E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

আবার সেই গল্পকথা, ঠাকুরঘরে কে রে, আমি কলা খাই না !

২০১৬ এপ্রিল ১০ ১৫:৫২:২৩
আবার সেই গল্পকথা, ঠাকুরঘরে কে রে, আমি কলা খাই না !

প্রবীর সিকদার : ফরিদপুর থেকে প্রকাশিত 'ভোরের প্রত্যাশা' নামের একটি পত্রিকার সাম্প্রতিক একটি খবরের শিরোনাম 'ফরিদপুর শহরকে অশান্ত করার চেষ্টায় সক্রিয় কতিপয় গডফাদার! মিয়া পাড়া সড়ক এখন সন্ত্রাসীদের অভয়ারণ্য'। খবরটি পড়েই আমার আবার মনে পড়েছে সেই গল্পকথা, ঠাকুরঘরে কে রে, আমি কলা খাই না! ওই পত্রিকাটির মালিক ফরিদপুরে এই সময়ের প্রবল ক্ষমতাধর জনৈক বরকত ওরফে সাজ্জাদ হোসেন মণ্ডল। পত্রিকাটির সম্পাদক তারই ভাই ইমতিয়াজ হাসান রুবেল।

সম্প্রতি বরকত বিশাল ভুরিভোজের আয়োজন করে। ওই আয়োজনে দেশের এক প্রভাবশালীকে দাওয়াত করে খাইয়ে নিজে 'চৌধুরী বরকত ইবনে সালাম' নাম ধারণ করেন। ফরিদপুরে টেন্ডার বাণিজ্য, কমিশন বাণিজ্য, পরিবহন ব্যবসা, মাদক ব্যবসাসহ আরও কতো কিছুর যে নিয়ন্ত্রক তিনি তা বলে শেষ করা যাবে না! আর তার পত্রিকাতেই এমন খবর ছাপা হওয়ায় পাঠক মনে দারুণ কৌতূহল ও রহস্য দানা বেঁধেছে।

কেউ কেউ দাবি করে পুলক বোধ করেন, ফরিদপুর নাকি এখন সন্ত্রাসমুক্ত। অবশ্য নিন্দুকেরা কৌতুক করে বলেন, 'ফরিদপুরে এখন আমি ছাড়া আর কোনো সন্ত্রাসী নেই'। ফরিদপুর যে এখন বাস্তবে সন্ত্রাসের জনপদ তা সারাদেশে স্বীকৃত। হত্যার উদ্দেশ্যে ফরিদপুরে নৃশংস হামলার শিকার হয়েছেন আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার আসামি ও মুক্তিযুদ্ধের সাব সেক্টর কমান্ডার প্রবীণ আওয়ামীলীগ নেতা নূর মোহাম্মদ ক্যাপ্টেন বাবুল, ফরিদপুর জেলা হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অলক সেন, স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা শওকত আলি জাহিদ, বঙ্গবন্ধু ও আওয়ামীলীগের অন্ধ ভক্ত মজিবর রহমান মন্ডল ওরফে শেখ সাহেব, আওয়ামীলীগ নেতা এডভোকেট বদিউজ্জামান বাবুল প্রমুখ। গডফাদারদের অবাধ্য হওয়ার অপরাধে একের পর এক যখন এই সব নৃশংস হামলার ঘটনা ঘটে তা নিয়ে তো কোনো টু শব্দ করেনি এই 'ভোরের প্রত্যাশা'! এমনকি ছাত্রলীগ নেতা সত্যজিত পালিয়ে থাকায় তার বাবা বীর মুক্তিযোদ্ধা মানস মুখার্জিকে উপর্যুপরি মামলায় জেলে ঢোকানো এবং আওয়ামীলীগ নেতা মোকাররম মিয়া বাবুর মামলায় কেউ যেন তদবির করতে না পারে সেই লক্ষে বাবুর অসুস্থ স্ত্রীসহ আত্মীয় স্বজনদের বিরুদ্ধে মামলার পর মামলা দিয়ে অমানবিক হয়রানি করা হলেও পত্রিকাটি তখন প্রতিবাদ তো করেই নি, উল্টো তাদের ফাঁসাতে অপসাংবাদিকতা করেছে।

আওয়ামীলীগ নেতা এডভোকেট বদিউজ্জামান বাবুল সন্ত্রাসী হামলার শিকার হওয়ার পর যখন কয়েক সন্ত্রাসী আর গডফাদারের নাম মানুষের মুখে মুখে উচ্চারিত হতে থাকে তখনই টনক নড়ে অনেকের। বদিউজ্জামান বাবুল যেন কারো নাম উল্লেখ করে মামলা করতে না পারেন তার জন্য শক্ত অপকৌশল গ্রহণ করা হয়। এরই মধ্যে ফরিদপুরে শহরে খুবই রহস্যজনক কারণ ও কায়দার নৃশংসভাবে খুন করা হয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের দুই সুইপার ভরত ও মানিককে। তারপর থেকেই হাইব্রিড আওয়ামীলীগার বরকতের পত্রিকায় কল্পকাহিনী প্রচার করা হতে থাকে। ফরিদপুরকে অস্থিতিশীল করতে নাকি ১০ সাজানো মামলায় দীর্ঘদিন কারানির্যাতন ভোগকারী আওয়ামীলীগ নেতা মোকাররম মিয়া বাবু, এক ডজন মনগড়া মামলায় পালিয়ে বেড়ানো তুখোড় ছাত্রলীগ নেতা সত্যজিত মুখার্জি, জোর জবরদস্তির মুখে বিতাড়িত ফরিদপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি কবিরুল ইসলাম সিদ্দিকি ও তার ভাই একই কায়দায় বিতাড়িত ফরিদপুর জেলা বাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক কামরুল ইসলাম সিদ্দিকি নানা ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছেন।

গডফাদার বরকতের পত্রিকাটি নৃশংস নানা হামলার ঘটনায় নিশ্চুপ থাকে। কিন্তু আওয়ামীলীগ নেতা বাবুল হত্যা চেষ্টার ঘটনার পর হামলাকারীদের নাম প্রকাশ হতে থাকে, তখনই ঘটে দুই সুইপার খুনের ঘটনা। পত্রিকাটি তথা বরকত চক্র ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের নামে ওই চার জনের বিরুদ্ধে অপপ্রচার শুরু করে। আর এতেই ফরিদপুরের সাধারণ মানুষ বলতে শুরু করে সেই গল্পকথা, ঠাকুরঘরে কে রে, আমি কলা খাই না! কেননা পত্রিকাটির মালিক গডফাদার কাম মাদক ব্যবসায়ী কাম আওয়ামীলীগ-যুবলীগের হাইব্রিড নেতা বরকত খুব ভালো করেই জানেন, পাঁঠা সোহাগকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদের মাধ্যমে যথাযথ তদন্ত করা হলে কার কার নাম বেরিয়ে আসবে!

(ওএস/অ/এপ্রিল ১০, ২০১৬)

পাঠকের মতামত:

২৫ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test