E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

শিরোনাম:

আমাকেই আমি মনে রাখিনি !

২০১৫ এপ্রিল ২১ ১৬:২৭:৩৪
আমাকেই আমি মনে রাখিনি !

প্রবীর সিকদার : ২০ এপ্রিল ২০১৫, কিভাবে বিদায় নিল বুঝতেই পারিনি! দিনটি ছিল প্রবীর সিকদারের ১৪তম মৃত্যুবার্ষিকীর দিন। পাঠক, হাসছেন? হ্যাঁ হাসিরই বটে, যার মৃত্যুবার্ষিকী সে কি করে জীবিত থেকে জানিয়ে যায় ওই বিশেষ দিনের কথা! প্রিয় বন্ধু, প্রিয় পাঠক, মোটেই হাসির নয় বিষয়টি। ২০০১ সালের ২০ এপ্রিল আমাকে খুন করা হয়েছিল। আমার বেঁচে থাকা এক অলৌকিক ঘটনা!

আজ যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হচ্ছে, ফাঁসি হচ্ছে, ফাঁসির রায় কার্যকর হচ্ছে। এই বিচার প্রক্রিয়ায় আমারও একটি ছোট অবদান রয়েছে। সেদিন দৈনিক জনকণ্ঠের নেতৃত্বে আমরা একদল সংবাদকর্মী দেশজুড়ে একাত্তরের ঘাতকদের ইতিবৃত্ত সংগ্রহ ও প্রকাশের ব্যবস্থা করেছিলাম। দুর্ধর্ষ সব ঘাতকদের একাত্তরের কুকীর্তি ফাঁস করে দেওয়ার 'অপরাধে' ২০০১ সালের ২০ এপ্রিল ঘাতক চক্র ফরিদপুরে আমাকে খুনই করেছিল ! বোমা মেরে, গুলি করে ও চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে ঘাতকচক্র সেদিন আমার মৃত্যু নিশ্চিত করেই ঘটনাস্থল ত্যাগ করেছিল। তারপর ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, ঢাকার পঙ্গু হাসপাতাল, জাতীয় হৃদরোগ ইন্সটিটিউট। লড়াই বাঁচা-মরার!

... এক এক করে শরীরে ঢুকল ৬৬ ব্যাগ রক্ত। সারাদেশ আমার পাশে দাঁড়ালো। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সার্বক্ষণিক তদারকি আর দৈনিক জনকণ্ঠের ব্যবস্থাপনায় আমাকে জরুরি ভিত্তিতে পাঠানো হয় সিঙ্গাপুরে। সেখানে দীর্ঘ চিকিৎসায় আমি জীবন ফেরত পেলেও আমাকে হারাতে হয় আমার সম্পূর্ণ ডান পা। স্বাভাবিক কর্মক্ষমতা হারায় আমার বাম হাত। শরীরে বোমার অসংখ্য স্প্লিনটার আমাকে ফের মৃত্যু পর্যন্ত জ্বালাবে। তবু তো বেঁচে আছি, এই বা কম কিসের! আমার কলমের খোঁচায় স্বরূপ উন্মোচিত হওয়া এক যুদ্ধাপরাধীর ফাঁসির রায় হয়েছে। এটাও কি কম প্রাপ্তি ! প্রতি বছর ২০ এপ্রিল এলে নিজের শরীরে নিজে চিমটি কেটে পরখ করি, আসলেই তো বেঁচে আছি আমি ? এবার সেটাও হয়নি ! আমিই মনে রাখিনি আমাকে! আর কার দায় পড়েছে আমাকে মনে রাখার !

একাত্তরে বাবা, কাকা, দাদুসহ অনেক স্বজন হারিয়েছি। সেই সঙ্গে হয়েছি উদ্বাস্তু। একাত্তরের ঘাতকদের ইতিবৃত্ত লেখার দায়ে হারিয়েছি নিজের শরীরেরই অর্ধেক। তার পরও থেমে থাকে না জীবন। জীবন জীবিকার লড়াই চলে স্ত্রী অনিতা সিকদার, ছেলে সুপ্রিয় ও পুলক সিকদারকে সঙ্গে নিয়ে। সেই সঙ্গে চালিয়ে যাচ্ছি মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বাংলাদেশ গড়ার লড়াই। যে বাংলাদেশের জন্য বাবাকে বাবা ডাকতে পারিনি, সেই বাংলাদেশের 'মিনি পাকিস্তান' দশা মানি কি করে?

দোয়া চাই না, সাহস চাই। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বাংলাদেশ গড়েই পুরনো মৃত্যুকে আলিঙ্গন করতে চাই। পথে পথে দেখা হবে সবার সাথে। হাতে হাত রেখে চলবে লড়াইও।

পাঠকের মতামত:

২৭ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test