E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

একজন মাধব ও একজন শাহনাজের অফুরান গল্প

২০১৯ জানুয়ারি ১৫ ২০:৪২:২৮
একজন মাধব ও একজন শাহনাজের অফুরান গল্প

প্রবীর সিকদার


ফরিদপুরের এক তরুণ মাধব সাহা। জীবিকার প্রয়োজনে ও দুবাইয়ে ছিল টানা ৯বছর। ফেসবুকেই ওর সঙ্গে আমার প্রথম পরিচয়। বছর তিনেক আগে দুবাই থেকেই মাধব আমার কাছে জানতে চেয়েছিল, ময়মনসিংহের কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ড.শাহনাজ পারভীনের সঙ্গে আমার পরিচয় আছে কিনা! আমার বড় ভাগ্নে প্রীতম ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র থাকার সুবাদে তার সঙ্গে আমার পরিচয় হয়েছিল।

তিনি আমার ফেসবুক বন্ধুও ছিলেন। দারুণ গুণী ওই শিক্ষিকা খুবই শক্তিশালী মনের অধিকারী ছিলেন। দীর্ঘদিন ওই শিক্ষিকা দেশে বিদেশে ক্যান্সারের সাথে যুদ্ধ করছিলেন। দেশেবিদেশে চিকিৎসায় সে যখন সর্বহারা, তখন তার অনেক বন্ধু শুভাকাঙ্ক্ষী তাঁর পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। সেই তালিকায় ছিলেন আমার এই ফরিদপুরের ভাইটি, মাধব সাহা। আমি যখন মাধবকে বললাম, তিনি আমার শুধু পরিচিতই নন, তাঁর সাথে আমার ভালো যোগাযোগও রয়েছে; মাধব বড় স্বস্তি পেল। তারপর মাধব যা বলল, সেটা শুনে আমি আনন্দে আত্মহারা! বাবা মা আত্মীয় স্বজন ফেলে দুবাইয়ে কঠোর পরিশ্রম করে সামান্যই কিছু আয় করে যে ছেলেটি, সেই কিনা ওই শিক্ষিকার জন্য বড় অংকের একটি টাকা পাঠাতে চায়! আমি সেদিন আনন্দের আতিশয্যে বলেছিলাম, বাংলার ঘরে ঘরে জন্ম নিক এমন মাধব। মাধবের একটাই অনুরোধ তখন, আমি যেন ওই শিক্ষিকার কাছে পৌঁছে দেই ওই টাকাটা! আমি সেই দায়িত্ব পালনের প্রতিশ্রুতি দেওয়ায় মাধব আর একবার স্বস্তি পেল।

দুই দিনের মধ্যেই মাধব দুবাই থেকে আমার কাছে টাকাটা পাঠিয়ে দেয়। আমি ড.শাহনাজের সাথে যোগাযোগ করে মাধবের টাকাটা পাঠিয়ে দেই। সেদিন শাহনাজ মাধবের জন্য অফুরান দোয়া করেছিলেন। এতো ভালবাসা দিয়েও মাধবরা আটকাতে পারেনি শাহনাজের না ফেরার দেশে চলে যাওয়া। আমি যেদিন ওর মৃত্যু সংবাদ জানিয়েছিলাম, মাধব সেদিন দুবাইয়ের মাটি ভিজিয়েছিল চোখের জলে।

সেই মাধব পারিবারিক প্রয়োজনেই দেশে ফিরে এসেছে। থাকে ফরিদপুরের গ্রামেই। আজ আমার একটি ফেসবুক পোস্টে মাধব কমেন্ট করেছে, যে পোস্টে সরকারের স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দুই কেরানী দম্পতি আবজাল ও রুবিনার ১৫ হাজার কোটি টাকার অবৈধ অর্থ-সম্পদের কথা বলা হয়েছে। সেখানেই মাধব কমেন্ট করেছে, 'অথচ আমি সৎ পথে ১০হাজার টাকা আয়ের পথ খুঁজছি!' মাধবের ওই কমেন্টে আমি চোখের জল আটকাতে পারিনি। কয়েক ফোঁটা চোখের জল ফেলতে ফেলতেই ভাবলাম, যে দেশে মাধবরা মাত্র ১০হাজার টাকা আয়ের খোঁজে দিশেহারা, সেই দেশেরই সরকারি অফিসের এক কেরানী দম্পতি ১৫ হাজার কোটি টাকার মালিক হয়ে শুধু দেশেই বিপুল ধন-সম্পদের মালিক হননি, সুদূর অস্ট্রেলিয়াতেও বাড়ি গাড়ি সম্পদের পাহাড় গড়েছেন! চোখের জল পড়তে পড়তেই মনের কোঠায় দেখা দিল বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার এক চিলতে ছবি! মুহূর্তে চোখের জল মুছতে না মুছতেই আমার মন দৃঢ়তায় ভরে উঠলো, আশায় বুক বেঁধে নিজেই নিজেকে সান্ত্বনা দিলাম, এই দেশকে সুখ শান্তিতে ভরিয়ে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে তুলবেন ওই একজন শেখ হাসিনাই।

পাঠকের মতামত:

০৫ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test