E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

চুকনগরের এক এরশাদ ও এক সুন্দরীর গল্প

২০১৬ জুলাই ১২ ১১:১১:৩৮
চুকনগরের এক এরশাদ ও এক সুন্দরীর গল্প

প্রবীর সিকদার


২০ মে ১৯৭১। পাকিস্তানী সেনারা ওই দিন খুলনা জেলার ডুমুরিয়া থানার চুকনগরে কমপক্ষে ১০ হাজার বাঙালি নারী পুরুষ শিশুকে হত্যা করেছিল। হাজার হাজার বাঙালি, যার মধ্যে হিন্দুদের সংখ্যাই বেশি, জীবন বাঁচাতে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে চুকনগরে আশ্রয় নিয়েছিলেন, লক্ষ্য ছিল সীমান্ত পার হয়ে ভারতে যাবেন তারা । তাদের কপালে সেটা জোটেনি। চুকনগরের মাঠ, ঘাট, রাস্তায় সেদিন ছিল লাশ আর লাশ।

চুকনগরেরই এরশাদ আলী মোড়ল। সেদিন তার বয়স ছিল ২৩/২৪ বছর। ওই দিন চুকনগরে আশ্রিত মানুষগুলোর সাথেই প্রাণ দিয়েছিলেন এরশাদের কৃষক বাবা চিকন আলী মোড়ল। বাবার লাশ খুঁজতে খুঁজতে একটি ছোট্ট শিশুর কান্না এরশাদকে থামিয়ে দেয়। এরশাদ তাকিয়ে দেখে, ৬ মাস বয়সী রক্তমাখা একটি শিশু কন্যা তার মায়ের লাশ জড়িয়ে বুকের দুধ খুঁজছে। এরশাদ বাবার লাশ খোঁজা বন্ধ করে শিশুটিকে কোলে তুলে নেয়। এরশাদ লক্ষ্য করে যে, শিশুটি যে মহিলার বুকের দুধ খুঁজছিল, সেই মহিলার সিঁথিতে ছিল সিঁদুর আর হাতে ছিল শাঁখা। এরশাদ তখনই ভেবে ফেলে, শিশুটি হিন্দু। সে তখন শিশুটিকে কোলে করে একটু দূরে হিন্দু বাড়ি মন্দার দাসের বাড়িতে যায়। সন্ত্রস্ত মন্দার ও তার স্ত্রীর কোলে শিশুটিকে দিয়ে এরশাদ বলে, এই বাচ্চা মেয়েটি হিন্দু; আপনারা ওকে একটু রাখুন, আমি আমার বাবার লাশের দাফন করে এসে ওকে নিয়ে যাব।

বাবার লাশ দাফন করে এরশাদ মন্দার দাস পরিবারের কাছে শিশু কন্যাটিকে ফেরত চায়। মন্দার ও তার স্ত্রী এরশাদকে জড়িয়ে কেঁদে বলে, তারা আর ওকে ফেরত দিতে চাইছেন না। নিজেদের কোনো সন্তান না থাকায় তারা ওই শিশু কন্যাটিকে যুদ্ধের আশীর্বাদ হিসেবে লালন পালন করতে চান। কোনো দ্বিধা না করে হিন্দু মেয়েটির আশ্রয় হিসেবে হিন্দু পরিবার পেয়ে আনন্দে কেঁদে ওঠে এরশাদ। ওই হিন্দু দম্পতিও খুশি। এরশাদ আবার ওই শিশুটিকে কোলে নিয়ে তার নতুন মায়ের কোলে তুলে দিয়ে বলে, ওর মা বেশ সুন্দরী ছিল। আমরা সবাই ওকে 'সুন্দরী' বলেই ডাকবো।

মন্দার দম্পতির সন্তান হিসেবেই বড় হয় সেই সুন্দরী।

(পিএস/অ/জুলাই ১২, ২০১৬)

পাঠকের মতামত:

০৮ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test