E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

মি. খোকন রাজাকার, সুইডেনে স্বাগতম!

২০১৬ জানুয়ারি ০৭ ১২:১৯:০৮
মি. খোকন রাজাকার, সুইডেনে স্বাগতম!

মাহবুব আরিফ : সুইডেনের কোন একটি এলাকাতে ১৯৭১ সনের মানবতা বিরোধী অপরাধে বাংলাদেশে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত জাহিদ হোসেন ওরফে খোকন রাজাকার অবস্থান করছেন, আর এটাই সত্য যে বাংলাদেশের সাথে সুইডেনের কোন বন্দী বা অপরাধী বিনিময় চুক্তি সম্পাদিত হয়নি বা নাই, কিন্তু সুইডেনে যে কোন দেশের সন্ত্রাসী বা জঙ্গিদের আশ্রয় প্রদান করে না যদি সেই ব্যক্তি মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্ত না হয়ে থাকে। আর একটি বিষয় সম্পূর্ণ ভাবেই পরিষ্কার সত্য যে ভিন দেশের কোন প্রমাণিত সন্ত্রাসী বা দাগী আসামীদের সুইডেনে থাকার অনুমতি দেয়া হয় না।

মাঝে মাঝে মেট্রো রেলে কাছ থেকে ফেরার পথে ট্রেনের একটি কামড়ায় খোকন রাজাকারের সাথে দেখা হয় বটে তবে সরাসরি কোনদিন কথা হয়নি। হালকা পাতলা গড়ন, একটু নুইয়ে হাঁটেন, ব্রেদেং স্টেশনে এলেই নেমে পরেন, আসে পাশে এদিক সেদিক বেশ উত্সুখের দৃষ্টি নিয়ে সবাইকে এক নজর দেখে নেন, হয়তো উনার নিজের ভেতরেই ১৯৭১ সনের অপরাধ বোধগুলি সারা জীবন এভাবেই তাকে তাড়া করে বেড়াচ্ছে, আমি পিছু পিছু খানিকটা পথ হেটে যাই, কাছে গিয়ে বাঙ্গালী হিসেবে আলাপচারিতা শুরু করবো এমন ইচ্ছেও জাগে না, লজ্জা পাই নিজেকে একজন বাঙালী পরিচয়ে সব জেনে শুনেও অসহায়ের মত খোকন রাজাকারের পেছন পেছন হেটে যেতে। এমন একটা দেশে থাকি যে দেশে আমি যেচে গিয়ে তাকে কোনদিন প্রশ্ন পর্যন্ত করতে পারব না ৭১ এর মুক্তিযুদ্ধে কেন বাঙ্গালীদের উপর তিনি এত অবিচার করেছিলেন? দেশ ভাগ তিনি নাইবা চাইতে পারেন, তাই বলে এত হত্যাযজ্ঞ? কি ভাবে একজন বাঙ্গালী হয়ে এত নির্দয় ভাবে মানুষের উপর এত অত্যাচার তার দ্বারা সম্ভব হয়েছিল? নাহ, মনটা বিষিয়ে ওঠে, কিছুই করার থাকে না, বিষণ্ণ মনে স্টেশনের দিকে ফিরে আসি, নিজের ঘরের দিকে পা বাড়াই।

আমাদের এ ক্ষেত্রে জেনে রাখা ভালো যে সিংহভাগ প্রবাসীরা সুইডেনে মানবিক, পারিবারিক ও বৈবাহিক সূত্রেই স্থায়ী ভাবে বসবাসের সুযোগ পেয়ে থাকে, এক্ষেত্রে রাজনৈতিক ভাবে আশ্রয় প্রার্থীদের সংখ্যা অন্তত বাংলাদেশ থেকে খুবই কম। যদিও ৬০ দশকের শুরুর দিকে সুইডেনে ইউরোপের বিভিন্ন দেশ থেকে আগত দেশ গড়ার কাজে শ্রমিকদের স্থায়ী ভাবে বসবাস করার সুযোগ করে দেয়, বর্তমানে সেই সুযোগ তা থাকলেও যদি কোন প্রতিষ্ঠান নিজেদের প্রয়োজনে অন্য দেশ থেকে শ্রমিক অথবা কর্মচারীদের স্ব স্ব প্রতিষ্ঠানে চাকুরী দিতে চায় তবে সেখানেও অনেক বিধি নীতি মেনে যথাযোগ্য কর্মচারীদের সুইডেনে পাওয়া না গেলে তবেই অন্য দেশ থেকে কর্মচারী আনার অনুমতি পাওয়াটা বেশ ঝক্কির ব্যাপার। রাজনৈতিক আশ্রয় পেতে হলে খাজনার চাইতে বাজনা বেশী আর সেটাও খুব দ্রুত গতিতে হবে তা হলফ করে বলা যায় না, তবে স্বীকৃত রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের যাদের জীবন স্বদেশে হুমকির মুখে তাদের কালক্ষেপণ না করেই রাজনৈতিক আশ্রয় দেয়া হয়ে থাকে। সুইডেনে এখন থেকে ঠিক একশত বছর আগে স্টকহোল্মের লংহোল্ম কারাগারে ২৩এ নভেম্বর ১৯১০ সালে আলফ্রেদ এন্ডারসনকে গর্দান কর্তনের মাধ্যমে (guillotine) শেষ ব্যক্তিটির মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়েছিলো।

খোকন রাজাকারকে বাংলাদেশে ফেরত নেবার শেষ সুযোগটি আমাদের হাত ছাড়া হয়ে গেছে অনেক আগেই, বাংলাদেশ সরকার যদি একজন সন্ত্রাসী খোকন রাজাকারের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারী পরওয়ানা জারি করার পরপরই তাকে সুইডেন থেকে বাংলাদেশে ফেরত নেবার চুক্তি সরকারী উদ্যোগ গ্রহণ করতো তবে হয়তো একটা সুযোগ ছিল, কিন্তু রায় হয়ে যাবার পর খোকন রাজাকারকে বাংলাদেশে ফেরত নেবার সম্ভাবনা একেবারেই শূন্যের কোঠায় এসে দাঁড়ালো। এ বিষয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের পক্ষ হয়ে বক্তব্য, চিৎকার চ্যাঁচামেচির মাধ্যমে নিজেকে হাই লাইট করতে পারবো বটে, কিন্তু কাজের কাজ যেটা করার ছিল সেটা হাত ছাড়া হয়ে গেছে অনেক আগেই। এখন আমারা প্রবাসীরা অনেকটা বাধ্য হয়ে বলতে হবে Mr. khokon razakar, Welcome to sweden.

এখন আসা যাক সুইডেন সরকার খোকন রাজাকারের বিষয়ে তাদের আইনের মাধ্যমে বিচার করতে পারছে কি না, ২০১৪ সালের ১লা জুলাই থেকে অন্য দেশের যুদ্ধ অপরাধীদের বিচারের জন্যে একটি নতুন আইন বলবত করে, আইনটির ইংরেজি অনুবাদ করে নীচের অংশে দিচ্ছি। এই আইনের মাধ্যমে শুধু মাত্র তাদেরই বিচার করা যাবে যারা ২০১৪ সালের ১লা জুলাইয়ের পর এই দেশে প্রবেশ করিয়াছে, যদি সুইডেনের মাটিতে খোকন রাজাকারের বিচার ও সাজা প্রদানে বাংলাদেশ সরকার উদ্যোগ নিতে চায় তবে আমাদেরকে একটি আইনি লড়াই করে যাওয়া না পর্যন্ত সেটা সম্ভব হচ্ছে না।

Swedish Parliament has adopted a new law on punishment for genocide, crimes against humanity and war crimes. Swedish courts shall have jurisdiction over these crimes even if committed outside Sweden.

Parliament has voted through the Government's proposals for a new law on punishment for genocide, crimes against humanity and war crimes.

The decision includes:
New rules introduced on penalties for crimes against humanity. The offense covers such killings, sexual abuse and torture when these acts are part of a widespread or systematic attack directed against a civilian population.

It introduces a new provision on genocide more in line with the UN Genocide Convention.

Clearer rules are introduced for war crimes. The maximum penalty for war crimes of the normal rate is also increased, from four to six years in prison.

A military or civilian supervisor shall be considered offender if he or she has not done what was possible to prevent subordinates from committing any of these crimes.

The crimes of genocide, crimes against humanity and serious war crime should not become time-barred. It shall also apply to attempts to commit these crimes. That a criminal statute of limitation means that no one can be convicted for it.
Swedish court should be able to adjudicate in cases concerning these crimes regardless of who committed crimes and were this has happened (universal jurisdiction).
Such rules shall begin on 1 July 2014.


লেখক : সুইডেন প্রবাসী

পাঠকের মতামত:

০১ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test