E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

হে বাংলাদেশ, তুমি আমার ১৪ বছর ভরণপোষণের দায়িত্ব নাও প্লিজ!

২০১৯ আগস্ট ১৮ ২৩:২৫:২৮
হে বাংলাদেশ, তুমি আমার ১৪ বছর ভরণপোষণের দায়িত্ব নাও প্লিজ!

প্রবীর সিকদার


আমার এই লেখার সাথে সংযুক্ত এই ছবিটা হয়তো ১৮ আগস্ট ২০১৫ তে তোলা। ফরিদপুরে জেলখানা থেকে আদালত কিংবা আদালত থেকে জেলখানায় আসা যাওয়ার পথের ছবি এটা। কে এই ছবিটা তুলেছিল কিংবা কে বা কারা এই ছবিটা মিডিয়া তথা সামাজিক যোগাযোগ ভাইরাল করেছিল আমি জানি না। ছবি সংশ্লিষ্টদের সবাইকে স্যালুট জানিয়েই বলছি, ফেসবুকের কল্যাণে এই ছবিটি যতবার আমি দেখি, ততবারই আমাকে কাঁদতে হয়!

আপনারা হয়তো অনেকেই জানেন, আমার একটি পা নেই। কৃত্রিম পায়ে ভর করে চলে আমার জীবন যুদ্ধ! আমি কৃত্রিম পা পরে একটানা ৫/৬ ঘণ্টার বেশি থাকতে পারি না। একটু বেশি হলেই পায়ের উপরের দিকের সামান্য যে অংশটুকুর সাথে কৃত্রিম পা জুড়ে দেওয়া থাকে, সেই অংশটুকু ঘেমে ঘা হয়ে যায় এবং কৃত্রিম পা আলগা হয়ে যায়। তখন কৃত্রিম পা একদিকে কাজ করে না, অপরদিকে পাটি উল্টো নিজের বোঝা হয়ে যায়। এই ছবিটা যখন তোলা, তখন ওই কৃত্রিম পাটি আমার শরীরে বোঝা হয়ে আছে অন্তত ৪৮ ঘণ্টা! বুঝতেই পারছেন, ৬ ঘণ্টায় যেখানে ঘা হয়ে যায়, সেখানে ৪৮ ঘণ্টায় কী হতে পারে!

এটা কাউকে বলে কোনো লাভ হয়নি। প্রথম আমার এই অসুবিধার কথা আমি ফরিদপুরের কোতোয়ালি থানা পুলিশকে জানাই। আমি থানায় তখন ডিউটি অফিসারের সামনের চেয়ারেই বসে ছিলাম। এই অসুবিধার কথা জানানোর ১০ মিনিটের মধ্যে আমাকে থানা হাজতে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। হাজত খানায় একখানা চেয়ারের জন্য হাজারো অনুনয় বিনয় করেও একখানা চেয়ার পাইনি। একজন কনস্টেবল চোখের জল মুছতে মুছতে বলেছিলেন, আমাদের কিছু করার নেই দাদা, এমন নির্দেশ উপরের।

আমি এখন সেইসব কথা ভুলে থাকতে চাই। কিন্তু ফেসবুক আমাকে মাঝে মাঝেই সেই ছবি দেখতে বাধ্য করে; আর আমি সেটা দেখে চোখের জল ফেলি! যে দেশের স্বাধীনতার জন্য বাবা কাকা দাদুদের হারালাম, হারালাম বসত ভিটেসহ সর্বস্ব; যে দেশের স্বাধীনতার চেতনা সমুন্নত রাখতে নিজের শরীরের অর্ধেক হারালাম, সেই দেশে আমি আজ শুধুই একজন অপরাধী, মামলার আসামী! ৫৭ ধারার মামলায় আমার বিচার চলছে ঢাকায়। আমি খুব করে চাইছি, ওই মামলায় আমার ১৪ বছরের সাজা হোক! কিছুই যখন করতে পারছি না, অন্তত ১৪ বছরের খাওয়া-পরার একটা গ্যারান্টি তো থাকবে জেলখানায়! এর চেয়ে বড় পুরস্কার যে আর হয় না! হে বাংলাদেশ, তুমি আমার ১৪ বছর ভরণপোষণের দায়িত্ব নাও প্লিজ!

পাঠকের মতামত:

০৫ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test