E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

সংখ্যালঘু নিপীড়ন নয়, লক্ষ্য ওদের অসভ্য পাকিস্তানে ফেরা!

২০১৯ অক্টোবর ২২ ২২:০৭:১৫
সংখ্যালঘু নিপীড়ন নয়, লক্ষ্য ওদের অসভ্য পাকিস্তানে ফেরা!

প্রবীর সিকদার


 

বাবরি মসজিদ কিংবা রামু কিংবা রসরাজ কিংবা বিপ্লবের ঘটনা একের পর এক চলছেই! এই ঘটনাগুলো বার বার চোখে আঙুল দিয়ে বলেই যাচ্ছে, দেশের একটি গোষ্ঠীর চাওয়া নয়, ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা এইদেশে থাকুন! আমি বিশ্বাস করি, এই সব নানা ঘটনার সাথে জড়িতদের সংখ্যা ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের চেয়ে অনেক অনেক কম। তারপরও ওই বিশেষ গোষ্ঠী একের পর পরিকল্পিত ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে তাদের লক্ষ্যের দিকেই এগিয়ে যাচ্ছে!

একের পর এক অপকর্ম ঘটিয়ে তারা পার পেয়ে যাচ্ছে; আর বার বার অপরাধ না করেও বলীর পাঁঠা হচ্ছে রসরাজ কিংবা বিপ্লবেরা; সংখ্যালঘুরা ভুগছে চূড়ান্ত নিরাপত্তাহীনতায়! আজ পর্যন্ত এইদেশে পরিকল্পিত সংখ্যালঘু নির্যাতনের একটি ঘটনারও বিচার হয়নি! তাহলে কী বিচার হীনতার এই সংস্কৃতিও দেশ থেকে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের বিতাড়নের সহায়ক? এই প্রশ্নের কোনও উত্তরেই আর এখন দেশের ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা স্বস্তি পান না। যদিও আমি বিশ্বাস করি, দুঃখজনক এই ঘটনাগুলো শুধু ধর্মীয় সংখ্যালঘুর সমস্যা নয়, এটি মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশের বিরুদ্ধে চলমান ষড়যন্ত্রেরই অংশ।

একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের অবদান বিশাল, সেটা তুড়ি মেরে উড়িয়ে দেওয়ার মতো নয়! স্বাধীনতার প্রসববেদনা ক্লান্ত ধর্মীয় সংখ্যালঘু, বিশেষ করে হিন্দু সম্প্রদায়ের অবস্থান পৃথিবীর সকল নৃশংসতার শীর্ষে! তাদের দেশপ্রেম প্রশ্নাতীত! এতো অস্থিতিশীলতার মধ্যেও তারা মরিয়া দেশ না ছাড়তে! কিন্তু একই রকমের ঘটনা তাদেরকে বার বার আঘাত করবে দগ্ধ করবে, কিন্তু সব ঘটনাই থাকবে বিচারহীন; তাহলে তারা করবেটা কী! যা হবার তাই হচ্ছে, দেশে সংখ্যাগুরু সম্প্রদায়ের মানুষের সংখ্যা বাড়ে লাফিয়ে লাফিয়ে, আর সংখ্যালঘু, বিশেষ করে হিন্দুদের সংখ্যা কমতে কমতে সিংগল ডিজিট ছুঁয়েছে! শূন্যে নামতে আর কতো!

মাতৃভূমি ছাড়তে চায় না পৃথিবীর কেউই! মেরু কিংবা মরুর দেশের মানুষও সগৌরবে বলেন, পৃথিবীর সেরা দেশটি তার কিংবা তাদের! এই দেশের ধর্মীয় সংখ্যালঘুদেরও ওই মানসিকতার কমতি নেই; কিন্তু তারা করবে কী, বংশপরম্পরায় লাথি খাওয়ার জন্যই কি তারা এই মাটিতে পড়ে থাকবে! আর তাইতো তাদের অনেকেই জন্মমাটি ফেলে, নাগরিক অধিকার হারিয়ে পরবাসে চূড়ান্ত যন্ত্রদায়ক ও বিড়ম্বনার রিফিউজির জীবন বেছে নিচ্ছেন! তাদের ওই জীবন যে কতো যন্ত্রণার, তা শুধু পৃথিবীর প্রান্তে প্রান্তে থাকা রিফিউজিরাই জানেন!

এই ভূখণ্ডে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের বিড়ম্বনা বহু পুরনো। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে এই ভূখণ্ডের মানুষ একটি অসাম্প্রদায়িক ও গণতান্ত্রিক দেশের জন্য লড়াই করেছে। বাঙালি জাতির জন্য স্বাধীন অসাম্প্রদায়িক ও গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ এনে দিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু। এই দেশের ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা ভেবেছিলেন, তাদের নিগ্রহের দিন শেষ; এবার তারা সমানাধিকার নিয়ে দেশে থাকবেন ও সকলে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দেশের জন্য ও নিজেদের ভাগ্য বদলের জন্য কাজ করবেন। কিন্তু সেই সুখ যে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের কপালে সইল না! পাকিস্তানীরা যে কাজটি করবার সাহস পায়নি, আমরা বাঙালিরা বঙ্গবন্ধু মুজিবকে সপরিবারে খুন করে সেই কাজের সাফল্য ঘরে তুললাম! যা হবার তাই হল, পাকিস্তানের মোড়কে ঢুকে গেল বাংলাদেশ! দেশটির সংবিধানে শুধু সাম্প্রদায়িকতা ঢুকে গেল নয়, দেশটি নিজেও হয়ে গেল মুসলমান!
ঘটনা পরম্পরায় দেশের ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের যে যখন সুযোগ পেয়েছে, চূড়ান্ত হতাশা ক্ষোভ বুকে নিয়ে আগুনে ঝাপ দেওয়ার মতোই রিফিউজি জীবন বেছে নিয়েছে! সেই ধারা দেশে বহমান; কোনও সরকারের আমলেই সেটি থামানোর কোনও চেষ্টা কখনোই করেনি রাষ্ট্র কিংবা সরকার। এমনকি দলগত ভাবে এই ভূখণ্ডে অসাম্প্রদায়িক রাজনীতির পুরোধা আওয়ামীলীগও সাম্প্রদায়িকতা ইস্যুতে তেমন কোনও সোচ্চার ভূমিকা পালন করেনি। যদিও বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর আওয়ামীলীগ নিজেদের অস্তিত্ব নিয়েও ছিল গভীর সঙ্কটে। অবশ্য এই ভূখণ্ডে সাম্প্রদায়িকতা এখন আর শুধু সংখ্যালঘুদের সমস্যা নয়, সেটি বরাবর মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় গণতান্ত্রিক ও আধুনিক বাংলাদেশের স্বপ্ন যারা দেখেন, তাদের জন্যও ভয়ঙ্কর অশনিসংকেত!

এতো কষ্ট এতো ক্ষোভ এতো যন্ত্রণার মধ্যেও ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের জন্য শুধু নয়, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় শানিত দেশ যাঁদের আকাঙ্ক্ষায় বর্তমান, তাদের সকলের জন্য আশার আলো কিংবা সম্ভাবনার শেষ ভরসা বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। একটি অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ তথা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়তে নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন শেখ হাসিনা। ইতোমধ্যে তিনি মুষ্টিমেয় প্রতিক্রিয়াশীল চক্র ছাড়া সবার মনেই আশাবাদ জাগিয়ে তুলতে সক্ষম হয়েছেন। তাই বলে তো আর প্রক্রিয়াশীল ধর্ম ব্যবসায়ীরা বসে থাকবেন না! তারাও একটার পর একটা রামু কিংবা নাসিরনগর কিংবা বোরহানউদ্দিন পরিস্থিতি সৃষ্টি করে চলেছেন। তারা এতেই থেমে নেই, তারা শেখ হাসিনাকে খুনের সব রকমের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। বলতে দ্বিধা নেই, ভয়ঙ্কর এক ক্রন্তিকাল অতিক্রম করছে ৩০ লাখ মানুষের রক্তস্নাত বাংলাদেশ। এই ক্রন্তিকালে দাঁড়িয়ে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার কাছে আবেদন করবো, সংখ্যালঘু নির্যাতনের প্রতিটি ঘটনার বিচার আপনাকে নিশ্চিত করতেই হবে। এটি শুধু সংখ্যালঘুদের স্বার্থে নয়, মুক্তিযুদ্ধের অর্জন বাংলাদেশের স্বার্থেও জরুরি। একই সঙ্গে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের প্রতিও নিবেদন করবো, হাজারো কষ্ট যন্ত্রণা ক্ষোভ প্রশমিত করে, শেষ বারের মতো শেখ হাসিনার পাশে শক্ত হয়ে দাঁড়ান, শেখ হাসিনাকে ক্রান্তিকাল অতিক্রমে শক্তি যুগিয়ে যান। শেখ হাসিনার বিজয়ই শুধু পারে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের জন্য শুধু নয়, মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশের প্রকৃত কল্যাণ বয়ে আনতে। নইলে যে এই বাংলাদেশ ফের অসভ্য পাকিস্তানের গর্ভে হারিয়ে যাবে!

পাদটীকা : বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা যদি তাঁর জীবদ্দশায় এই দেশের রাজনীতিতে শুদ্ধাচার প্রতিষ্ঠায় সফল হতে না পারেন, তাহলে আমি আগামী ৫০ বছরে দেশের জন্য আর কোনো শুভ ও কল্যাণকর কিছুরই সম্ভাবনা দেখছি না।

পাঠকের মতামত:

০৫ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test