E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

১ মে : শেরপুরের জগৎপুর গণহত্যা দিবস আজ

২০১৫ মে ০১ ১২:১৬:১৭
১ মে : শেরপুরের জগৎপুর গণহত্যা দিবস আজ

শেরপুর প্রতিনিধি :শেরপুর শহর থেকে ১৪ কিলোমিটার দূরে ঝিনাইগাতী উপজেলার একটি নিভৃত গ্রাম জগৎপুর। একটি সরু রাস্তা ছাড়া এখনও সেখানে তেমন কোন উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি। দীর্ঘ ৪৪ বছরেও সংরক্ষণের কোন উদ্যোগ না নেওয়ায় পাকহানাদারদের নির্মম বর্বোরোচিত গণহত্যার অধ্যায়টি মানুষ যেন ভুলেই যেতে বসেছে। আজো জগৎপুর গণহত্যার শহীদদের কোনো তালিকাও তৈরী হয়নি।

স্থানীয় বাসিন্দা ও শহীদ পরিবারের সদস্যদের সাথে কথা বলে জানা যায়, ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের পর থেকেই এ গ্রামে এসে আশ্রয় নেয় ময়মনসিংহ, জমালপুর, শেরপুরের হিন্দু সম্প্রদায়ের বহু পরিবার। এ সময় আপনজনের মতো এ গ্রামের অসহায় মানুষের পাশে এসে দাঁড়ান পাশ্ববর্তী কান্দুলি ও মালিঝিকান্দা গ্রামের বাসিন্দারা। তাই এ গ্রামের হিন্দু পরিবারগুলো ও আশ্রিতরা মোটামুটি শান্তিতেই ছিলেন। কিন্তু ২৬ এপ্রিল পাকহানাদাররা গোটা শেরপুর দখল করে ঝিনাইগাতির আহমদনগরে সেক্টর হেডকোয়ার্টার স্থাপন করলে দেশীয় পা-চাটা কুকুরদের প্ররোচনায় মেতে উঠে লুটপাট, নির্যাতন ও হত্যাযজ্ঞে। ১৯৭১ সালের ১লা মে। জগৎপুর গ্রামের কর্মব্যস্ত দিনের সূচনা লগ্নে রাজাকার ও পাক হানাদাররা পুরো গ্রামটিকে তিনদিক থেকে ঘিরে ফেলে। সেদিন যারা ওই হায়েনাদের সামনে পড়েছিল তারা ব্রাশ ফায়ারে ছিন্নভিন্ন হয়ে লুটিয়ে পড়েছিল মাটিতে। জীতেন্দ্র চন্দ্র দত্ত পালিয়ে আশ্রয় নিয়েছিল ওই গ্রামের বিত্তবান প্রভাবশালী কৃষক মানিক ফকিরের বাড়িতে। হানাদাররা ওখানে গিয়েই তাকে ধরে ফেলে। জানতে চায়, সে হিন্দু না মুসলমান। তাকে নিজের ছেলে পরিচয় দিয়ে বাঁচাতে এগিয়ে আসেন মানিক ফকির। কিন্তু শেষ রক্ষা হয় না। হায়েনার দল উভয়কেই ব্রাশ ফায়ারে হত্যা করে। এরপর শুরু হয় লুটপাট অগ্নিসংযোগ। সেদিনের নৃশংসতায় এই গ্রামের জীবন দিয়েছেন ৪৫ জন, আহত হয়েছিলেন অর্ধশতাধিক। প্রায় দুই শতাধিক ঘরবাড়ি পুরে ছারখার হয়েছিল। দীর্ঘ ৪ ঘন্টার এই ভয়াবহতায় এবং নিষ্ঠুরতায় নির্বাক হয়ে গিয়েছিল গ্রামের মানুষ। হিংস্র পশুর দল গ্রাম ছেড়ে গেলেও, দীর্ঘ ৯ মাস গ্রামবাসী ফিরে আসেনি গ্রামে। তাই সেদিনের অধিকাংশ লাশের সৎকারটুকু করাও সম্ভব হয়নি। খাবার হয়েছে শেয়াল শকুনের। স্বাধীনতা লাভের পর গ্রামবাসী শূন্য ভিটায় ফিরে আসে। সব শোক বুকে চেপে রেখে আবার শুরু করে জীবন সংগ্রাম। অতিবাহিত হয়েছে ৪৪ বছর। মহন-মুক্তিযুদ্ধের রক্তস্নাত গ্রাম হলেও গ্রামটির আজো কোন স্বীকৃতি মিলেনি। সংরক্ষিত হয়নি শহীদদের তালিকা।

(এইচবি/এসসি/মে০১,২০১৫)

পাঠকের মতামত:

১৪ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test