E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

মহান আল্লাহ/মহান ভগবান/মহান ঈশ্বর/মহান গডের নামেই শুরু করলাম!

২০২০ ফেব্রুয়ারি ১৩ ১৭:৪৭:৩২
মহান আল্লাহ/মহান ভগবান/মহান ঈশ্বর/মহান গডের নামেই শুরু করলাম!

প্রবীর সিকদার


বাংলাদেশের সংবিধানে প্রস্তাবনা শুরুর আগেই লিপিবদ্ধ করা হয়েছে, বিস্‌মিল্লাহির-রহ্‌মানির রহিম। যার অর্থ, দয়াময়, পরম দয়ালু, আল্লাহের নামে শুরু করা। এটি নতুন সংযোজন, বাহাত্তরের মূল সংবিধানে সেটি ছিল না। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর খুনি জিয়া হীনস্বার্থে সেটি সংযোজন করেছিলেন। এই অবস্থায় চলছিল বহুদিন; এটা নিয়ে দেশে তেমন উচ্চবাচ্য হয়নি। ওয়ান ইলেভেনের পর নির্বাচনে জিতে আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় ফিরে 'বিস্‌মিল্লাহির-রহ্‌মানির রহিম' বাক্যটিতে হাত দেননি। কিন্তু সংবিধানের সংশোধনী এনেছেন তারা। সেই সংশোধনীতে সংবিধানের এই অংশে লিপিবদ্ধ করা হয়েছে:

[বিস্‌মিল্লাহির-রহ্‌মানির রহিম (দয়াময়, পরম দয়ালু, আল্লাহের নামে)/পরম করুণাময় সৃষ্টিকর্তার নামে।]

প্রিয় বন্ধুরা, এখানে বিশেষভাবে লক্ষ্য করুন, এই অংশের পুরো বাক্যটিকে তৃতীয় বন্ধনী দিয়ে আটকে রাখা হয়েছে। সেখানে 'বিস্‌মিল্লাহির-রহ্‌মানির রহিম' শেষে প্রথম বন্ধনীতে আটকে রাখা হয়েছে, 'দয়াময়, পরম দয়ালু, আল্লাহের নামে' অংশটুকুকে। প্রথম বন্ধনীতে আটকে রাখা বাক্য অর্থাৎ 'দয়াময়, পরম দয়ালু, আল্লাহের নামে', এটি 'বিস্‌মিল্লাহির-রহ্‌মানির রহিম' এর বাংলা অনুবাদ। তার সাথেই অবলিক দিয়ে লেখা রয়েছে, 'পরম করুণাময় সৃষ্টিকর্তার নামে।' বিশেষভাবে লক্ষ্য করার বিষয় হল, খুনি জিয়ার সংশোধনীতে এই অংশটুকু অর্থাৎ 'পরম করুণাময় সৃষ্টিকর্তার নামে'-এই অংশটুকু ছিল না। এটি আওয়ামীলীগ সরকারের সংযোজন।

এবার সংবিধানের আলোকে 'বিস্‌মিল্লাহির-রহ্‌মানির রহিম'কে বিশ্লেষণ করা যাক। প্রিয় বন্ধুরা এখানে লক্ষ্য করুন, বিসমিল্লাহসহ পুরো অংশটি তৃতীয় বন্ধনী দিয়ে আটকানো। তৃতীয় বন্ধনীতে আটকানো এক কিংবা একাধিক বাক্যে যা লেখা রয়েছে, তার সবটাই সমান গুরুত্বপূর্ণ এবং বন্ধনীবন্দী সকল অংশ নিয়েই পূর্ণাঙ্গ একটি অর্থ প্রকাশ করবে; একটি অংশের অর্থকে প্রাধান্য দেওয়ার সুযোগ নেই। এই বন্ধনীতে আটকানো পুরো বিষয়টিকে স্পষ্ট অবলিক ব্যবহার করে দুইটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। বাক্যে অবলিক ব্যবহারের অর্থই হল, এটা কিংবা ওটা। অবলিকের আগের ভাগে রয়েছে, 'বিস্‌মিল্লাহির-রহ্‌মানির রহিম (দয়াময়, পরম দয়ালু, আল্লাহের নামে)' এবং অবলিকের পরের ভাগে রয়েছে,'পরম করুণাময় সৃষ্টিকর্তার নামে।' এই দুইটি অংশ স্পষ্ট করছে যে, প্রথম অংশের অবতারণা ইসলাম ধর্মীয় বিধানের আলোকে; আর দ্বিতীয় অংশের অবতারণা হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টানসহ দেশের অপরাপর ধর্মীয় বিধানের আলোকে। এখানে যদি শুধুই ইসলাম ধর্মীয় বিধানকে গুরুত্ব দেওয়া হতো, তাহলে প্রথম অংশ অর্থাৎ 'বিস্‌মিল্লাহির-রহ্‌মানির রহিম (দয়াময়, পরম দয়ালু, আল্লাহের নামে)' থাকলেই যথেষ্ট ছিল; দ্বিতীয় অংশ অর্থাৎ 'পরম করুণাময় সৃষ্টিকর্তার নামে'র কোনও প্রয়োজন ছিল না। এখানে বলে রাখা জরুরি মনে করছি যে, ইসলাম পন্থী কট্টর মৌলবাদীরা এই দ্বিতীয় অংশকে কখনোই অনুমোদন দেয় না। কিন্তু শেখ হাসিনার সরকার সেটি করেছেন কৌশলে, সংবিধানের ধর্মনিরপেক্ষ চরিত্রকে যতটা সম্ভব আলোকিত করতেই।

তাহলে কী দাঁড়াচ্ছে বাংলাদেশের সংবিধানে প্রস্তাবনা শুরুর আগের তৃতীয় বন্ধনীতে আটকে থাকা অংশটির মর্মবাণী! আমার বিবেচনায়, তৃতীয় বন্ধনীতে আটকে থাকা শব্দ সমষ্টির মর্মবাণী হল, মহান আল্লাহ/মহান ভগবান/মহান ঈশ্বর/মহান গডের নামেই শুরু করা।

পাঠকের মতামত:

০৫ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test