E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

‘স্বাধীনতা মানেই ঘুষ খেয়ে কোটিপতি হওয়া না’

২০১৫ জুন ১৩ ১৮:৪৫:০৪
‘স্বাধীনতা মানেই ঘুষ খেয়ে কোটিপতি হওয়া না’

নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি : স্বাধীনতা মানেই লুটপাট না। স্বাধীনতা মানেই ঘুষ খেয়ে কোটিপতি হওয়া না। একজন অশিক্ষিত ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান যদি ৫ টন গম চুরি করেন আর প্রধানমন্ত্রী হয়ে যদি শেখ হাসিনা বা খালেদা জিয়া ৫ হাজার টন গম চুরি করেন তাহলে একই সমান চুরি এবং অপরাধী। কারণ দুজনই তাদের সর্বোচ্চ সামর্থ্য দিয়ে চুরি করেছেন। ৭৫-এর পর রাষ্ট্রযন্ত্রে দুর্বৃত্তে ভরে গেছে। প্রতিষ্ঠিত রাজাকারদের মন্ত্রী বানানো হয়েছে। কে হিন্দু বা কে মুসলমান এ জন্য মুক্তিযুদ্ধ হয়নি। ধর্ম যার যার রাষ্ট্র সবার। বাংলাদেশে একজনকেই আমি হারামজাদা হিসেবে জানি। সে হলো জিয়াউর রহমান।

শনিবার নারায়ণগঞ্জ বন্দর বিএম ইউনিয়ন স্কুল এন্ড কলেজ মিলনায়তনে স্থানীয় যুবক ও স্কুল কলেজ পড়ুয়া ছাত্র ছাত্রীদের নিয়ে স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানায় উদ্বুদ্ধ করতে এক অনাড়ম্বর আড্ডায় বিশিষ্ট সাংবাদিক দৈনিক বাংলা ৭১ এবং অনলাইন নিউজ পোর্টাল উত্তরাধিকার ৭১ নিউজের সম্পাদক প্রবীর সিকদার এসব কথা বলেছেন।

তিনি আরো বলেন, ৫০ জন মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচার চলছে। ইতোমধ্যে ২ জনের ফাঁসি কার্যকর হয়ে গেছে। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় যারা মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছে তাদের সংখ্যা সারাদেশে হাজার হাজার রয়েছে। তাদেরও বিচার হবে। আমার আফসোস হয় হিংসা হয়, আমি একজন মুক্তিযোদ্ধা হতে পারলাম না। আমার বয়স স্বাধীনতার সময় ছিল মাত্র ৯ বছর। তাই এখন মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের হয়ে যুদ্ধ করে যাচ্ছি। এ যুদ্ধ করতে গিয়ে আমাকে মেরে ফেলতে চেয়েছিল স্বাধীনতা বিরোধী শক্তি। একটা পা কেড়ে নিয়েছে তারা। মৃত মনে করে রাস্তায় ফেলে রেখে গিয়েছিল আমাকে। এখন বেঁচে আছি, যা বোনাস হিসেবেই ধরি।

তিনি বন্দরে গণহত্যার বিষয়ে শিক্ষার্থীদের অবহিত করেন। স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানতে তাদের উদ্বুদ্ধ করেন। ৩০ লাখ মানুষের প্রাণ ও সাড়ে ৪ লাখ মা-বোনদের ইজ্জতের বিনিময়ে এ বাংলাদেশ। মুক্তিযুদ্ধের সময় পাক হানাদার বাহিনীর লোমহর্ষক নির্যাতনের চিত্রও তুলে ধরেন। তিনি তরুণদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় নিজেদের গড়ে তুলে দেশ গড়ার আহ্বান জানান। এছাড়াও তিনি সততা নিষ্ঠা দেশপ্রেম নিয়ে দেশ গড়ে তুলতে তরুণদের সচেতন হওয়ার জন্য আহ্বান জানান।

তিনি বলেন, আজ তরুণরা পার্লামেন্ট মেম্বার হলেও তাদের অনেকের ভিতরই দেশপ্রেম নেই। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সাড়ে ৭ কোটি মানুষকে নিয়ে লড়াই করে এ স্বাধীনতা এনে দিয়েছেন। কিন্তু আমরা বাঙ্গালী জাতি সেই মানুষটিকেই হত্যা করেছি। শুধু বঙ্গবন্ধুকেই না তার পরিবারের সদস্যদেরও হত্যা করেছি। এ জাতির উপর বঙ্গবন্ধুর অভিশাপ থাকবে।

আড্ডায় জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির জেলা শাখার সভাপতি চন্দন শীল বলেন, বর্তমানে জাতীয় সংগীত সঠিকভাবে গাওয়া হয় না। সম্মান রক্ষা হচ্ছে না যথাযথভাবে। এমনকি ক্রিকেট খেলার মাঠেও জাতীয় সংগীতের সম্পূর্ন অংশ বাজানো হয়নি। আমাদের এত অনীহা তৈরি হয়েছে জাতীয় সংগীতের প্রতি! সঠিকভাবে জাতীয় সংগীত অনেকেই গাইতে পারছে না। এ বিষয়ে তরুণ সমাজকে ভূমিকা রাখতে হবে।

এছাড়াও চন্দন শীল বলেন, রেডিও টিভি পত্র-পত্রিকায় দেখা যাচ্ছে বাংলাদেশ-ভারতের টেস্ট ক্রিকেট খেলার নিউজে লেখা হচ্ছে ফতুল্লা খান সাহেব ওসমান আলী স্টেডিয়াম। অন্যান্য দেশেতো এটা হয়না। এখানে ফতুল্লার স্থানে নারায়ণগঞ্জ লেখা বা প্রচার করাটাই যুক্তিসংগত।

তিনি বলেন, শামীম ওসমান ২০০১ সালে নারায়ণগঞ্জে যুদ্ধাপরাধী গোলাম আজমকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছিলেন, প্রতিকী বিচার করেছিলেন সাইনবোর্ড লাগিয়েছিলেন। শামীম ওসমানের সেই ঘোষণায় ৯ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় আসলে মানবতাবিরোধীদের বিচার করা হবে বলে দলীয় ইসতিহার দিয়েছিল আওয়ামীলীগ। যে কারণে দেশের মানুষ আওয়ামীলীগকে নির্বাচিত করেছিলেন। তখন প্রবীর সিকদার দৈনিক জনকন্ঠ পত্রিকায় সারাদেশের মানবতাবিরোধীদের নিয়ে সংবাদ পরিবেশন করেছিলেন। যে কারণে প্রবীর সিকদারকে মেরে মৃত মনে করে রাস্তায় ফেলে গিয়েছিল ঘাতকেরা।

ওই সময় দেশের প্রতিথযশা শতাধিক বুদ্ধিজীবীদের নারায়ণগঞ্জে নিয়ে এসেছিলেন শামীম ওসমান। সরকারী তোলারাম কলেজের কলা ভবনে শামীম ওসমান ওই ভবনকে জাহানারা ইমাম ভবন ঘোষণা করেন। গোলাম আজমকে নিষিদ্ধ করে সাইনবোর্ড লাগানোর পর ওই জায়গার নাম হয়েছে আজ সাইনবোর্ড। এসব কারণেই চাষাড়ায় বোমা হামলা করে শামীম ওসমানকে হত্যা করতে চেয়েছিল। ২০ জনকে বোমা মেরে হত্যা করা হয়েছিল। ওই সময় পত্র-পত্রিকায় ২২ জনের নাম প্রকাশিত হয়েছিল। মৃতের সাথে আমার আর রতন দাসের নাম প্রকাশিত হয়েছিল। আমরা দুজন সৃষ্টিকর্তার কৃপায় বেচে আছি।

এসময় উপস্থিত ছিলেন অ্যাডভোকেট শাহ আলী মোহাম্মদ পিন্টু খান, দৈনিক নারায়ণগঞ্জের আলো পত্রিকার সম্পাদক কমল খান, একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির বন্দর থানা শাখার সহ-সভাপতি কবির হোসেন, কাজী মোহাম্মদ শহিদ, আলী হোসেন, নজরুল ইসলাম, আবুল কালাম আজাদসহ উক্ত প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকবৃন্দ।

(ওএস/অ/জুন ১৩, ২০১৫)

পাঠকের মতামত:

২৯ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test