E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আওয়ামীলীগের বিশাল অর্জন ম্লান করছে কারা?

২০১৬ ডিসেম্বর ০৫ ১৯:৩৮:১৭
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আওয়ামীলীগের বিশাল অর্জন ম্লান করছে কারা?

প্রবীর সিকদার


মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, দেশের কোটি কোটি মানুষের মতোই আমি গভীরভাবে বিশ্বাস করি, বঙ্গবন্ধুর সংগঠন আওয়ামীলীগ কোনো দেউলিয়া রাজনৈতিক সংগঠন নয়। জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে খুন করে যে আওয়ামীলীগের অস্তিত্ব ধ্বংস করা যায়নি, সেই আওয়ামীলীগ একটি জেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদের একজন প্রার্থীকে ভোটের আগেই ভোট ডাকাতি করে হারিয়ে দলের অস্তিত্ব রক্ষা করবে, সেটা বিশ্বাস করবার মতো আহাম্মক কিংবা চতুর আমি নই।

জেলা পরিষদ নির্বাচনে বহু জেলায় আওয়ামীলীগের বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছে। নিজের কপালের কাঁটা দাগ আর সেলাইয়ের চিহ্ন দেখিয়ে যে দলের নেত্রী নিঃসংকোচে বলেন, ওই ক্ষত চিহ্নের সাথে জড়িত ব্যক্তিকেও মন্ত্রীসভায় ঠাই দেওয়া হয়েছে, সেই দল জেলা পরিষদ নির্বাচনে একজন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর সাথে এমন অগণতান্ত্রিক নির্মম আচরণ করবে, এটা বিশ্বাস করবার মতো কোনো বাস্তবতাও নেই। আমি বিশ্বাস করি, দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে অতি উৎসাহী কিছু হাইব্রিড নেতার ইন্ধনে ওই জেলায় এমন কলঙ্কের দাগ পড়েছে আওয়ামীলীগের গায়ে। এর যথাযথ প্রতিকার না হলে ক্ষতিগ্রস্ত হবে আওয়ামীলীগের বঙ্গবন্ধু আদর্শের রাজনীতি।

হাঁ, আমি বঙ্গবন্ধুর জন্ম মাটি ফরিদপুর জেলার কথাই বলছি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী! আপনি জেনে কষ্ট পাবেন, পরিকল্পিত ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবেই বাতিল করা হয়েছে চেয়ারম্যান প্রার্থী এডভোকেট শামসুল হক ভোলা মাস্টারের দাখিল করা মনোনয়নপত্র। গত শনিবার ফরিদপুরে মনোনয়নপত্র বাছাইকালে তাঁর মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়। ফরিদপুর জেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামীলীগের বিদ্রোহী কিংবা মূলধারার প্রার্থী হয়েছিলেন বহুবার কারা নির্যাতন ভোগকারী এই আওয়ামীলীগ নেতা ও ফরিদপুর সদর উপজেলা পরিষদের জনপ্রিয় সাবেক চেয়ারম্যান এডভোকেট শামসুল হক ভোলা মাস্টার।

যদিও চেয়ারম্যান পদে আওয়ামীলীগের প্রার্থী লোকমান মৃধা। ফরিদপুর জেলা আওয়ামীলীগের রাজনীতিতে খুবই ত্যাগী কিন্তু বঞ্চিত মূলধারার নেতাদের সম্মিলিত সিদ্ধান্তেই চেয়ারম্যান পদে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন এডভোকেট শামসুল হক ভোলা মাস্টার, যিনি ওই পদে কেন্দ্রীয় আওয়ামীলীগের মনোনয়ন প্রার্থনাও করেছিলেন। মনোনয়নপত্র দাখিলের পর পরই খুবই নাটকীয় কায়দায় অপহরণ করা হয় ভোলা মাস্টারের মনোনয়নপত্রে সমর্থক হিসেবে স্বাক্ষর দানকারী ফরিদপুর সদর উপজেলার চর মাধবদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার মো. শওকত হোসেনকে। তারপর থেকেই নিখোঁজ শওকত হোসেন। আশঙ্কা করা হচ্ছিল, নির্মম নির্যাতনের মুখে শওকতের কাছ থেকে একটি লিখিত বিবৃতি আদায় করা হবে এবং ওই বিবৃতি ব্যবহার করা হবে ভোলা মাস্টারের দাখিল করা মনোনয়নপত্র বাতিলের কাজে। এই বিষয়টি আগেভাগেই আঁচ করতে পেরে গত শুক্রবার চেয়ারম্যান প্রার্থী এডভোকেট শামসুল হক ভোলা মাস্টার গিয়েছিলেন ফরিদপুরের কোতোয়ালি থানায় একটি জিডি এন্ট্রি করতে। থানা পুলিশ তার জিডি গ্রহণ করেনি। বিষয়টি সাথে সাথে ফরিদপুরের পুলিশ সুপারকে জানানোর পরও কোনো প্রতিকার পাননি শামসুল হক ভোলা মাস্টার।

অবশেষে যা হবার তাই হয়েছে। অপপ্রক্রিয়ার সেই আশঙ্কাকে সত্য প্রমাণিত করে ফরিদপুর জেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামীলীগের বিদ্রোহী কিংবা মূলধারার চেয়ারম্যান প্রার্থী এডভোকেট শামসুল হক ভোলা মাস্টারের মনোনয়নপত্র গত শনিবার বাতিল করা হয়েছে। ভোটের আগেই ভোট ডাকাতির এমন ঘটনা আওয়ামীলীগের অনেক নেতা কর্মী সমর্থককেই মর্মাহত করেছে, মর্মাহত করেছে আমাকেও। ফরিদপুর জেলা পরিষদ নির্বাচনে ভোলা মাস্টারের প্রার্থিতা বহাল থাকলে আওয়ামীলীগের কোনো ক্ষতি তো হতোই না, বরং কেন্দ্রীয় আওয়ামীলীগের কাছে চিহ্নিত হয়ে যেতো ফরিদপুরে আওয়ামীলীগের রাজনীতিতে আসল ক্ষতিকর কীট কারা!

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনি যখন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশ গড়তে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া শুরু ও শাস্তি নিশ্চিত করে দেশে বিদেশে প্রশংসিত হচ্ছেন, উন্নয়য়নের রোল মডেল হিসেবে বাংলাদেশকে মাথা তুলে দাঁড় করাচ্ছেন, তখন এই সব ছোট ছোট অপকর্ম করে আপনার ও আওয়ামীলীগের বিশাল অর্জন ম্লান করছে কারা? আমি বিশ্বাস করে স্বস্তি পেতে চাই, আপনার কঠোর নির্দেশে ফরিদপুরের এই কালো অধ্যায় ধুয়ে মুছে যাবে, যাবেই।

পাঠকের মতামত:

১৯ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test