E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

জমি নিয়ে বিরোধ

সাতক্ষীরায় এসিডে ঝলসে দেওয়া হল এক মুক্তিযোদ্ধাকে

২০১৫ জুন ০৯ ১৯:৪১:৪০
সাতক্ষীরায় এসিডে ঝলসে দেওয়া হল এক মুক্তিযোদ্ধাকে

সাতক্ষীরা প্রতিনিধি : জমি নিয়ে বিরোধকে কেন্দ্র করে এক মুক্তিযোদ্ধাকে এসিড ছুঁড়ে ঝলসে দেওয়া হয়েছে।

সোমবার দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে সাতক্ষীরার তালা উপজেলার নগরঘাটার চোকারকান্দা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। তাকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় প্রথমে সাতক্ষীরা সদর হাসপতালে ভর্তি ও পরে ঢাকা এসিড সারভাইভাস ফাউণ্ডেশনে স্থানান্তর করা হয়েছে।

এসিডদগ্ধ মুক্তিযোদ্ধার নাম জাফর আলী সরদার (৬৮)। তিনি সাতক্ষীরার পাটকেলঘাটা থানার নগরঘাটা গ্রামের শরিয়তউল্লা সরদারের ছেলে।

সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের ২নং কেবিনে চিকিৎসাধীন জাফর আলী সরদার জানান, ১৯৮৮ সালে তার বাবা শরিয়তুল্লাহ সরদারের কাছে পৌনে পাঁচ বিঘা জমি বিক্রি করে চাচা বদরউদ্দিন সরদার। ১৯৯০ সালে ওই জমি বাবা তার (জাফর) নামে লিখে দেয়। ২০০৮ সালে ওই জমি তিনি তার স্ত্রী মালিদার নামে লিখে দেন। চলতি মাঠ জরিপের ৩০ ধারায় ভুলবশত বদরউদ্দিন সরদারের নামে ওই জমির অর্ধেক ও তার (জাফর) নামে অর্ধেক রেকর্ড হয়। রেকর্ড মূলে বদরউদ্দিন সরদারের ছেলে জোহর আলী সরদার ও তার ভাই মালেক সরদার প্রায় আড়াই বিঘা জমি ২০১৩ সালে লিখে দেন প্রতিবেশী হামেদ খন্দকারের ছেলে হাই খন্দকার ও রনিউদ্দিন খন্দকারের নামে।

এরপর থেকে জোহর আলী ও মালেককে সঙ্গে নিয়ে খন্দকার ভাতৃদ্বয় তার (জাফর) বসত বাড়ির সামনে পুকুর কেটে জোরপূর্বক ওই জমি দখলের চেষ্টা করে।

তিনি আরো জানান, সোমবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে ভাত খাওয়ার পর বারান্দায় শুয়ে পড়েন তিনি। টেবিল ফ্যান চললেও প্রচণ্ড গরমের কারণে ঠিকমত ঘুম আসছিল না। রাত সাড়ে ১২টার দিকে ৫/৬ জনের একদল দুর্বত্ত তাকে লক্ষ্য করে এসিড ছুঁড়ে মারে। এর পরপরই তিনি দুর্বৃত্তদের লক্ষ্য করে টর্চের আলো জ্বালালে আবারো এসিড ছুঁড়ে মারা হয়। এতে তার বাম পাশের কপাল, মুখমণ্ডল, বাম হাত, বাম উরু, পেটের একাংশ ঝলসে যায়।

বাড়ির লোকজন তাকে উদ্ধার করে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে ভর্তি করে। জমি নিয়ে বিরোধকে কেন্দ্র করে সোমবার রাতে বদরউদ্দিন সরদারের ছেলে জোহর সরদার, মালেক সরদার, হামেদ খন্দকারের ছেলে হাই খন্দকার ও রনিউদ্দিন খন্দকারসহ কয়েকজন তাকে এসিড মেরে ঝলসে দিয়েছে।

ঢাকার মালিবাগে গোয়েন্দা সংস্থায় কর্মরত মোঃ জাকির হোসেন ও তার বোন জেসমনি নাহার জানান, জমি দখল করতে না পেরে বদরউদ্দিনের ছেলে ও হামেদ খন্দকারের ছেলেরা তাদের বাবা ও পরিবারের সদস্যদের বিভিন্নভাবে হুমকি ধামকি দিয়ে আসছিল। যে হাত দিয়ে তার বাবা মুক্তিযুদ্ধের হাতিয়ার তুলে ধরেছিল পাক হানাদার বাহিনী ও রাজাকারদের বিরুদ্ধে, স্বাধীনতার ৪৩ বছর পর বাবার একটি হাত ও শরীরের বিভিন্ন অংশ এসিড মেরে ঝলসে দেওয়া হলো।

সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের সহকারি সার্জন ডা হাসানুজ্জামান জানান, দুর্বৃত্তদের ছোঁড়া দাহ্য পদার্থে জাফর আলী সরদারের শরীরের বাম পাশের কপাল, মুখমণ্ডল, বাম হাত, পে ও বাম পায়ের ৩২ শতাংশ ঝলসে গেছে। এটা কি ধরনের এসিড বা দাহ্য পদার্থ তা পরীক্ষার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। জাফর সরদারকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা এসিড সারভাইভাস ফাউণ্ডেশনে স্থানান্তর করা হয়েছে।

এ ব্যাপারে পাটকেলঘাটা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তারিকুল ইসলাম এসিড নিক্ষেপের ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, তিনি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। হাসপাতালে গিয়ে কথা বলেছেন মুক্তিযোদ্ধার জাফর আলীর সঙ্গে। তবে মঙ্গলবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা পর্যন্ত এ নিয়ে থানায় কোন অভিযোগ দায়ের করা হয়নি।

(আরকে/পিএস/জুন ০৯, ২০১৫)

পাঠকের মতামত:

২৯ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test