়া গ্রামে অবস্থান নেওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে তিনদিন ধরে অসম যুদ্ধ হয়। এই যুদ্ধে আব্দুর রাজ্জাক নামে এক মুক্তিযোদ্ধা শহীধ হন। যুদ্ধের রসদ ফুরিয়ে গেলে মুক্তিযোদ্ধা পিছু হটে অন্য গ্রামে আশ্রয় নেয়। পরে পাক সেনারা ওই গ্রামে হানাদিয়ে বাড়ি ঘরে আগ্নিসংযোগ ও লুটপাট করে।

এসময় তারা জসিম উদ্দিন নামে একজনকে গুলি করে হত্যা করে। ১৩ ডিসেম্বর সকালে মুক্তিযোদ্ধারা নলডাঙ্গা রেলওয়ে স্টেশন প্লাটফর্মের দক্ষিনে নওপাড়া ব্রীজের পাশে রেললাইন উপড়ে ফেলে। এতে একটি ট্রেন লাইন চ্যুাত হয় এবং রেল চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। তবে কেউ এতে হতাহত হয়নি। পরে তা মেরামত করলে রেল চলাচল স্বাভাবিক হয় ১৪ ডিসেম্বর সকালে পুনরায় মুক্তিযোদ্ধারা রেল লাইনে উপড়ে ফেলে এবং বারনই নদীর উত্তর পার্শ্বে বাঙ্কার খনন করে অবস্থান নেয়। মুক্তিযোদ্ধাদের অবস্থানের খবর পেয়ে বিকেলে পাকসেনারা বাসুদেবপুর থেকে ট্রেনে নলডাঙ্গায় রওনা দেয়। পথে নওপাড়া ব্রীজের কাছে পৌছলে লাইন উপড়ে ফেলা দেখে তারা ট্রেন থেকে নেমে মার্চ করতে করতে স্টেশন প্লাটফর্মের দিকে অগ্রসর হয়।

পাক সেনারা নলডাঙ্গা রেলওয়ে স্টেশন প্লাট ফর্মে ওঠা মাত্র নদীর উত্তর পাশ থেকে মুক্তিযোদ্ধারা গুলি বর্ষণ করতে থাকে। পাক সেনারাও পাল্টা গুলি বর্ষণ শুরু করে। এভাবে প্রায় চার ঘন্টাব্যাপী চলে যুদ্ধ। খবর পেয়ে এয়ার মার্শাল আবুল বাশার ও খালেদ মোশারফ দুটি বিমান নিয়ে আকাশে টহল দিতে থাকে। একপর্যায়ে পাক সেনাদের ওপর বিমান থেকে গুলি বর্ষণ ও বোমা ছুড়তে থাকে। পাক সেনারা পিছু হটতে থাকে। পরে নলডাঙ্গা শত্রুমুক্ত হয়। এই যুদ্ধে কোন হতাহতের ঘটনা না ঘটলেও পাক সেনারা গাংগইল গ্রামের আব্দুর রাজ্জাক নামে এক যুবককে গুলি করে মেরে ফেলে এবং এলাকার মানুষের বাড়ি ঘরে অগ্নিসংযোগ ও লটপাটের কারনে ব্যাপক ক্ষতি হয়।
(এমআর/এএস/ডিসেম্বর ১৪, ২০১৪)

পাঠকের মতামত:

২৯ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test