E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

'ত্রানের একটা ঘর পাইছি, কিন্তু হেইডা এ্যাহন কবর মনে হয়'

২০১৫ জানুয়ারি ২৬ ১৯:২৬:৫১
'ত্রানের একটা ঘর পাইছি, কিন্তু হেইডা এ্যাহন কবর মনে হয়'

কলাপাড়া(পটুয়াখালী) প্রতিনিধি : ১০ দিন ধরে হাসপাতালে যন্ত্রণায় ছটফট করছে নুরুন্নাহার বেগম (৩৫)। তার বেডের পাশে আপন বলতে দুই শিশু সন্তান মুসা (৭) ও আবু বকর সিদ্দিক (৩)। অন্যের কাছে ধার ও হাত পেতে স্ত্রীর চিকিৎসা করাতে হচ্ছে মুক্তিযোদ্ধা মোস্তফা ভূইয়াকে (৭১)। পাষন্ড ভাই বাহাউদ্দিন ও তার সহযোগী সাইফুল, জাকির হেসেন ও দাদা আলম শরীফ বোনের সম্পতি দখল করতে নুরুন্নাহারের উপর এ নির্মম নির্যাতন করে। পটুয়াখালীর কলাপাড়ার নীলগঞ্জ ইউনিয়নের হলদিবাড়িয়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটেছে।

গত ১৬ জানুয়ারি বিকালে বৃদ্ধ মুক্তিযোদ্ধা মোস্তফা ভূইয়াকে ভাইদের মারধর থেকে বাঁচাতে গিয়ে নির্মম নির্যাতনের শিকার হন নুরুন্নাহার। আর্থিক সংকটে টানা তিনদিন বিনা চিকিৎসায় বাসায় যন্ত্রনায় ছটফট করার পর গত ২০ জানুয়ারি খবর পেয়ে কলাপাড়া উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার বদিউর রহমান বন্টিন তাকে হাসপাতালে ভর্তি করেন। মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী হয়েও সে ঠিকমতো চিকিৎসা পায়নি। পায়নি ঔষধ। এভাবে পাঁচদিন হাসপাতালের বেডে শুইয়ে ভাইদের মারধরের ব্যথায় ছটফট করার পর সংবাদকর্মীরা হাসপাতালে গিয়ে জানতে পেরে তার উন্নত চিকিৎসা ও ঔষধ সরবরাহ করার উদ্যেগ নেয়। উপজেলার হলদিবাড়িয়া গ্রামে রাস্তার পাশে মায়ের দেয়া এক টুকরো জমিতে বসবাস এই মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের। এক সময়ে “ঝুপড়ি ঘর ও তাদের জীবন যন্ত্রণার সচিত্র সংবাদ গত বছরের ২০ জানুয়ারি “সকালের খবর” পত্রিকায় প্রকাশের পর এনজিও কোডেক মুক্তিযোদ্ধা মোস্তফা ভূইয়াকে ( মুঃনং-১৩৩১৮১) একটি ঘর প্রদান করে গত ছয় মাস আগে। কিন্তু সেই ঘরে এখন এ পরিবারের বসবাস অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। বোনের এ ঘর ও জমি দখল করতে একেরপর এক হামলা, হুমকি ও মারধরে এখন তাদের ঠিকানা হয়েছে হাসপাতাল।

কলাপাড়া হাসপাতালে বসে যন্ত্রনায় ছটফট করতে করতে নুরুন্নাহার বলেন“ ত্রানের একটা ঘর পাইছি, কিন্তু হেইডা এ্যাহন কবর মনে হয়। ঘরে ঢোকলেই মনে হয় এই বুঝি হামলা হইলো। দুইডা ছোড পোলা লইয়া রাইতে ডরে ডরে থাহি। অগো বাহে তো মাছ ধরে, সাগর নদীতে হ্যার রাইত কাডে। মোর ভাইরা মোরে এইহানে থাকতে দেবে না। কয়বার যে মারছে হ্যার কোন হিসাব নাই”। সে জানায়, এ হামলার কিছুদিন আগেও নুরুন্নাহারকে মারধর করে ভাই বাহাউদ্দিন। আর কতো মাইর খামু এই কবরের ( বসবাসের জায়গা ) লইগ্যা আপনারা কইতে পারেন। জমির লাইগ্যা স্বামীরে মারতে মারতে কাইত কইর‌্যা মাডিতে হালাইয়া দেছে। হ্যারে বাঁচাইতে গিয়া মুই এ্যাহন হাসপাতালে। মোরে লাডি,মুগইর দিয়া মারছে। তাবড় ও ঘুষি দেছে। যহন আমি মাডিতে পইর‌্যা গ্যাছি তহন খালি পাড়াইছে আর গালি দেছে।

দারিদ্রতার কারণে অপুষ্টিতে ভুগতে ভুগতে এখন শরীরের হাড় কয়টা গায়ে দেয়া কম্বলের উপর দিয়েই বোঝা যাচ্ছিল। সারা শরীরের কালো ছোপ ছোপ মারধরের চিহ্ন। ব্যাথায় সারা শরীর কাঁপছে। ভাইদের নির্যাতনের কথা বলতে গিয়ে বারবার আবেগে গলা আটকে যাচ্ছিল। হাতে এক মগ পানি নিয়ে একটু একটু মুখে দিয়ে গলা ভিজিয়ে বর্ননা দেয়ার চেষ্টা করছিলো সেই মারধরের। সেই সময় তার দু’চোখের জল গড়িয়ে বালিশ ভিজে মেঝেতে পরছিলো। কলাপাড়া হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার ডা. জেইচ খান লেলীন জানান, তিনি জানতেন না নুরুন্নাহার একজন বীর মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী। প্রাথমিকভাবে হাসপাতালে যে ঔষধ ছিলো তা তাকে দেয়া হয়েছে। এখন থেকে তার চিকিৎসার সব ঔষধ হাসপাতাল থেকে সরবরাহ করা হবে বলে জানালেন কলাপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য প্রশাসক ডা আব্দুর রহিম।

কলাপাড়া উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার বদিউর রহমান বন্টিন জানান, এই মুক্তিযোদ্ধা পরিবারকে উচ্ছেদের জন্য এলাকার একটি ভূমিদস্যু চক্র জোড় চেষ্টা চালাচ্ছে। একাধিকবার মারধর করা হয়েছে। তিনিই নুরুন্নাহারকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করিয়েছেন। এ ব্যাপারে কলাপাড়া থানায় অভিযোগ দেয়া হয়েছে। স্থানীয়ভাবে বিষয়টি ফয়সালা না হলে মামলা করা হবে। তবে এই মুহুর্তে দরকার নুরুন্নাহারের উন্নত চিকিৎসা।

(এমকেআর/পি/জানুয়ারি ২৬, ২০১৫)

পাঠকের মতামত:

০৩ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test